ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ও হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলায় এক সম্ভাবনাময় তরুণীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার বিকেলে নাজমা আমিন নামে ওই তরুণীর মৃত্যু হয়। শরীরে জ্বর থাকায় চিকিৎসকরা বিদেশফেরত ওই তরুণীকে করোনা আক্রান্ত রোগী হিসেবে সন্দেহ করে তার চিকিৎসায় এগিয়ে যাননি। পরিবারের দাবি, করোনাভাইরাস আতঙ্ক আর অবহেলার কারণে ওই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে।
২৪ বছর বয়সী নাজমা আমিন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব রেজিনের স্নাতকের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত ৯ মার্চ ঢাকায় ফিরে তিনি পেটেব্যথার কথা জানান। পরিবারের সদস্যরা জানান, নাজমা খেতে পারছিলেন না। প্রতিবার খাওয়ার সময় তার বমি ভাব এবং পেটে ভীষণ ব্যথা অনুভূত হতো। গত ১৩ মার্চ রাতে অসহনীয় ব্যথা হওয়ায় তাকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। নাজমার বাবা আমিন উল্লাহ জানান, ওই হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসকরা আইসিইউ সাপোর্টের কথা বলেছিলেন। কিন্তু অনেক রাত হওয়ায় কোনো হাসপাতালেই আইসিইউ পাওয়া যায়নি। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি ওয়ার্ডে রেখে স্যালাইন, অক্সিজেন ও ওষুধ দেওয়া হলে নাজমা কিছুটা সুস্থ অনুভব করেন।
আমিন উল্লাহ আরও বলেন, সকাল ৮টায় নার্সদের শিফট বদল হয়। সকাল সাড়ে ১১টায় নতুন নার্সদের একজন নাজমার সমস্যার কথা জানতে চান। তখন আমিন উল্লাহ বলেন, তার মেয়ে সম্প্রতি কানাডা থেকে এসেছে। এটি বলার পরপরই ওই নার্স করোনাভাইরাস বলে চিৎকার করতে থাকেন। নার্স হাসপাতালের সবাইকে নাজমা করোনা আক্রান্ত বলে জানান। এতে করে ওয়ার্ডজুড়ে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর নাজমার কাছে আর কেউই আসেনি। সব ডাক্তার ও নার্স ওয়ার্ড ছেড়ে চলে যান।
এভাবে চিকিৎসা না পেয়ে নাজমার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি তাদের নেই। পরীক্ষার সরঞ্জাম ও চিকিৎসাকর্মীদের প্রতিরোধমূলক কোনো ব্যবস্থাও নেই। এ কারণে চিকিৎসক ও নার্সরা রোগীর কাছে যেতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছিলেন।
নাজমার তত্ত্বাবধানে থাকা হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এবিএম জামাল বলেন, সম্প্রতি কানাডা থেকে এসেছে, এটি জানার পরই ওয়ার্ডে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। চিকিৎসক ও নার্স সবাই ভয় পেয়েছিলেন। তবে সেটি খুব দ্রুতই আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন জানান, করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে যেতে যে ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন, তা হাসপাতালে নেই। এ কারণে ওই রোগীর সংস্পর্শে যেতে তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন। পরে আইইডিসিআরে ফোন করে প্রতিনিধি দলকে আসতে বলা হয়। তারা দ্রুত এসে নমুনা সংগ্রহ করে। সেটি পরীক্ষার পর জানা যায়, নাজমা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন।
তবে দীর্ঘ সময়ে কোনো প্রকার নজরদারি না করার ফলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে একজন চিকিৎসক গ্লাভস ও মাস্ক পরে নাজমার কাছে যান। অ্যান্টিবায়োটিক শরীরে পুশ করার কিছুক্ষণ পরই নাজমা মারা যান।
ডা. এবিএম জামাল বলেন, নাজমা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। আমরা ধারণা করছি, তার অন্ত্রে ছিদ্র ছিল। তাকে যখন ভর্তি করা হয়েছিল, তখন তার শরীর থেকে প্রচুর তরল বেরিয়ে গেছে।