মানবজমিনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার দাবি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের

Slider জাতীয় বাংলার মুখোমুখি


দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, রিপোর্টার আল আমিন ও অন্য ৩০ জনের বিরুদ্ধে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে করা মামলা প্রত্যাহার দাবি করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। একই সঙ্গে নিখোঁজ সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে জরুরিভিত্তিতে খুঁজে বের করার জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা। এ বিষয়ে নিউ ইয়র্ক থেকে নিজস্ব ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এতে বলা হয়, গত ১০ই মার্চ থেকে নিখোঁজ রয়েছেন সাংবাদিক কাজল। এর আগের দিন বাংলাদেশের সুপরিচিত সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী সহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে ওই মামলা হয়। এতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, মতিউর রহমান চৌধুরী সম্পাদিত দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় ২রা মার্চ একটি রিপোর্ট প্রকাশ হয়। পরে মতিউর রহমান চৌধুরী, রিপোর্টার আল আমিন ও শফিকুল ইসলাম কাজলসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেন জাতীয় সংসদের মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। যদিও পত্রিকাটি তার প্রতিবেদনে কারো নাম প্রকাশ করেনি, তবুও কিছু মানুষ যাচাই করা হয়নি এমন একটি তালিকা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়, তাতে রয়েছে এমপি শিখরের নাম।

শিখর দাবি করেছেন, এসবের সঙ্গে জড়িত মামলায় উল্লিখিত কিছু মানুষ।
এ বিষয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস বলেছেন, শফিকুল ইসলাম কাজলের বিষয়টি গভীর উদ্বেগের। বিশেষ করে বাংলাদেশে যখন কর্তৃপক্ষের রয়েছে মানুষকে অপহরণ করা এবং তাদেরকে গোপন বন্দিশালায় আটকে রাখার রেকর্ড, যেখানে তাদের নিরাপত্তা ও জীবন ঝুঁকিতে। তাই বাংলাদেশ সরকারের উচিত অবিলম্বে কাজল কোথায় আছেন তা শনাক্ত করতে পদক্ষেপ নেয়া এবং তার নিরাপত্তা দেয়া।

কাজলের পরিবারের সন্দেহ তাকে অপহরণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তার নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। ১৩ই মার্চ সংবাদ সম্মেলনে কাজলের ছেলে বলেছেন, ১০ই মার্চ দু’টি ফোনসহ তার পিতা বিকাল ৩টার দিকে নিজের মোটরসাইকেলে করে ঢাকার বাসা থেকে বেরিয়ে যান। কিন্তু আর বাসায় ফিরে আসেননি। এমন অবস্থায় তিনি রাত ১০টার দিকে তাকে ফোন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার দু’টি ফোনই বন্ধ পাওয়া যায়। তার মোটরসাইকেলটিও উদ্ধার করা যায়নি। তিনি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, আমরা মনে করি না যে, আমার পিতা নিজের ইচ্ছায় নিখোঁজ হয়ে আছেন। আমাদের সন্দেহ তাকে অপহরণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, তার পরিবার কাজলের সন্ধানে হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগগুলোতে অনুসন্ধান চালিয়েছে। পরে তাকে না পেয়ে ১১ই মার্চ চকবাজার থানায় একটি নিখোঁজ মামলা করেছেন। মামলার কারণে কাজলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা এটা জানতে তার পরিবারের সদস্যরা পুলিশের ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু অফিসাররা জানিয়ে দিয়েছেন, মামলায় উল্লিখিত ৩২ জনের কাউকেই তারা গ্রেপ্তার করেননি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরো লিখেছে, খেয়াল-খুশিমতো আটক ও জোরপূর্বক গুমের ইতিহাস আছে বাংলাদেশের। কিছু মানুষকে পরে মুক্তি দেয়া হলেও, কিছু মানুষকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়া হলেও, অনেক ক্ষেত্রেই কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা বলে থাকেন, নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বা ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অধিকার-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, গত এক দশকে কমপক্ষে ৫৫০ জন মানুষকে জোরপূর্বক গুম করে দিয়েছে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়ার কারণে নিহত এসব মানুষের অনেককে টার্গেট করা হয়েছিল। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরো লিখেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে, নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা বিভিন্ন ব্যক্তিকে অদৃশ্য করে দিয়েছেন। দৃশ্যত এটা করা হয়েছে ক্ষমতাসীন অভিজাত সদস্যদের ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নেয়ার ফল হিসেবেই। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীনে জোরপূর্বক গুম নিষিদ্ধ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অস্পষ্ট ও ব্যাপক বিস্তৃত অংশবিশেষকে, যা নির্যাতনে সুবিধা করে দেয়, তা বাতিল করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বার বার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ। মানহানির বিষয়টিকে সিভিল ম্যাটার হিসেবে দেখার দাবি জোরালো হয়েছে। এটা কোনো ফৌজদারি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হতে পারে না। ব্রাড এডামস বলেন, ফেসবুকে কিছু শেয়ার করার কারণে অপহরণের আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করা উচিত নয় বাংলাদেশিদের। নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা তুলে নিয়ে গেছে এবং তারপর নিকটজনরা জানেন না ভিকটিম কোথায় আছেন- এমন অভিযোগ করছেন অনেক পরিবারের সদস্যরা। এসব অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা উচিত বাংলাদেশ সরকারের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *