ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে বিনিয়োগ করতে ই-টিআইএন (ইলেকট্রনিক ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) প্রয়োজন হবে। আগামী ১৭ মার্চ থেকে এটা কার্যকর হবে। তবে ই-টিআইএন সনদ ছাড়াই এক লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৯ টাকা পর্যন্ত নগদ টাকা সঞ্চয় ব্যাংকে রাখা যাবে। দুই লাখ টাকার বেশি হলে অবশ্যই ব্যাংক চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করার পাশাপশি ই-টিআইএন সনদ জমা দিতে হবে। দিতে হবে সঞ্চয়কারীর ব্যাংক হিসাব নম্বর ও মোবাইল নম্বর। অন্য দিকে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের কোনো স্কিমে অর্থ বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীরা আগের মতো মেয়াদ শেষে বর্ধিত সুদে মুনাফা তুলতে পারবেন।
কালো টাকা এবং অতিরিক্ত বিনিয়োগ বন্ধে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে অনলাইন (অটোমেশন) পদ্ধতি চালু হয়েছে। এই পদ্ধতির কারণে স্কিমে এ সব পরিবর্তন আসবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের নতুন মডিউল উদ্বোধন করেন তিনি।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো: রহমাতুল মুনিম, অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের মহাপরিচালক সামছুন্নাহার বেগম এবং ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্র উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হলেও ইন্টারনাল কিছু কাজ বাকি থাকায় এর কার্যক্রম আগামী ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশের প্রধান ডাকঘরগুলোতে শুরু হবে। এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী ১৭ মার্চ থেকেই ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে আগের সুদহার বহাল করা হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে সুদহার প্রায় অর্ধেক হ্রাস করে একটি পরিপত্র জারি করে। ওই পরিপত্র অনুযায়ী সুদের হার কমেছে ডাকঘরের সঞ্চয় স্কিমের মেয়াদি হিসাব ও সাধারণ হিসাবে। সাধারণ হিসাবের ক্ষেত্রে সুদের হার সাড়ে সাত শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে। আর তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে সুদের হার ছয় শতাংশ, যা এতদিন ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ ছিল। মেয়াদপূর্তির আগে ভাঙানোর ক্ষেত্রে এক বছরের জন্য সুদ পাঁচ শতাংশ, আগে যা ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। দুই বছরের ক্ষেত্রে তা সাড়ে পাঁচ শতাংশ, আগে যা ছিল ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ।
ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে সুদহার অর্ধেক করায় সংসদের ভেতরে ও বাইরে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। সমালোচনার মুখে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে সুদ হারের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার আশ্বাস দেন অর্থমন্ত্রী। সেই আশ্বাসের ভিত্তিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৭ মার্চের মধ্যে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে সুদের হার আগের মতো ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ হবে। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, যাদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য আমরা এ স্কিমটি চালু করেছি, তাদের মধ্যেই এটা সীমাবদ্ধ রাখতে চাই। কিন্তু আমরা কোনোভাবেই কারো স্বার্থে হাত দেইনি। ব্যবসায়ীরা এসে ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কিনুক এটা আমরা চাই না। আমি আশা করি আগামী ১৭ মার্চ ডাকঘর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে সঞ্চয় স্কিমে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবো। সেদিন আমরা অনলাইনে এ কার্যক্রম পূর্ণমাত্রায় শুরু করতে পারব।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ডিমান্ড ডিপোজিট ৭ দশমিক ৫ এবং ফিক্সড টাইমে ১১ পয়েন্ট ২৮, যা আগের রেইট তাই থাকছে। যে আয়টা করবে এখান থেকে তা ট্যাক্স ফ্রি না, আয়কর দিতে হবে এ জন্য টিন নম্বর ও ন্যাশনাল আইডি নিচ্ছি। এনআইডি নিচ্ছি তাদের চিহ্নিত করার জন্য, কত টাকা করল অতিরিক্ত করল কি না। দেশের যেকোনো জায়গায় করলে লিমিট ক্রস করতে পারবে না এবং ট্যাক্সের আওতায় আসবে। সরকার রাজস্ব আয় করবে।
তিনি বলেন, আমরা যেটা যখন করব সেটা চিন্তাভাবনা করেই করব। যে কাজই করি না কেন সেটার যেন কোনো মিসইউজ না হয়। মিসইউজগুলো বন্ধ করার জন্যই আমাদের এ ব্যবস্থাটি গ্রহণ করা হয়েছে। কারো ইন্টারেস্টে হাত দেয়া হয়নি। সুবিধা যা ছিল তাই থাকবে; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাবে যে, সুবিধার পরিমাণ আরো বাড়ানো হয়েছে। লিমিট কিছুটা বাড়িয়ে দিয়ে সে সুবিধা আমরা করে দিয়েছি। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে এলেই তার পরিচয় থেকেই সব তথ্য নিয়ে মুহূর্তেই হিসাব খোলা যাবে। পরিচয়পত্রধারী ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারবে। একজন এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন।
এ ক্ষেত্রে ই-টিআইএন সনদও জমা দিতে হবে। তবে ই-টিআইএন সনদ ছাড়াই এক লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৯ টাকা পর্যন্ত নগদ টাকা সঞ্চয় ব্যাংকে রাখা যাবে। দুই লাখ টাকার বেশি হলে অবশ্যই ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করার পাশাপাশি ই-টিআইএন সনদ জমা দিতে হবে। দিতে হবে সঞ্চয়কারীর ব্যাংক হিসাব নম্বর ও মোবাইল নম্বর। টাকার মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে পারে এ বিষয়ে কোনো চিন্তাভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগাযোগ করতে হবে, তারা স্বাধীন সত্তা। অপেক্ষা করুন সব ক্যাশলেস করে ফেলব।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, দু’টি কারণে এটি স্মরণীয় মুহূর্ত। বলা হচ্ছিল ডাক বিভাগ এখন কাফনের কাপড় পরে কবরে যাওয়ার জন্য তৈরি এবং উত্থানের আর সুযোগ নেই। কিন্তু আজ এ ঘটনা ভিন্ন চিন্তা তৈরি করেছে। ডাক বিভাগ ডিজিটালে রূপান্তরিত হচ্ছে।
ডাক বিভাগকে ডিজিটাল কমার্স হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে জানিয়ে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ডাক বিভাগের মানবসম্পদের মধ্যে ৪৩ হাজারকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তৈরি করা হবে। ডাক বিভাগের তৃণমূল পর্যন্ত নেটওয়ার্ক রয়েছে, যা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের নিয়ে ডাক বিভাগ থাকতে চায়।