ডেস্ক: বাংলাদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কিছু কিছু ক্ষেত্রে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবাধিকার বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে। বুধবার প্রকাশিত ‘২০১৯ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে স্বেচ্ছাচারী গ্রেপ্তার ও আটক বিষয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী স্বেচ্ছাচারী গ্রেপ্তার ও আটক নিষিদ্ধ। তবে ১৯৭৪ সালে প্রণীত বিশেষ ক্ষমতা আইনে কর্তৃপক্ষ চাইলে কোনো ধরণের ওয়ারেন্ট বা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে পাওয়া আদেশ ছাড়াই গ্রেপ্তার বা আটক করতে পারে। তবে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এই আইন ব্যাবহার করে ব্যাপকহারে তাদের গ্রেপ্তারকে বৈধ বলে উপস্থাপন করে। সংবিধান অনুযায়ী গ্রেপ্তার বা আটকের পর এর বিরুদ্ধে আদালতে চ্যালেঞ্জ করার অধিকার রয়েছে সকল নাগরিকের। কিন্তু সরকার এটি প্রায়শই উপেক্ষা করে। গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো সরকারের বিরুদ্ধে বলপূর্বক গুমের অভিযোগ এনেছে। শুধুমাত্র সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীরাই নয়, সুশীল সমাজের সদস্য ও বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরাও গুমের শিকার হোন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- কর্তৃপক্ষ প্রায়ই আটকদের বিষয়ে কোনো তথ্য তার পরিবার বা আইনজীবীর কাছে প্রদান করেন না। কখনো কখনো তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টিও জানানো হয় না।
গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া ও আটকদের প্রতি আচরণ: সংবিধান অনুযায়ী, আটকদের অবশ্যই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে।
কিন্তু প্রায়ই এই বিধি মেনে চলা হয় না। সরকার ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চাইলে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি এমন কাউকে ৩০ দিন আটক রাখতে পারেন। তবে কর্তৃপক্ষ মাঝেমধ্যে এর থেকেও বেশি সময় আটকে রাখে। মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায়ই রাজনৈতিক সমাবেশ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ভিত্তিতে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে স্বেচ্ছাচারী গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে। সরকার আটক হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই আটকে রাখে। কখনো শুধুমাত্র অন্য সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহের কারণে তাদের আটকে রাখা হয়। মানবাধিকার কর্মীরা দাবি করেন যে, পুলিশ মিথ্যা মামলা দায়ের করে বিরোধী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করে সরকার। ২০১৮ সালে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কমপক্ষে ১০০ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছিল যারা শান্তিপূর্নভাবে কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করেছিল।
ন্যায্য বিচার না পাওয়া: বাংলাদেশের আইন একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার কথা বলে। কিন্তু দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এর স্বাধীনতা ব্যহত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট, অ্যাটর্নি ও আদালতের কর্মকর্তারা আসামির কাছ থেকে ঘুষ দাবি করে। আবার রাজনৈতিক প্রভাবে রায় পরিবর্তিত হয়ে যায়।
সংবিধানে সুষ্ঠু ও প্রকাশ্য বিচার নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিচারবিভাগ দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্বের কারণে সব সময় এই অধিকার রক্ষা করতে পারে না। বিচার প্রক্রিয়া বাংলা ভাষায় চলে। যারা বাংলা বুঝে না বা কথা বলতে পারে না তাদের জন্য সরকার বিনামূল্যে অনুবাদক প্রদান করে না। ভ্রাম্যমান আদালতে ম্যাজিস্ট্রেট প্রায়ই তাৎক্ষনিক রায় প্রদান করে থাকেন। এতে অনেক সময় আইনি কোনো সুযোগ দেয়া ছাড়াই অভিযুক্তদের কারাদ- প্রদান করা হয়।