সিলেট: স্বাভাবিকভাবে হেঁটে এলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচের সংবাদ সম্মেলন। ম্যাচ নিয়ে কোনো কথা বলার আগে বললেন ‘ধন্যবাদ সবাইকে, আমি কিছু বলতে চাই।’ মুহূর্তেই বদলে গেল দৃশ্যপট। ধীরে ধীরে তিনি বলতে শুরু করলেন, ‘শুক্রবার অধিনায়ক হিসেবে আমার শেষ ম্যাচ। আমার প্রতি দীর্ঘ সময় আস্থা রাখার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাই। আমার নেতৃত্বে যত ক্রিকেটার খেলেছে বাংলাদেশ দলে, সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আমি নিশ্চিত, এই প্রক্রিয়াটা সহজ ছিল না, গত ৪-৫ বছরের ভ্রমণ সহজ ছিল না।’
সত্যিই সহজ ছিল না অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির দ্বিতীয় যাত্রা। সবচেয়ে খারাপ সময়ে দলের নেতৃত্ব তুলে নিয়েছিলেন, এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই।
এরপর টাইগারদের ওয়ানডে ক্রিকেটকে বদলে দিয়েছেন। বিশ্বের কোনো দল এখন বাংলাদেশকে হেসে খেলে হারানোর চিন্তা করতে পারে না। হোক দেশে কিংবা বিদেশে। সেই অধিনায়কত্বের সূর্য আজ অস্ত যাবে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। নয়া অধিনায়ককে শুভ কামনা জানিয়ে বিদায় নিলেন মাশরাফি।
গত কয়েকদিন ধরেই মাশরাফির অবসর নিয়ে গুঞ্জন চলছে। তবে অনেকটা নিশ্চিত ছিল অবসরে না গেলেও নেতৃত্বকে বিদায় বলবেন। হলোও তাই। সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের হারজিত যতটা না ছিল আলোচনায়, তার চেয়ে বেশি আলোচনায় ছিলেন মাশরাফি। শেষ পর্যন্ত এই সিরিজটি বিশেষ স্মরণীয় হয়ে থাকবে টাইগার অধিনায়কের বিদায়ের কারণে। ২০১০-এ তিনি নেতৃত্ব পেয়েছিলেন। কিন্তু ৭ ম্যাচই দলকে নেতৃত্ব দিতে পেরেছিলেন সেবার। ইনজুরি তাকে ছিটকে দেয় মাঠের বাইরে। এরপর ২০১৩ থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটে বিপর্যয়। হারতে হারতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা। তখন জিম্বাবুয়ে সফরে ফের মাশরাফির ওপর আস্থা রাখে বিসিবি। এরপর ৮০ ম্যাচে দলকে এনে দিয়েছেন ৪৯ জয়। আজ শেষ ম্যাচে জিতলে অধিনায়ক হিসেবে ৫০ তম ওয়ানডে জয়ের মাইলফলক স্পর্শ করবেন মাশরাফি। সঙ্গে আরো একটি সিরিজ হোয়াইটওয়াশের অর্জন যোগ হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। এ ম্যাচ নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘যখন আমরা মাঠে নামি, জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবি না। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য জয়। ক্রিকেটে অনেক কিছু হয়। তবে আমরা আমাদের কাজটাই করতে চাই।’ দেশের হয়ে প্রতিটি হারকেই নিজের জীবনে খারাপ ও কঠিন সময় মনে করেন দেশসেরা এই অধিনায়ক।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে কয়েকটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। অধিনায়ক হিসেবে নিজের শেষ ম্যাচে মাশরাফি পাচ্ছেন না দলের ব্যাটিং ভরসা মুশফিকুর রহীমকে। তার পরিবর্তে আসবে নতুন মুখ। অভিষেক প্রায় নিশ্চিত আফিফ হোসেন ও নাঈম শেখের। তৃতীয় ওয়ানডেতে ডাক পাওয়া সৌম্য সরকারকেও রাখা হতে পারে একাদশে। বাবার অসুস্থতার জন্য ঢাকায় ফিরেছেন পেসার শফিউল ইসলাম। তাই পেস আক্রমণে পেসার মাশরাফির সঙ্গী হবেন মোস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। দ্বিতীয় ম্যাচে সুযোগ পেয়ে ব্যর্থ হন আরেক পেসার আল আমিন হোসেন। তবে সাইফুদ্দিন বা মোস্তাফিজের কোনো একজনকে বিশ্রাম দিতে চাইলে হয়তো আরো একবার সুযোগ পাবেন আল আমিন। এমন এক ম্যাচে নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি। দলের প্রতিটি সদস্যই আবেগাপ্লুত। সবার এক কথা মাশরাফিকে তারা জয় উপহার দিতে চান।
অন্যদিকে বিদায় ঘোষণার সময় মাশরাফি বলেন, ‘ধন্যবাদ জানাই টিম ম্যানেজমেন্ট যারা ছিলেন, যাদের কোচিংয়ে খেলেছি ও অধিনায়কত্ব করেছি। তারা সবাই আমাকে ঘনিষ্ঠভাবে অনেক সহযোগিতা করেছেন। যতটুকু মনে হয়, চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সময় আমার অধিনায়কত্ব শুরু হয়েছিল। এর আগে কিছুটা করেছি, কিন্তু সময় পাইনি ইনজুরির কারণে। হাথুরুসিংহে, খালেদ মাহমুদ, স্টিভ রোডস ও এখন রাসেল ডমিঙ্গোকে দিয়ে শেষ হচ্ছে। সবাইকে ধন্যবাদ। নির্বাচক ও বোর্ডের কর্মকর্তা যারা আছেন, বোর্ডের প্রতিটি স্টাফ থেকে শুরু করে বোর্ডের সবাইকে ধন্যবাদ সহযোগিতার জন্য। মিডিয়ার যারা আছেন, সবাই অত্যন্ত সহযোগিতা করেছেন, আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। সবশেষে সমর্থকরা, যারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রাণ, আপনাদের সমর্থন ছাড়া অবশ্যই সম্ভব হতো না। সবাইকে ধন্যবাদ।’
পরবর্তী অধিনায়ককে শুভ কামনা জানিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘শুভকামনা থাকবে পরবর্তী অধিনায়কের জন্য। আমার বিশ্বাস, তিনি বাংলাদেশ দলকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবেন ইনশা আল্লাহ। আমি যদি দলে থাকি, আমিও চেষ্টা করবো আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, ভেতরে যতটুকু আছে, তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার। ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে।