শ্লীলতাহানির মামলায় ডিএমপি’র দুই ওসি আসামি

Slider জাতীয় নারী ও শিশু


ঢাকা:ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাজহারুল ইসলামসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক নারী। গতকাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক জয়শ্রী সামদারের আদালতে তিনি এ মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া জমিজমা নিয়ে সৎ মা ও সৎ ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধের জেরে শারীরিকভাবে হেনস্থা, শ্লীলতাহানির অভিযোগে দক্ষিণখান থানার ওসিসহ ১০ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী নারী। একইসঙ্গে তার সৎ মাকেও আসামি করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্র্যাইব্যুনাল-৫ এর বিচারক সামসুন্নাহারের আদালতে মামলার আবেদন করেন ৪৩ বছর বয়সী ওই নারী। বিচারক বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

যাত্রাবাড়উর ঘটনায় ওসি মাজাহারুল ইসলাম ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন, মো. সোহেল, মো. মিরাজ আলী, মো. জিহাদ এবং ওসমান আলী (এসআই)। মামলার অভিযোগে বাদী বলেন, গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টায় আসামি সোহেল ও মিরাজ বাদীর স্বামীকে খুঁজতে তার বাসায় আসে।

স্বামীকে না পেয়ে তারা তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় তিনি আত্মরক্ষার জন্য চিৎকার করলে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে যান। এরপর আসামিরা চলে যায়। যাওয়ার সময় সিঁড়িতে তার স্বামীকে দেখামাত্র সোহেল, মিরাজ ও জিহাদ মারধর করে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। আর তাকে ও তার সন্তানদের বাসায় আটকে রাখে। পরদিন সকালে আসামিরা তাকে বলে তার স্বামী অজ্ঞাত স্থানে আছেন। সেখান থেকে যেন তার স্বামীকে নিয়ে আসেন। আসামিদের কথা অনুযায়ী তিনি তার স্বামীকে নিয়ে আসেন। বাসায় এসে দেখেন তার সন্তানদেরও আটক করে রেখেছে আসামিরা। পরে যাত্রাবাড়উ থানার পুলিশ এসে তার সন্তানদের উদ্ধার করে।

অভিযোগে বাদী আরো বলেন, এ ঘটনায় তিনি থানায় গিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলে ওসি ও এসআই তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন। তাদের কথা অনুযায়ী তিনি ৫ হাজার টাকা দেন। এরপর থানা থেকে তাকে বলা হয় বাকি ৯৫ হাজার টাকা দিলে মামলা নেয়া হবে। তিনি আর টাকা দিতে পারবেন না বলে জানালে থানা আর মামলা নেয়নি। সেজন্য তিনি বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করেছেন।

এদিকে দক্ষিণখানের ঘটনায় দক্ষিণখান থানার ওসি শিকদার মো. শামীম হোসেন ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন, এসআই আবদুল কাদির, আরিফ হোসেন, এএসআই মো. আব্দুর রুপ নুরুল ইসলাম, কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম, জয়েন উদ্দিন, মো. তৌফিক, রুনা আক্তার ও ইয়াসমিন আক্তার এবং বাদীর সৎ মা মার্জিয়া আক্তার পুতুল। মামলার অভিযোগে বাদী বলেন, তার সঙ্গে সৎ ভাই ইকবাল হোসেন সজলের জমি-জমা নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা চলছে। সম্প্রতি আদালত মার্জিয়া আক্তারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। এটি জানতে পেরে তাকে ও তার পরিবারকে উচ্ছেদের জন্য ফ্ল্যাটে ছুটে যান সৎ মা মার্জিয়া আক্তার। ওসি শিকদার মো. শামীম হোসেন মামলা সম্পর্কে অবগত থাকার পরও তার বাসার দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করেন এবং শারীরিকভাবে হেনস্থা করেন। বাদী অভিযোগে আরও বলেন, এসআই আবদুল কাদির তাকে নির্যাতন করেছেন। ওসি শিকদার মো. শামীম সেখানে উপস্থিত এক সাক্ষীর শ্লীলতাহানি করেছেন। তিনি এবং তার সাক্ষীকে তখন বের হয়ে যেতে বলেন ওসি। বের না হলে তাদেরকে ধর্ষণের হুমকি দেন। এসময় তার ১১ বছরের মেয়ে চিৎকার করলে ওসি তিন নম্বর স্বাক্ষীকে মারধর করে রক্তাক্ত করেন। বাদীর স্বামী ও দুই নম্বর সাক্ষীর মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতে থাকাবস্থায় ওসির নির্দেশে অপর পুলিশ সদস্য তাদের মোবাইল কেড়ে নেন এবং তাদেরকে মারধর করেন। পরে পুলিশ তাদের ভ্যানে উঠিয়ে তাদের দিকে বন্দুক তাক করে রাখে। এসময় সকল আসামিরা দুই সাক্ষীকে বিবস্ত্র অবস্থায় টানাহেঁচড়া করে বাসার নিচতলায় নামিয়ে মেইন গেটে তালা দিয়ে বাদী ও সাক্ষীদের বাসা থেকে উচ্ছেদ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *