মুজিববর্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর প্রতিহত করার ঘোষণায় সরকার মোটেও বিব্রত নয় বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সোমবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ে নিজ দফতরেরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শ্রী হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের মতবিনিময় শেষে এক সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা মোটেই বিব্রত নই। আমরা মনে করি যারা এটা করছেন তাদের করাটা উচিত হচ্ছে না। মুজিববর্ষকে সামনে রেখে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানো উচিত। অবশ্যই এটা একটা হাইয়েষ্ট লেবেলের একটা সফর ও অনুষ্ঠান। নিরাপত্তার বিষয়টাতো সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
মোদির সফর যারা প্রতিহত করার ঘোষণা দিচ্ছে তাদের বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে কাদের বলেন, তাদের সাথে কোন প্রকার সংঘাত সংকুলের কারণ হয়নি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মতের লোকজন তাদের রিঅ্যাকশন প্রকাশ করছে। এখানে রিলিজিয়াসলি বিষয়টি অনেকে দেখছে। কাজেই এটা সব সময় ছিল আজও আছে ভবিষ্যতেও থাকবে। কাজেই সম্পর্কের মধ্যই এগিয়ে যাবে।
নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে তাদের কোন পরামর্শ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ নিয়ে তারা কিছু বলেনি। তারা মনে করেন যে এই সফর ভলো সফর হবে। বাংলাদেশের জনগণ ৭১ এর বন্ধনকে স্মরণ করে ভালোভাবে নেবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মুলত আসছেন মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। কাজেই অতিথির সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ ভালো ব্যবহার করবে এটাই তারা প্রত্যাশা করে।
ভারতে যে রাজনৈতিকসহিংসতা চলছে এটা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক অবস্থান কি এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, আমি ইতোমধ্যেই বলেছি, আমাদের প্রতিবেশির ঘরে আগুণ লাগলে পাশের ঘরে তার আঁচ অবশ্যই যায়। এ কথাতো আমি আরো আগেই বলেছি। আমাদের এখানে উদ্বেগ ছিল এবং এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া ছিল। কিন্তু আমরা একটা বিষয়ে আনন্দিত ওখানে বিষয়টাকে একেবারে কমিউনালি দেখননি মানুষ। সেখানে মুসলমানরা যখন বিপদে পড়েছে আরেক হিন্দু মুসলমানদের রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছে। জুম্মার নামাজের দিন হিন্দুরা পাহাড়া দিয়েছে ও মসজিদ পর্যন্ত রক্ষা করার জন্য এগিয়ে এসেছে। এটা কিন্তু পিপল টু পিপল কন্টাক্টের ভালো দিক।
সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচার নিয়ে সাধারণ সম্পাদক বলেন, মিডিয়ার সমালোচনা মিডিয়া করবেই। ফেইসবুকসহ সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারনায় তো মাঝে মাঝে এমন ইস্যু আসে যা প্রচার না ঠিক অপপ্রচার। ফেইসবুকে ভালো প্রচারও আছে খারাপ প্রচারও আছে। আমারতো মনে হয় ভালো প্রচারই বেশি।
এনআরসি সমস্যা সমাধানের কোন আশ্বাস পাওয়া গেল কিনা জানতে চাইলে কাদের বলেন, আসার আগেই সমাধানের আশ্বাস এটাতো ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ইতোমধ্যেই কিছু বলেছেন। তিনিতো কিছু বাদ রাখেননি, সব কথাই বলেছেন। তিনি (নরেন্দ্র মোদি) আসছেন একটা উপলক্ষ্য নিয়ে সেটা হলো মুজিব বর্ষ। আমাদের সম্মানিত অতিথি হিসেবে আমাদের ১৯৭১সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান মিত্র ভারতে প্রতিনিধী হিসেবে তিনি ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্বোধনে যোগ দিচ্ছে। একই সঙ্গে ১৮ তারিখ বাইলেটারাল বৈঠক আছে। সেখানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী টু প্রধানমন্ত্রী আলোচনা হওয়ার সুযোগ আছে। ঐ পর্যায়ে যে আলোচনা হবে সেটা এখন আর করার প্রয়োজন নেই। আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, পররাষ্ট্র সচিবতো অনেক দিন আমাদের এখানে হাই কমিশনার ছিলেন। তখন আমাদের রোড়স এন্ড ব্রিজেসের বিভিন্ন প্রকল্প আছে ভারতের। সেগুলো নিয়ে প্রায় আমাদের দেখা সাক্ষাৎ হতো। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে আমার একটা ভালো সম্পর্ক রয়েছে। যে কারণে তিনি এই সংক্ষিপ্ত সফরেও আমার সাথে তার সাক্ষাতের একটি কর্মসূচি রাষ্ট্রদূতকে বলেছেন রাখতে।
তিনি বলেন, সমস্যা নিয়েতো উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হবেই দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে। কাজেই আলোচনাটা কি হবে আমি এ মুহুর্তেতো বলতে পারবো না। তবে আমাদের যে সম্পর্ক এই সম্পর্ক আরো থাকবে। সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে। আমাদের অনেক গুলো সমস্যার সমাধান হয়েছে। আরো কিছু ইস্যু আছে যেগুলো সমাধানের জন্য দিন গুণছে এবং আলোচনায়ও অগ্রগতি আছে। ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সঙ্গে আলোচনায় আরো অগ্রগতি হবে। কাজেই সম্পর্ক যখন আছে এই সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে শক্তি শালী হবে। এটিই আমরা আশা করি। এই সফর ভারত বাংলাদেশের সম্পর্কে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে ও উচ্চতায় উন্নিত করবে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন কিছু চুক্তি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে এই সফরে সে বিষয়ে কোন সমাধান আসবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধানমন্ত্রি টু প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক যখন হবে আমার মনে হয় তখন বাইলেটারাল কোন ইস্যু বাদ থাকবে না। সব ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। অপেক্ষা করুণ দেখুন কয়েকদিন পরেই তো হবে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শ্রী হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, সাম্প্রতিক পরিস্থিতি দিয়ে ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক বিচার করলে চলবে না।। সামাজিক মাধ্যমে কিছু বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে। সরকার শক্ত হাতে তা নিয়ন্ত্রণ করছে। আশা করি এই পরিস্থিতি দুদেশের সস্পর্কে প্রভাব ফেলবে না।