সিলেটে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৩২১ রান তাড়া করতে নেমে ৩৯.১ ওভারে ১৫২ রানে গুটিয়ে গেল জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশ জিতলো ১৬৯ রানে। ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ে তো বটেই যে কোনো দলের বিপক্ষেই রানের ব্যবধানে এটি সবচেয়ে বড় জয় টাইগারদের। এর আগে ২০১৮ সালে মিরপুরে শ্রীলঙ্কাকে ১৬৩ রানে হারিয়েছিল মাশরাফিরা। আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয়টি ছিল ২০১৫ সালে। মিরপুরে ১৪৫ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়েকে শুরুতেই চাপে ফেলেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। ৫ মাস পর ফেরা এই পেস অলরাউন্ডার ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে সরাসরি বোল্ড করেন তিনাশে কামুনহুকামেকে (১)। অষ্টম ওভারে রেগিস চাকাভাকেও (১১) সাজঘরের পথ দেখান সাইফুদ্দিন।
অধিনায়ক হিসেবে খেলতে নামা ওপেনার চামু চিবাবার (১০) উইকেটটি নেন মাশরাফি। ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা জিম্বাবুয়েকে আরো বিপদে ঠেলে দেন তাইজুল ইসলাম। দলীয় ৪৪ রানে তিনি তুলে নেন অভিজ্ঞ ব্রেন্ডন টেইলরকে (৮)। অভিষিক্ত মাধেভেরকে নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন সিকান্দার রাজা (১৮)। দলীয় ৭৯ রানে তাকে ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান। ৫ রান পর মাধেভেরকে (৩৫) তুলে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটান মেহেদী হাসান মিরাজ। ১০৬ রানে রানআউটে কাটা পড়েন রিচমন্ড মুটুম্বামি (১৭)। তিন রানের ব্যবধানে অষ্টম উইকেটের পতন। নিজের বলেই ডোনাল্ড টিরিপানোর (২) ক্যাচ নেন মিরাজ। দলীয় ১৩০ রানে কার্ল মাম্বাকে (১৩) নিজের তৃতীয় শিকার বানান সাইফুদ্দিন। মুতুম্বদজিকে (২৪) ফিরিয়ে বাংলাদেশকে রেকর্ড গড়া জয় উপহার দেন অধিনায়ক মাশরাফি।
এর আগে লিটন দাসের ১২৬ রানের অনবদ্য ইনিংসের সুবাদে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩২১/৬। ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের দলীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে ৩২০/৮ তোলে টাইগাররা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ওপেনিং জুটিতে আসে ৬০ রান। তামিম ইকবালের বিদায়ে ভাঙে এ জুটি। অভিষিক্ত অফস্পিনার ওয়েসলি মাধভেরের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন তামিম। আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নেন তামিম।
রিভিউতে দেখা যায় বল আঘাত হানতো লেগ-মিডল স্টাম্পে। ৪৩ বলে ২৪ রান করেন তিনি। আরেকটি ভালো জুটি উপহার দেয়ার পর দলীয় ১৪০ রানে মুতুমবদজির বলে এলবির ফাঁদে পড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৩৮ বলে ১ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ২৯ রান করেন এই বাঁহাতি।
একপ্রান্ত আগলে রাখা লিটন ৯৫ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। ডোনাল্ড টিরিপানোর করা ইনিংসের ৩৪তম ওভারের প্রথম বলে ৪ হাঁকিয়ে তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছে যান এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে। ১১৭ বলে ১২১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। ইনিংসের ৩৭তম ওভারে ওয়েসলি মাধেভেরকে বিশাল এক ছক্কা হাঁকানোর পরই পায়ের মাংশপেশিতে টান পড়ে লিটনের। ১০৫ বলে ১৩ চার ও ২ ছক্কায় ১২৬ রান করে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। পরে আর ব্যাটিংয়ে নামেননি।
লিটন যে ওভারে সেঞ্চুরি করেন সেই ওভারেই আউট হয়ে ফেরেন মুশফিকুর রহীম। ২৬ বলে তার সংগ্রহ ১৯ রান। মিঠুনের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ৫৭ বলে ৬৮ রানের জুটি গড়ে আউট হয়েছেন রিয়াদ। ২৮ বলে দুই বাউন্ডারি ও এক ওভার বাউন্ডারিতে তিনি করেন ৩২ রান। দলীয় ২৮৯ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন মিঠুন। ৪১ বলে ৫ চার ও এক ছক্কায় ৫০ রান করেন তিনি। উইকেটে এসে বেশিক্ষণ টেকেননি মিরাজ (৭)। দলীয় ২৯৮ রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এরপর অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে ৯ বলে ২১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলকে ৩২১ রান পর্যন্ত নিয়ে যান মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। ১৫ বলে ৩ ছক্কায় ২৮ রানে অপরাজিত থাকেন সাইফুদ্দিন।