চীনের পর দেশে দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বজুড়ে এখন আতঙ্ক। এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে সৌদি আরব ওমরাহ ও ট্যুরিস্ট ভিসা স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এমন নির্দেশনা আসার পর ওমরাহ যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে এয়ারলাইন্সগুলো। এতে বিপাকে পড়েছেন ওমরাহ যাত্রীরা। ওমরাহ করতে ভিসা পেয়েছেন এমন ১০ হাজার যাত্রী এই মুহূর্তে যেতে পারছেন না। তাদের মধ্যে চারটি ফ্লাইটের প্রায় এক হাজার যাত্রী অপেক্ষমান ছিলেন।
গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনের একটি হোটেলে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজ-২০২০ ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ২৭শে ফেব্রুয়ারি সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি নোটিশ জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে পৃথিবীর সব দেশের ওমরাহ ভিসা ইস্যু স্থগিত করা হয়েছে।
পাশাপাশি ভিজিট ভিসাও। ওমরাহ যাত্রীদের সৌদি আরবে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার কথাও বলা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি সকালে সৌদি দূতবাসের সঙ্গেও কথা বলেছি। যাদের ভিসা আছে তারা যেতে পারবেন কিনা বিষয়টি অস্পষ্ট। আজকে সকালে বিমানবন্দরে আমাদের যে যাত্রীরা গিয়েছেন সকলেই অপেক্ষামান আছেন, কাউকেই বোর্ডিং পাস দেয়া হচ্ছে না। আমি সৌদি এয়ারলাইন্সের এয়ারপোর্ট ম্যানেজারের সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনি বলেছেন আমরা পরবর্তী ফ্লাইটের যাত্রীদের দাঁড় করিয়ে রেখেছি, সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটা মেইলের অপেক্ষায় আছি। এটা না আসা পর্যন্ত ওনারা কাউকে যেতে দেবেন না। তিনি বলেন, ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা ইনস্ট্যান্ট ব্যয় হয়েছে, যে টাকা আর ফেরত পাওয়া যাবে না। এতে এজেন্সি ও ওমরাহ যাত্রীদের ক্ষতি হবে। ভিসাগুলোর জন্য সৌদি সরকারকে (আইবিএনের মাধ্যমে) পরিশোধ করা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। সাধারণ ক্যারিয়ারে যে ৩ হাজার টিকিট কাটা আছে সেগুলোর জন্যও আর্থিক ক্ষতি হবে। আর সেখানে যে হোটেল ভাড়া করা আছে, এজন্য মূল্য আগেই পরিশোধ করতে হয়। ভিসা ফি আর হোটেল ভাড়া ফিরে পাওয়া যাবে না। এখন প্রায় ১০ হাজার ওমরাহ ভিসা করা আছে। এই ১০ হাজার ভিসার বিপরীতের প্রায় ৫ হাজার টিকিট কাটা আছে। ৫ হাজার টিকিটের মধ্যে ২ হাজার টিকেট লো-কস্ট এয়ারলাইন্সের, যেগুলো নন-রিফান্ডেবল। সেখানে ৯ কোটি টাকার মতো টিকেট কাটা আছে। হাব সভাপতি বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল বেলা যে বিমানগুলো সৌদি আরব গেছে, সেগুলো ওমরাহ যাত্রীদের নেয়নি বলেও জানান তিনি।
বিমানবন্দরে সৌদিগামীদের যাত্রীদের ভোগান্তি: মরণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবে গতকাল সকাল থেকে সৌদ আরব ওমরাহ ভিসা স্থগিত করার ফলে শ শ যাত্রী ভোগান্তির স্বীকার হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে ওমরাহ পালনের উদ্দেশে শাহজালাল বিমানবন্দরে অপেক্ষামান যাত্রীদের কাউকেই বোর্ডিং পাস দেয়া হয়নি। যাত্রীরা বোর্ডি পাস এলাকা থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ফলে গতকাল সৌদির উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বিমানগুলোতেও কোনো ওমরাহ যাত্রী ছিলেন না। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-ইমিগ্রেশন) বলেন, বিভিন্ন এয়ারলাইন্স থেকে আমাদের ওমরাহ ভিসাপ্রাপ্ত যাত্রীদের ইমিগ্রেশন না করানোর মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে সেসব দেশের শ্রমিকরা যেতে পারছেন।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকাল থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে-৫৮৩, কাতার এয়ারওয়েজের কিউআর-৬৪১, এয়ার এরাবিয়ার জি৯-৫১৮, সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি-৮০৯ এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-০৪৯ ফ্লাইটে প্রায় ৩ শতাধিক ওমরাহযাত্রীর জেদ্দা ও মদিনা যাওয়ার কথা ছিল। এদিন সৌদি সরকারের হঠাৎ সিদ্ধান্তে তারা শাহজালালে এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন। সূত্র জানায়, সকাল থেকে অনেকেই ওমরাহ করার প্রস্তুতি নিয়ে এসে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। কেউ আবার বিমানবন্দরেই অবস্থান করছেন।