ইরানে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসৌমেহ এবতেকার সহ অন্তত ৭ শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা করোনা ভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত হয়েছেন। মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকগুলোয় তিনি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি থেকে স্বল্প দূরত্বে বসেন। রুহানির নারী বিষয়ক ডেপুটি ও ইরানের সবচেয়ে উচ্চপদস্থ নারী কর্মকর্তা তিনি। বৃহস্পতিবার তার ডেপুটি আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর একদিন আগেই সরকারের উচ্চপদস্থ নেতাদের সঙ্গে মন্ত্রীপরিষদে এক বৈঠক করেছেন তিনি। বিবিসি পার্সিয়ার এক প্রতিবেদন টুইটারে বৈঠকের একটি ছবি পোস্ট করেছেন। এতে এবতেকারকে রুহানি থেকে অল্প দূরত্বে বসে থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া, দেশটিতে কভিড-১৯ সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ২৬ জনে পৌঁছেছে।
আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৪৫ জন। এ খবর দিয়েছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।
খবরে বলা হয়, করোনা ভাইরাসে সরকারি কর্মকর্তা আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ইরানে। ধারণা করা হচ্ছে, চীন থেকেই সেখানে কভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েছে। সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও। দেশটিতে ভাইরাসটির উপস্থিতি সম্পর্কে প্রথম তথ্য প্রকাশ পায় ১৯শে ফেব্রুয়ায়রি। এর পর থেকে বেশ দ্রুত দেশজুড়ে ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে শিয়াদের পবিত্র শহর কওমে। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, সরকারি তথ্যের চেয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। সেখানে এই ভাইরাসে প্রাণহাণীর হার প্রায় ২০ শতাংশ। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুসারে, ভাইরাসটিতে প্রাণহানীর হার মাত্র ২ শতাংশ।
ইরানে ভাইরাসটির উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর এক সপ্তাহের মধ্যে বাহরাইন, লেবানন, আফগানিস্তান, ওমান, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েতেও এর সংক্রমণ ঘটেছে। ইরান সফরকারী ব্যক্তিদের মাধ্যমেই এই সংক্রমণ ঘটেছে বলে জানিয়েছে দেশগুলোর কর্তৃপক্ষ। এদিকে, সম্প্রতি ইরান সফরকারী অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেক্স্যান্ডার শ্যালেনবার্গও ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়নি।
এবতেকার ইরানের চার জন ভাইস প্রেসিডেন্টের একজন। ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলিউশনের সময় তিনি আমেরিকানদের কাছে ‘মেরি’ নামে পরিচিতি পান। তিনিসহ কওম শহরের সাংসদ এবং পার্লামেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র নীতিমালা কমিটির প্রধান মোজতবা জোলনূর; তেহরানের সাংসদ মাহমুদ সাদেঘি; উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইরাজ হারিরচি; তেহরানের এক মেয়র মোরতেজা রহমান জাদেহ; কওমের করোনা ভাইরাস ব্যবস্থাপনার প্রধান ডা. মোহাম্মদ রেজে ঘাদির; শীর্ষ ধর্মীয় নেতা হাদি খোসরোশাহি ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। ইরানের গণমাধ্যম অনুসারে, খোসরোশাহি মারা গেছেন।
ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণ করতে তেহরান ও আরো ২২টি শহরের মসজিদে নামাজ বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সকল ধরণের সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান আপাতত বন্ধ রাখা হবে বলে জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাইদ আব্বাস মৌসাভি জানান, শুক্রবার চীন থেকে ২০ হাজার করোনা ভাইররাস টেস্ট কিট পৌঁছাবে ইরানে। এদিকে অপর এক মুখপাত্র জানান, সাম্প্রতিক ভাইরাসটির সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে, করোনা ভাইরাস পরীক্ষার পরীক্ষাগার বৃদ্ধি। আগে দুটি পরীক্ষাগারে এ পরীক্ষা করা হলেও এখন সাতটি পরীক্ষাগার এ কাজ করছে। শিগগিরই ২২টি পরীক্ষাগার এমন পরীক্ষা চালাবে। আসন্ন দিনগুলোয় আক্রান্তের সংখ্যা তীব্র হারে বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে বিশেষজ্ঞরা।