দিল্লির সাম্প্রতিক সহিংসতায় বিচলিত অনেক মানুষ। সামাজিক মাধ্যমে এবং তার বাইরেও প্রতিবাদ করেছেন অনেকে। কিন্তু শুধু মৌখিক প্রতিবাদ নয়, অভিনেত্রী সুভদ্রা মুখোপাধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবেই পদত্যাগ করেছেন বিজেপি-র সদস্যপদ থেকে। এ নিয়ে ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের সাথে বেশ স্পষ্টভাবে কথা বলেছেন তিনি।
পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে সুভদ্রা বলেন, আমি ২০১৩-তে বিজেপি যোগ দেই। ওই সময় মোদীজিকে দেখে অত্যন্ত উদ্বুদ্ধ হয়েছিলাম যে একটা মানুষ আমার দেশের জন্য, দশের জন্য এতটা ভাবছে। আমি ভেবেছিলাম তার স্বপ্নকে সত্যি করার জন্য, তার পায়ের তলার কর্মী হয়ে আমি কাজ করব। আমি বরাবর ওইভাবেই দলে থেকেছি। কোনোদিন কোনো পদ চাইনি। আমি নিজেকে সাধারণ কর্মীই মনে করি। কিন্তু তার যে ভাবনা দেখে আমি প্রলুব্ধ হয়ে রাজনীতিতে এসেছিলাম, সেগুলো আর চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি না, সবকিছু বিধ্বংসী লাগছে! ২০১৯-এর পরে যেন সব বদলে গিয়েছে।
কিন্তু ঠিক এই সময়টায় এসে তিনি কেন বিজিপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন? প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সব মানুষরাই তো দেখছে যে ভারত কীভাবে জ্বলছে। আমাদের দেশের সম্পর্কে বলা হতো, বিভেদের মাঝে থাকে মিলন মহান। এতগুলো ভাষার লোক, এতগুলো জাতির লোক এই দেশে বাস করে। কবিতায় তো সেই কথাই বলা রয়েছে। সেই ভারতে আজ কী হচ্ছে। আমাদের সন্তানরা কী দেখবে, খালি হিংসা ও মারপিট? আমরা দেশের কথা ভুলে যাচ্ছি। দেশের উন্নয়ন প্রয়োজন, সে সব কথা ভুলে যাচ্ছি।
নিজের রাজধনীতে যোগ দেয়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি রাজনীতিতে আসার অনেক আগে থেকেই সোশাল ওয়ার্ক করি, এখনও করে যাচ্ছি। মানুষের কষ্টের পাশে বরাবর দাঁড়াতে ভালবাসি। ওটা রক্তের মধ্যে মিশে যায়। আমি রাজনীতি অত বুঝি না। আমি ভীষণই সাধারণ। একদম পায়ের তলায় থেকে মানুষের জন্য কাজ করব ভেবেই আসা। এমপি নির্বাচনের সময় আমাকে বলা হয়েছিল দাঁড়াতে। আমি বলেছিলাম আমি রেডি নই। কোনোদিন কোনো পদ পাব বলে বিজেপি-তে আসিনি।
কিন্ত ইদানীং মাথার উপরে যাঁরা রয়েছেন, তারা নানান পন্থী হয়ে গিয়েছেন। আমি সরল মানুষ। মোদীজির যে কথা আমাকে উদ্বুদ্ধ করত যে দেশ বড় হবে… ‘আচ্ছে দিন আয়েঙ্গে’। কিন্তু দেশ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে? চারদিকে কালো ধোঁয়া ছাড়া তো আর কিচ্ছু নেই। একটা ন-মাসের বাচ্চাকে পুড়িয়ে মারা হলো! মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলে দেশ কী করে এগোবে? আমি জানি না কারা করছে এই কাজ, কিন্তু কোনো একজন মানুষ তো করেছে। কোন দিকে যাচ্ছি আমরা?
কিন্তু এই ধরনের হিংসা তো প্রথম নয়। গুজরাটের দাঙ্গায় এক সন্তানসম্ভবার পেট চিরে গর্ভস্থ শিশুকে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। সেটা ২০১২। আর সুভদ্রা রাজনীতিতে আসেন ২০১৩-তে। ওই দাঙ্গার সময় যে যে সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের ভূমিকা প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ে, তার মধ্যে কিন্তু বিজেপি এবং আরএসএস-এর নামও ছিল। এতো ইতিহাস জানার পরেও কেন তিনি বিজিপির রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়েছিলেন; তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন সুভদ্রা।
তিনি বলেন, ‘ওই সময় আমি দলটিকে বেনেফিট অফ ডাউট দিয়েছিলাম বলতে পারেন। আমার মনে হয়েছিল, যা যা হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে দেশে, তা আর ঘটবে না। তখন একটা অন্যরকম আবহাওয়া ছিল। মোদীজির অনেক কথাই আমাকে খুব উদ্বুদ্ধ করত। তার মধ্যে যে স্লোগানটি সেই সময় সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছিল, সেটা হল ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’। আমার বরাবরই লক্ষ্য ছিল সোশাল সার্ভিস। মনে হয়েছিল যদি কোনও ভালো পলিটিকাল প্ল্যাটফর্ম পাওয়া যায়, তাহলে সোশাল সার্ভিস আরও বেশি করে করতে পারব। সেটাই আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল। আর পরে কিন্তু গুজরাট দাঙ্গার সব অভিযোগ থেকে মোদীজি ও বাকিদের মুক্ত করে দেয়া হয়।
কিন্তু আজকে যেটা হচ্ছে, সেটা মেনে নিতে পারছি না। আজ সিএএ-তে বলা হচ্ছে যে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তানে ১৪ লাখ হিন্দু রয়েছেন, তারা অসহায়। আমরা সাগ্রহে তাদের অ্যাকসেপ্ট করব। কিন্তু তার জন্য ১৩৫ কোটি মানুষ, যাঁরা অলরেডি ইন্ডিয়ান, তাদের বিপদে ফেলে দেব। তাদের কাগজ দেখাতে বলব? তারা ভোট দিয়েছেন বলেই তো বিজেপি সরকারে এসেছে। যারা ভোট দিয়ে সরকারে নিয়ে এল, তাদেরই দেশের বাইরে পাঠাব। তাদের আইডেন্টিটি যদি ইনভ্য়ালিড হয় তাহলে তো ভোটটাও ইনভ্যালিড। আর সেই ভোটে নির্বাচিত সরকারও ইনভ্যালিড। চোর ধরতে গিয়ে বাড়ির লোককেই বাড়ি থেকে বার করে দেব, দেশে যুদ্ধ লাগিয়ে দেব। তাহলে দেশের উন্নতি কী করে করব? সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস