ড. কামালরা জনবিচ্ছিন্ন, পায়ের তলায় মাটি নেই

Slider জাতীয় রাজনীতি

ঢাকা: প্রেসিডেন্টের ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতা-মন্ত্রীরা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে ড. কামাল হোসেনরা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত কথাবার্তা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। পাকিস্তানের এসব প্রেতাত্মারা বাস্তবে জনবিচ্ছিন্ন, এদের পায়ের তলায় কোন মাটি নেই। দেশের জনগণ এসব জঙ্গীবাদী, সন্ত্রাসী, গ্রেনেড হামলাকারী ও অগ্নিসন্ত্রাসীদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। যাদের (বিএনপি) এখনও পাকিস্তানের জন্য প্রাণ কাঁদে, আপনাদের এখনও সময় আছে ধর্মান্ধতা, জঙ্গীবাদী ও অগণতান্ত্রিক রাজনীতি ছেড়ে সহজ পথে আসুন। নইলে চিরদিনের জন্য জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। সোমবার প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে প্রেসিডেন্টের ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন।

আলোচনায় অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, হুইপ ইকবালুর রহীম, জাতীয় পার্টি জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও সরকারি দলের আনোয়ার হোসেন খান। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাপনি বক্তব্যের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর দীর্ঘ আলোচনা শেষে তা গ্রহণ করা হবে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক মন্ত্রী ও জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, সারাবিশ্ব একটা পরিবর্তন এসেছে, এই পরিবর্তনে সমস্ত বিশ্ব একটা অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ব অনিশ্চয়তার মধ্যেও আমরা নিরাপদ অবস্থানে আছি। বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে তা শুধু দেশের মানুষই নন, বিশ্ব ব্যাংকসহ বিশ্ব নেতারা প্রশংসার সুরেই বলছেন। আমরা গণতন্ত্রের কথা বলি, সংসদের বাইরে যারা রয়েছেন তারা বলেন দেশে নাকি গণতন্ত্র নেই! কিন্তু গণতন্ত্রের একটি কাঠামো ও সংস্কৃতি থাকে। এই কাঠামোটা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন, জেলা পরিষদ নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচন- এই কয়টি সরকার বাস্তবায়িত করেছে। তবে আমাদের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে উন্নয়ন করতে হবে, যদিও সেটা সময় সাপেক্ষ। কিন্তু সরকারের সফলতা হচ্ছে গণতান্ত্রিক অবকাঠামো স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। এটা যারা আমাদের সমালোচনা করেন তাদেরকেও স্বীকার করতে হয়। দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন হচ্ছে এই কথা কেউ অস্বীকার করে না।

কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, মাত্র এক দশকেই সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শুধু প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিই নয়, ৪০ ভাগ থেকে দারিদ্র্য ২০ ভাগে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান সরকার। যেভাবে দেশের উন্নয়ন হচ্ছে সারাবিশ্বের কাছে তা রীতিমত বিষ্ময়। খাদ্য ঘাটতি ও ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে চলা বাংলাদেশ আজ খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা খাদ্যের জন্য কারও কাছে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে যাই না, বরং আমরা শ্রীলংকাকে আমরা খাদ্য সাহায্য দিয়েছি। পুরো বছর এখন সব ধরণের সবজি পাওয়া যায়। পৃথিবীর কোন দেশ মাত্র ১২ টাকায় সার দিতে পারেনি, যা বর্তমান সরকার দিচ্ছে। অথচ এই সারের জন্য খালেদা জিয়া গুলি চালিয়ে বহু কৃষককে হত্যা করেছে। বিএনপি-জামায়াতকে ষড়যন্ত্রের পথ ছেড়ে গণতান্ত্রিক পথে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রে যারা বিশ্বাস করে না, যাদের ঘাড়ে এখনও পাকিস্তানের ভূত চেপে আছে, স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না তারা (বিএনপি-জামায়াত) দেশের এই উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। নির্বাচনে না এসে আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাসের নামে হাজার হাজার মানুষকে হত্যার পৈশাচিকতা পৃথিবীর কোথাও নজীর নেই। যাদের (বিএনপি) এখনও পাকিস্তানের জন্য প্রাণ কাঁদে, এখন সময় আছে ধর্মান্ধতা, জঙ্গীবাদী ও অগণতান্ত্রিক রাজনীতি ছেড়ে সহজ পথে আসুন।

তিনি বলেন, কোনদিন নির্বাচন করে উনি জিততে পারেননি। লাত্থি মেরে নাকি সরকার ফেলে দেবেন! এটা রাজনীতির ভাষা নয়। আপনি যাদের ঘাড়ে সওয়ার হয়েছেন তারা (বিএনপি-জামায়াত) ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ভয়াল নাশকতাসহ অনেক কিছু করেছেন, কিন্ত পারেননি। রাজনৈতিক কারণে নয়, দুর্নীতির কারণে খালেদা জিয়া কারাবন্দী, আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে বসে দেশ চালাচ্ছেন। বাস্তবে আপনাদের (ড. কামাল) পায়ের তলায় মাটি নেই, আপনারা গণবিচ্ছিন্ন। তাই এখনও সময় আছে রাজনীতির সহজ পথে আসুন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। এটা এমনি এমনি হয়নি। এজন্য প্রয়োজন ছিল একজন দক্ষ, প্রাজ্ঞ, সাহসী ও দেশপ্রেমিক নেতা। তিনি হচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছিলেন দেশকে বদলে দেবেন, সত্যিই তিনি দেশকে বদলে দিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতের ভয়াল অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে হত্যার হোলি খেলা শুরু হয়েছিল।

আমরা শক্তহাতে তা মোকাবেলা করে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ দমন করতে সফল হয়েছি। প্রায় ৮২ হাজার পুলিশের জনবল বাড়িয়েছেন, আধুনিক সরঞ্জাম দিয়ে পুলিশ বিভাগকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। আমরা দেশের জনগণকে নিরাপদ রাখতে পারছি। মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সরকার জিলো টলারেন্স অবস্থানে রয়েছে। মাদ্রকরোধে জনবল বৃদ্ধি করেছি, মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করছি। মাদকে পরিপূর্ণ নির্মূল করতে না পারলেও নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই আনবো এবং মাদক প্রবেশরোধে বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করা হয়েছে। তিনি বলেন, ১৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট চালু করেছে। পাসপোর্ট নিয়ে কাউকে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। মুজিব বর্ষের আরেকটি উপহার হচ্ছে এই ই-পাসপোর্ট। কারাগারে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ বন্দী রয়েছে। সমস্যা সমাধানে নানা পদক্ষেপসহ বন্দী অপরাধীরা আবারও যাতে কারাগারে আর ফিরে না আসে, সেজন্য নানা শিক্ষায় শিক্ষিত করা হচ্ছে। সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে আমরা সক্ষম হচ্ছি।

এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। গ্রামীণ রাস্তাগুলোকে আধুনিক করতে নতুন নকশা প্রণয়ণ করা হচ্ছে। গ্রামে শহরের সকল সুবিধা পৌঁছে দিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। রাজধানীতে সুপেয় পানী সরবরাহে সারাবিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। মুজিব বর্ষ পালন করা হবে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন মানুষের সামনে তুলে ধরা হবে। সেই পথ ধরেই বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ হবে। হুইপ ইকবালুর রহীম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন দেশকে সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, তা স্তব্ধ করে দিতে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, সারাদেশে চালিয়েছে ভয়াবহ নাশকতা। এটা সম্পূর্ণ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। দেশের জনগণ আর এদেশকে কখনো আইএস, জঙ্গীগোষ্ঠীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হতে দেবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *