ঢাকা: ২০১২ সালের এই দিনে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সারোয়ার ওরফে সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন নাহার রুনা ওরফে মেহেরুন রুনি।
এক এক করে দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে আট বছর। তারপরও মামলাটির তদন্ত শেষ হয়নি। সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার পরও তদন্ত কাজে কোনো অগ্রগতি নেই। মামলার বিচার যেন সোনার হরিণের মত।
সাগর-রুনি খুনের পর পরই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে ৯৬ মাসে এসে ঠেকেছে। কিন্তু এখনো কী কারণে, কারা খুন করেছে এ তথ্য উদঘাটন হয়নি।
পুলিশ, গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (ডিবি) পর বর্তমানে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মামলা তদন্ত করছে। তবে ফলাফল আগের মতই। তেমন কোন অগ্রগতি নেই।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা করে ঘটনাস্থলে দু’জন অজ্ঞাত পুরুষ ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া যায়। তবে গত তিন বছর ধরে ওই দুই অজ্ঞাত ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পারেনি তদন্ত সংস্থা।
দীর্ঘদিনেও চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ায় নিহতের পরিবার ও গণমাধ্যমকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। তবে শিগগিরই তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে বলে আশা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম বলেন, মামলাটির তদন্ত চলছে। আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি তদন্ত শেষ করতে। ঘটনাস্থলে দু’জন অজ্ঞাত পুরুষ ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া গেছে। মামলাটির তদন্ত দ্রুত শেষ হওয়ার আশা করছি।
আদালতে দ্রুত চার্জশিট দেয়ার কথা জানান তিনি।
এ সম্পর্কে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বলেন, আট বছরেও মামলাটির তদন্ত শেষ হয়নি, এটা দুঃখজনক। দেরী হওয়ায় জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। আশা করছি তদন্ত সংস্থা সেটা উপলব্ধি করে দ্রুত তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
সাগর-রুনি হত্যার ঘটনার পরের দিন রুনির ভাই নওশের আলম রোমান রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
সর্বশেষ সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু এদিনও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম তা দাখিল করেননি। এজন্য আদালত আগামী ২৩ মার্চ তদন্ত প্রতিবেন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৭১ বার সময় নেয়া হয়েছে।
এদিকে মামলা দায়েরের পর প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানার এসআই মো. জহুরুল ইসলামকে এ মামলার তদন্তভার দেয়া হয়। ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ডিবি উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলম মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। এরপর সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের এক রিট পিটিশনে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল এ মামলার তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়া হয়। ১৯ এপ্রিল র্যাব সদর দপ্তরের সিনিয়র পুলিশ সুপার মো. জাফর উল্লাহ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন।
র্যাবের এ কর্মকর্তা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ায় ২০১৪ সালের ১২ মার্চ এ মামলার তদন্তভার পান র্যাব সদর দপ্তরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. ওয়ারেছ আলী মিয়া।
নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি এ কর্মকর্তা মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাগর-রুনীর ছেলে মাহির সরোয়ার মেঘকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার জবানবন্দি ১৬১ ধারায় লিপিবদ্ধ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসামি ও সন্দেহভাজনদের ডিএনএ পরীক্ষা করে এনে ওই প্রতিবেদন বিস্তারিত পর্যালোচনা করে তদন্ত করেন।
২০১৫ সালের মাঝামাঝি র্যাব সদর দপ্তরের সহকারী পরিচালক সহকারী পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহম্মদকে এ মামলার তদন্তভার দেয়া হয়। এরপর গত বছরের ২৫ নভেম্বর র্যাব সদর দপ্তরের সহকারী পরিচালক সহকারী পুলিশ সুপার শহিদার রহমানকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। বর্তমানে র্যাব সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করছেন।
তদন্তের আট বছর সময়ের মধ্যে র্যাব আদালতে এ মামলার পাঁচটি তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। প্রথমে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর, এরপর ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, ওই বছরের ৭ জুন, ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর ও সর্বশেষ ২০১৭ বছরের ২১ মার্চ তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। দাখিল করা তদন্ত অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিটি প্রতিবেদনে প্রায় একই ধরনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলাটিতে এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করা করেছে। আসামিরা হলেন, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মামুন, মো. কামরুল হাসান অরুন, বকুল মিয়া, রফিকুল ইসলাম, আবু সাঈদ, এনাম আহাম্মদ ওরফে হুমায়ুন কবির, পলাশ রুদ্র পাল ও তানভীর রহমান। আসামিদের মধ্যে শেষের দুজন জামিনে ও অপর আসামিরা কারাগারে আছেন।