ঢাকা: অবিলম্বে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। তারা সংসদ ভবন এলাকা থেকে জিয়াউর রহমানসহ সকল স্বাধীনতাবিরোধীদের কবর স্থানান্তরে পদক্ষেপ গ্রহণ ও দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সংসদে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। তাঁর ইহুদি জামাতা ডেভিড বার্গম্যানও অবধারিতভাবে ও সবসময় বাংলাদেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে যাচ্ছেন। দেশের ধারাবাহিক সাফল্যে এই পরিবারটি যেন মেনে নিতেই পারছেন না। আর ড. কামাল হোসেন যে ভাষায় কথা বলেছেন, যে শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন- তার তীব্র নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই। এখনও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারিনি। অবশ্যই দলটিকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তিনি লুই আই কানের অমর সৃষ্টি জাতীয় সংসদের মূল নকশা অক্ষুন্ন রাখতে অবৈধভাবে স্থাপিত জিয়াউর রহমানসহ সকল কবর দ্রুত স্থানান্তরের দাবি জানান।
আজ সোমবার রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এই আহ্বান জানান। প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও পরে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে এই আলোচনায় অংশ নেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এইচ এন আশিকুর রহমান, অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, সাগুফতা ইয়াসমীন এমিলি, মোরশেদ আলম, আ ক ম সরওয়ার জাহান, বেগম খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ভোট প্রদান থেকে মানুষের দূরত্ব গণতন্ত্রের জন্য বিপদ ডেকে আনবে মন্তব্য করে বলেন, সিটি নির্বাচনে বিএনপি এসেছিল। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো ভোটের দিন তাদের কোথাও দেখা যায়নি। নির্বাচনকে বানচাল করা, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে পেছনের দরজায় ক্ষমতায় যাওয়ার তারা কৌশল নিয়েছে। এটা সত্য যে, ওই নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে খুব কম এসেছে। আওয়ামী লীগ তথা চৌদ্দ দলের সমর্থকরাও ভোট দিতে আসেনি। ভোট থেকে মানুষের এই দূরত্ব গণতন্ত্রের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। নির্বাচন তো বটেই, রাজনৈতিক দলগুলোকেও অপ্রাসঙ্গিক করে তুলবে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আগেই তারা মরিয়া আক্রমণ করবে। ধর্মবাদী তো বটেই, ওই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের ডান ও তথাকথিত বামও এক হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতের এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র চলছে উলেখ করে মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী সক্রিয়। বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে সরকারের বিরুদ্ধে নানা উস্কানিমূলক তৎপরতা চালছে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। দেশের বিস্ময়কর উন্নয়ন, অগ্রগতি দেখেই দেশের মানুষ দু’হাত ভরে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করছে। ২১ বছর ক্ষমতায় থাকা বিএনপিসহ অন্য সরকারগুলো দেশের মানুষকে কিছুই দিতে পারেনি।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী এইচ এন আশিকুর রহমান বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নেই। তাদের ষড়যন্ত্র চলছে, চলবে। যারা বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, দেশ ও দেশের নীতি-আদর্শকে বিশ্বাস করে না, তাদের এ দেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই। দেশবিরোধী তথাকথিত এসব গণতান্ত্রিক দলগুলোকে উচ্ছেদ করতেই হবে।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন, ঢাকার দুই সিটিতে ভোট কম পড়েছে ঠিক, কিন্তু নির্বাচন নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনি। বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস-নাশকতা-দুঃশাসন-গ্রেনেড হামলার কথা দেশের জনগণ ভুলে যায়নি। সেজন্য নির্বাচনে জিততে পারেনি, আগামীতেও পারবে না। ড. কামালের হুমকিতে সরকার পরিবর্তন হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বলেন, দুর্নীতিবাজ তারেক জিয়া লন্ডনে পলাতক থেকে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। গ্রেনেড হামলা করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাসহ পুরো আওয়ামী লীগকে নিঃশ্বেস করে দিতে চেয়েছিল যে অপরাধ খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানরা করেছে- জাতি কোনদিন তাদের ক্ষমা করবে না।
স্বতন্ত্র সদস্য রেজাউল করিম লাবলু বলেন, দেশে হত্যা-ধর্ষণ-রাহাজানি বেড়েই চলেছে। সমাজের নৈতিক এই অবক্ষয়ের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। কিছু বিদেশি গোষ্ঠীর মদদে এ দেশের কিছু ব্যক্তি ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্যে দিয়ে দেশের ৯৫ ভাগ মুসলমানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে যারা বক্তব্য রাখছে তাদের খুঁজে বের করুন, তালিকা প্রকাশ করুন।
সাবেক হুইপ সাগুফতা ইয়াসমীন এমিলি বিএনপি-জামায়াত জোটের পাঁচ বছরের দুঃশাসনের কথা তুলে ধরে বলেন, ক্ষমতায় থাকতে তারা দেশের হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ বারবার আক্রমণ চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছে এই স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিরা।