রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের প্রথম ইনিংসে সবকটি উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান। মাত্র ৪ রানের ব্যবধানে শেষ ৩ উইকেট হারায় টাইগাররা। ৮২.৫ ওভার ব্যাটিং করতে পেরেছে তারা। সর্বোচ্চ ৬৩ রান এসেছে মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাট থেকে। পাকিস্তানের হয়ে শাহীন শাহ আফ্রিদি ৪টি, হারিস সোহেল ও মোহাম্মদ আব্বাসের শিকার ২টি করে উইকেট।
১৬১ রানে ৬ উইকেটে হারানো বাংলাদেশ ২০০ পেরোয় মোহাম্মদ মিঠুন-তাইজুল ইসলামের ব্যাটে। দলীয় ২১৭ রানে তাইজুল (২৪) ফিরলেও এক প্রান্ত আগলে রাখা মিঠুন তুলে নেন ফিফটি। আউট হন দলীয় ২৩৩ রানে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে। ৬৩ রানের ইনিংসটি সাজান ৭ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায়।
রাওলাপিন্ডিতে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে শাহীন শাহ আফ্রিদির প্রথম বলেই তিন রান নেন তামিম ইকবাল।
দ্বিতীয় বলেই স্ট্রাইকে যান অভিষিক্ত সাইফ হাসান। কিন্তু তিনি টিকলেন কেবল দুই বল। আফ্রিদির অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট পেতে দিয়ে স্লিপে আসাদ শফিককে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তিনি। এমন অভিষেক নিশ্চয়ই চাননি কেউ। সাইফ ফিরতে না ফিরতেই আউট তামিম। বিসিএলে ট্রিপল সেঞ্চুরি করে পাকিস্তান যাওয়া তামিম টিকতে পারলেন কেবল ৫ বল। স্কোরবোর্ডে ৩ রান উঠতে না উঠতেই নেই দুই ওপেনিং ব্যাটসম্যান। তামিম মোহাম্মদ আব্বাসের বলে হয়েছেন এলবি। প্রথমে আম্পায়ার আবেদনে সারা দেননি। কিন্তু পরে রিভিউতে দেখা যায় তামিম ঠিকই আউট।
তিন রানেই দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে সফরকারী বাংলাদেশ। সেখান থেকে শান্তকে সঙ্গে নিয়ে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন টাইগার দলপতি মুমিনুল হক। প্রথম ঘন্টা এ দুজনের কল্যানে ১৩ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে ২৮ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। শান্তকে সঙ্গে নিয়ে দারুণ খেলতে থাকেন মুমিনুল। দলীয় ৬২ রানে অযথা এক শট খেলতে গিয়ে শাহিন আফ্রিদির বলে উইকেটরক্ষক রিজওয়ানের হাতে কাটা পড়েন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৩০ রাজে সাজঘরে ফিরেন তিনি। শেষ পর্যন্ত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে সঙ্গে নিয়ে প্রথম সেশনটা পার করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। লাঞ্চে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৯৫ রান।লাঞ্চ থেকে ফিরেই কোন রান করেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন বড় ইনিংসের স্বপ্ন দেখানো নাজমুল (৪৪)। মোহম্মদ আব্বাসের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন তিনি।
সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে দায়িত্বটা বেশি ছিল মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের। চাপে থাকা দলকে কী উদ্ধার করবেন, উল্টো আরো চাপে ফেলে ফিরেছেন সাজঘরে। ৪৮ বলে ৪ বাউন্ডারিতে করেছেন ২৫ রান। কোনো দরকারই ছিল না এমন একটা শটটা খেলার। অফস্টাম্পের অনেক বাইরে বল করেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। সেটি খেলতে গিয়ে রিয়াদ ধরা পড়েন স্লিপে দাঁড়ানো ফিল্ডার আসাদ শফিকের হাতে। দলীয় ১০৭ রানে বাংলাদেশ হারায় পঞ্চম উইকেট।
পাকিস্তানি অধিনায়ক আজহার আলীর লেগ বিফোরের এক রিভিউয়ে তামিম ইকবালের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আজহারের আরেক রিভিউয়ে ফেরেন লিটন দাস। ভালো খেলছিলেন লিটন। দলীয় ১০৭ রানে পঞ্চম উইকেট হারানোর পর মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে অর্ধশত রানের জুটিতে চাপ অনেকটাই কাটিয়ে উঠেন তিনি। কিন্তু ব্যক্তিগত ৩৩ ও দলীয় ১৬১ রানে অকেশনাল স্পিনার হারিস সোহেলের বলে পড়েন এলবির ফাঁদে। আম্পায়ার নাইজেল লং প্রথমে আউট দেননি। পরে আজহার রিভিউ নিলে সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের পক্ষে যায়।
দেশের বাইরে সময়টা বেশ বাজে কাটছে বাংলাদেশের। হেরেছে টানা আট টেস্ট, এর ছয়টিতেই ইনিংস ব্যবধানে। ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে মরিয়া বাংলাদেশ দল। তবে ১৬ বছর পর এই সংস্করণে টেস্ট খেলতে যাওয়া বাংলাদেশ আদর্শ প্রস্তুতি ছাড়াই পাকিস্তান গেছে। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য খুব বেশি সময়ও পাননি মুমিনুল-মাহমুদউল্লাহ-তামিমরা। তবে বিসিএলের প্রথম রাউন্ডে তাদের পারফরম্যান্স আশা দেখাচ্ছে দলকে। ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছেন তামিম, সেঞ্চুরি এসেছে মুমিনুল, মাহমুদুল্লাহ ও লিটনের ব্যাট থেকে। ইনিংসে ছয় উইকেট নিয়েছেন নাঈম হাসান, পাঁচ উইকেট পেয়েছেন তাইজুল ইসলাম।
নিরাপত্তা শঙ্কায় এই সিরিজে নেই মিডল অর্ডারের সবচেয়ে বড় ভরসা মুশফিকুর রহিম। আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় আগে থেকেই নেই সাকিব আল হাসান। সন্তান সম্ভাবা স্ত্রীর পাশে থাকতে ভারত সফরে না যাওয়া দেশসেরা ওপেনার তামিম টেস্টে ফিরছেন এই সিরিজ দিয়ে।