ঢাকা: ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হয়েছেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। আর ঢাকা উত্তরে মেয়র হয়েছেন মো. আতিকুল ইসলাম। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোটগ্রহণ শেষে দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন এবং উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেম নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, ঢাকা দক্ষিণে নৌকা প্রতীকে তাপস পেয়েছেন ৪ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৫ ভোট ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫১২ ভোট। অর্থাৎ ধানের শীষের চেয়ে তাপস ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৩ ভোট বেশি পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
ঢাকা উত্তরে নৌকা প্রতীকে আতিকুল পেয়েছেন ৪ লাখ ৪৭ হাজার ২১১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল পেয়েছেন ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৬১ ভোট।
সবশেষ প্রাপ্ত ফলাফলে ঢাকা উত্তর সিটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়া অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টির ডা. আহাম্মদ সাজেদুল হক রুবেল (কাস্তে) পেয়েছেন ১৩ হাজার ৮১৭ ভোট, এনপিপির মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান (আম) ৩ হাজার ৫২৯, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল পিডিপির শাহীন খান (বাঘ) ১ হাজার ৯১৯ এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ (হাতপাখা) ২৬ হাজার ২৫৮ ভোট।
আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়া মেয়র পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন (লাঙ্গল) ৫ হাজার ৫৯৩ ভোট, গণফ্রন্টের আবদুস সামাদ সুজন ১২ হাজার ৬২৭, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আকতার উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ (ডাব) ২ হাজার ৪২১, ইসলামী আন্দোলনের মো. আবদুর রহমান (হাতপাখা) ২৬ হাজার ৫২৫ এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) বাহারানে সুলতান বাহার (আম) পেয়েছেন ৩ হাজার ১৫৫ ভোট। এ সিটিতে ১ হাজার ৫৬২ জন সব প্রার্থীকে ভোট দেয়নি।
মেয়র ছাড়াও দুই সিটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদেরও জয়জয়কার। কয়েকটি ছাড়া সব ওয়ার্ডেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। তবে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরাও জয়ের মুখ দেখেছেন। এছাড়া কয়েকটি ওয়ার্ডে পাস করেছেন বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলররা।
ঢাকার দুই সিটিতে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে সব মিলিয়ে ৭৫০ জন প্রার্থী চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। এর মধ্যে মেয়র পদে ঢাকা উত্তরে ৬ জন ও দক্ষিণ সিটিতে ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। শনিবার রাতে ঢাকা উত্তরে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়াম এবং দক্ষিণে শিল্পকলা একাডেমি থেকে দুই সিটির এ ফলাফল ঘোষণা করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
এবার দুই সিটিতে ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল। সকালে শীত থাকায় ধারণা করা হয়েছিল দুপুরের দিকে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকালেও ভোট উপস্থিতি কাঙিক্ষত মাত্রায় লক্ষ্য করা যায়নি।
এ নিয়ে খোদ প্রার্থীরাও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ক্ষমতাসীন দলের মেয়রপ্রার্থীদের মুখেও ভোটার উপস্থিতি কম থাকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের অভিযোগ তাদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। অনেককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও করা হয়েছে।
এবার ঢাকার দুই সিটিতে প্রথমবারের মতো ২ হাজার ৪৬৮টি ভোট কেন্দ্রের ১৪ হাজার ৪৩৪টি ভোটকক্ষে ইভিএমে ভোট হয়েছে। দুই সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৮ লাখ ৪৩ হাজার ৮ জন এবং ২৬ লাখ ২০ হাজার ৪৫৯ জন নারী ভোটার রয়েছেন।
ঢাকা উত্তর সিটিতে মোট ভোটার হচ্ছেন ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। এর মধ্যে নারী ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন। আর ঢাকা দক্ষিণে ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন ভোটার রয়েছেন। যাদের মধ্যে নারী ভোটার ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩ জন।সর্বোপরি, দুই সিটি নির্বাচনে ৩০ শতাংশের নিচে ভোট পড়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইসি সংশ্লিষ্টরা।
সকাল ৮টায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচন কমিশন অনুমোদিত যানবাহনের বাইরে যানচলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ভোটের সময় ঢাকার চিত্র পাল্টে যায়। চিরচেনা যানজট কিংবা মানুষের ভিড় ছিল না। রাস্তা ছিল পুরো ফাঁকা। এ সুযোগে রাস্তায় ব্যাট-বলে মেতে ওঠে কিশোর-তরুণরা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেছেন, এমন নির্বাচন চাইনি। বেলা ১১টার দিকে উত্তরার আইইএস স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভোট দিতে গেলে আঙুলের ছাপ মেলেনি সিইসির। পরে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে নিজের ভোট দেন তিনি।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটিতেই বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার সাদেক খান রোডে দায়িত্ব পালনকালে অনলাইন নিউজ পোর্টাল আগামী নিউজের প্রতিবেদক মোস্তাফিজুর রহমান সুমনকে কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা।
এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, এমন কোনো ঘটনা আমি এখনও জানি না। তবে ঘটনা যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্টদের ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিচ্ছি। যারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভোট শেষে ইভিএম মেশিন থেকে ভোটের ফল সংগ্রহ করে তাতে প্রার্থীদের এজেন্টদের স্বাক্ষর নিয়ে ট্যাবের মাধ্যমে অনলাইনে রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠানো হয়। পরে দুই সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করেন।
এদিকে ঢাকা উত্তরের ৫৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৩টিতে ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট ঢুকতে না দেয়া বা মারধর করে বের করে দেয়ার অভিযোগ নিয়ে ইসিতে যান বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের প্রতিনিধি জুলহাস উদ্দিন।
দুপুরে কমিশনে জমা দেয়া ওই লিখিত অভিযোগে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট ও কর্মীদের ওপর হামলা, বিএনপির ভোটারদের ভোট দিতে না দেয়া, ইভিএম হ্যাক করার মতো কথাও বলা হয়েছে। জুলহাস সাংবাদিকদের বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানো হলেও তিনি তাদের কথা শোনেননি।
ধানের শীষের প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে বলে বিএনপি যে অভিযোগ করেছে; তাকে মিথ্যাচার বলে অভিহিত করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।