ঢাকা: একুশ দিনের টানা প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ। মধ্যরাত থেকে থেমে যাবে ভোটের প্রচার। শুরু হবে জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশ। ভোটের দিনের কৌশল নির্ধারণে বসবেন প্রার্থীরা কয়েকটি হামলার ঘটনা ছাড়া তুলনামূলক জমজমাটই হয়েছে ভোটের প্রচার। তবে শেষ মুহূর্তে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি। এতোদিন বিরোধী পক্ষ নির্বাচনে বল প্রয়োগের অভিযোগ করে আসছিল ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে। এবার উল্টো অভিযোগ ক্ষমতাসীন দলের তরফেই। গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, কেন্দ্র পাহারার নামে ভোটের দিন বহিরাগতরা ঝামেলা পাকাতে পারে।
তাদেরকে ঢাকায় জড়ো করা হয়েছে। তাদের হাতে অস্ত্রশস্ত্রও আছে। ওবায়দুল কাদের কারও নাম উল্লেখ না করলেও তিনি বিরোধী পক্ষের দিকেই ইঙ্গিত করেছে। ওদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের জবাবে বলেছেন, এ্ই কাজটি আওয়ামী লীগই করছে। তারা ত্রিশ লাখ বহিরাগতকে ঢাকায় এনেছে বলে আলোচনা আছে। এদিকে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শুরু থেকেই আলোচনা ছিল। ভোটের দিন পরিবেশ কেমন থাকে, ভোটের আগের দুই দিন কি কেমন পরিস্থিতি বিরাজ করে তা পর্যবেক্ষণ করেই ভোটাররা কেন্দ্রে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের বিষয়টিও সাধারণ মানুষের মাঝে নানামুখি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে নাশকতা হতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন খোদ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নির্বাচনের দিন অস্ত্রধারীরা প্রভাব বিস্তার করবে এমন তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। প্রার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ঢাকায় এনে পেশী শক্তির জানান দিচ্ছে। বেশ কয়েকজন প্রার্থীর মিছিলে বহিরাগতদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। এমন অবস্থায় আগাম সতর্কতা হিসেবে গত রাত থেকেই শুরু হয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ অভিযান। নির্বাচনের উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিগোষ্ঠী অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে এমন তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা ও থানা পুলিশের সদস্যরা তৎপর হয়েছেন। তারা এখন মহল্লায় গিয়ে বহিরাগত কেউ অবস্থান করছেন কিনা সেদিকে খেয়াল রাখছেন।
আজ থেকে হোটেল মোটেলে অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া কাউকে অবস্থান করতে দেয়া হবে না। পুরাতন বর্ডার ছাড়া নতুন কোনো বর্ডারকে সিট না দিতে হোটেল মালিকদের মৌখিক নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে বিদেশ যাত্রী বা রোগীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখানো সাপেক্ষ থাকতে দেয়া হবে। ছাত্রাবাস ও মেসগুলোতে অভিযান চালাবে পুলিশ। এই সময়ে পুরাতন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ মামলার আসামিদের আটক করা হতে পারে। ভোটের দিন তারা যাতে মাঠে না থাকেন সেজন্য ভয়ভীতি দেখানো হবে।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ি সিটি নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্রের বিপুল মজুদ রয়েছে। অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হলেও অনেক অস্ত্র কার হাতে আছে সেটিও শনাক্ত করা যায়নি। মজুত থাকা অস্ত্রের মধ্যে ভারী অস্ত্রও রয়েছে। গত সপ্তাহে আটক এক অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছেন নির্বাচনকে ঘিরে সীমান্ত এলাকা থেকে অনেক অস্ত্র ঢাকায় প্রবেশ করেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা ভোটের মাঠ যখন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে না ঠিক তখনই এসব অস্ত্রের ব্যবহার হতে পারে। এজন্য ব্যবহার করা হতে পারে ঢাকার বাইরের ক্যাডার বাহিনীকে। সূত্র জানিয়েছে, ভোটের মাঠে এবার চতুর্মুখী লড়াই হবে। বিশেষ করে কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছড়াছড়ি। কেউই নিজের অবস্থানকে ছাড়তে রাজি নন। দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে অনেক সমঝোতা বৈঠক হয়েছে।
বিরোধী প্রার্থীদের মাঠ ছেড়ে দেয়ার জন্য বিপুল অর্থ দেয়ারও প্রস্তাব এসেছে। তবে আশানুরূপ কোনো ফল পাওয়া যায়নি। তাই ভোটের মাঠে থেকেই লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অনেক প্রার্থী। অনেকেই শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও মাঠ ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক প্রার্থী প্রভাব বিস্তারে পুলিশকে ম্যানেইজড করার চেষ্টা করছেন। আর পুলিশও সরকার দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করে বিতর্কিত হচ্ছেন। গোয়েন্দা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন থানার ওসির বিতর্কিত অবস্থানের তথ্য পেয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচনী উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এলাকা ভিত্তিক সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী, সম্ভাব্য অস্ত্র ব্যবহারকারীদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, আমরা সারা দেশের অস্ত্র ব্যবসায়ীদের নজরদারিতে রেখেছি। এছাড়া প্রার্থীরা যাতে প্রভাব বিস্তারের জন্য বহিরাগত বা কোনো দাগি সন্ত্রাসীকে ব্যবহার করতে না পারে সেই লক্ষ্যই কাজ করছেন গোয়েন্দারা। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় মানবজমিনকে বলেন, ভোটের মাঠে যেকোনো ধরনের নাশকতা ও সহিংসতা ঠেকাতে তৎপর থাকবে পুলিশ। আমরা বেশ কিছু কেন্দ্রকে ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত করেছি। যেসব কেন্দ্রে এর আগের নির্বাচনগুলোতে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিলো, এসব কেন্দ্রে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। নাশকতা বা ঝামেলার সৃষ্টি করতে পারে সন্দেহভাজন এরকম অনেকের ওপর আমাদের নজরদারি আছে। বহিরাগত কেউ যাতে ভোটের মাঠে অবস্থান করতে না পেরে সেদিকে খেয়াল রাখছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে আজ আওয়ামী লীগের সমাবেশ ঘিরেও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করে রাজধানীতে র্যালি বের করার কথা বলা হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। ভোটের একদিন আগে এই ধরণের সমাবেশ নিয়ে আপত্তি তুলেছে বিএনপি। তারা বলছে, ভোটের আগে এ ধরণের সমাবেশ করা আইনসঙ্গত নয়। যদিও বিএনপির এ অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন বলেছে, সমাবেশে আপত্তি নেই। তবে সমাবেশ থেকে ভোট চাওয়া যাবে না।
বিএনপি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে-১৪ দল: ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মূল লক্ষ্য জয়লাভ নয়। দুইটা ইস্যুকে প্রতিষ্ঠা করাই তাদের মূল লক্ষ্য। একটি হলো নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করা এবং অপরটি হলো আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। গতকাল বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে ক্ষমতাসীন ১৪ দল এই অভিযোগ করে। বৈঠক শেষে ১৪ দলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। দিলীপ বড়ুয়া বলেন, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তারা (বিএনপি) একটা নিম্নচাপ সৃষ্টি করতে চায়। নিম্নচাপ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তারা রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। তার দাবি, আগামী পয়লা ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব অবাক হয়ে লক্ষ করবে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের অধীনে এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন হবে। কারও পক্ষে যেন কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব না হয়, সেজন্য প্রাক-ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বলেও জানান দিলীপ বড়ুয়া। তিনি বলেন, ১লা ফেব্রুয়ারি বিকাল থেকে বিভিন্ন রকম মত প্রচার করতে পারে। ১লা ফেব্রুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও বিভিন্ন রকম অঘটন ঘটাতে পারে। এ জন্য তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে বহিরাগতদের নিয়ে এসেছে। তাদের মুল কাজ হচ্ছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা।
আপনারা দেখে-শুনে ভোট দেবেন: আতিক
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আসন্ন ১লা ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে আপনারা কাকে ভোট দিলে এই নগরীর উন্নয়ন হবে, ভোট দেয়ার আগে চিন্তা করবেন। আপনারা দেখে-শুনে ভোট দেবেন। কে আপনাদের আধুনিক ঢাকা উপহার দিতে পারবে, আপনারা তাকেই ভোট দেবেন।
বুধবার গুলশান ও মহাখালী ওয়ারলেস গেট এলাকায় গণসংযোগ-পথসভায় তিনি এ কথা বলেন। আতিক বলেন ‘আমি গত নয় মাস একটি কঠিন অনুশীলন করেছি। সেই অতীত অনুশীলনের অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদের আধুনিক ঢাকা উপহার দেবো। নৌকা দিয়েছে স্বাধীনতা, নৌকা দিয়েছে লাল-সবুজের পতাকা। ১লা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনকে সামনে রেখে অনুরোধ করবো, আপনারা আবার নৌকাকে বিজয়ী করে একটি আধুনিক ঢাকা গড়ার সুযোগ করে দিন। আপনাদের ভোটে আমি মেয়র নির্বাচিত হলে কথা দিতে চাই, একটি আধুনিক, সচল, গতিময় ঢাকা উপহার দিতে সর্বাত্মক কাজ করবো।’
ধানের শীষের বিজয় কেউ আটকে রাখতে পারবে না : ইশরাক
কোন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের শীষের বিজয় কেউ আটকে রাখতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার রাজধানীর সীমানা পেরিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এ জোয়ার ঠেকানোর সাধ্য কারো নেই। গতকাল রাজধানীর বংশালে যুবদল অফিসের সামনে থেকে গণসংযোগ ও প্রচারণা শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, দলের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল বক্তব্য রাখেন। ইশরাক হোসেন বলেন, নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর থেকে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আমরা আজকে এ পর্যন্ত এসেছি। ধানের শীষে ভোট দেয়ার পক্ষে, গণতন্ত্রের মুক্তির পক্ষে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এটি শুধু ঢাকা নয়- এই গণজোয়ারের ছায়া আমরা পুরো দেশেই দেখতে পাচ্ছি। গত ১৩ বছর এদেশকে বৃহৎ এক কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। তাই মানুষ এখন শুধু মুক্তির অপেক্ষায়।
নগরবাসির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভোটের আর মাত্র তিন দিন বাকি। মা-বাবা, ভাই-বোন যারা ভোটার আছেন তাদের সকলের প্রতি আবেদন, সবাই নির্ভয়ে আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারী ভোট কেন্দ্রে যাবেন। আমাদের দল আপনাদের পাশে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাবে। আমাদের জীবন দিয়ে হলেও আমরা আপনাদের সুরক্ষা দেব ইনশাআল্লাহ।
ইশরাক বলেন, আপনারা কোন ভয় পাবেন না। কোন বাঁধা বিপত্তি মানবেন না। এই দেশের মালিক জনগণ, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিল- জনগন রাষ্ট্র পরিচালানা করবে, জনগণ দেশ পরিচালনা করবে। সেই অধিকার আমাদের থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। অধিকার ফিরিয়ে আনতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
গতকালের প্রচারণা পর্যায়ক্রমে সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, ওয়ারী, কোতয়ালী ও বংশাল থানাধীন তাঁতী বাজার মোড়, রায়সাহেব বাজার মোড়, ধোলাইখাল রোড, খোকা মাঠ, নতুন রাস্তা, কাঠেরপুল, লোহারপুল, সুত্রাপুর থানা, একরামপুরের মোড়, লক্ষীবাজার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জনসন রোড হয়ে রায়সাহেব বাজার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
নির্ভয়ে ভোট দিতে বললেন তাবিথ
ভোটারদের নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, ঢাকা উত্তর সিটিতে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। যেকোনো অবস্থায় প্রস্তুত থাকতেও বলেছেন তিনি। গতকাল সকালে দিনের শুরুতে উত্তরের ১৮নং ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারণার সময় এ কথা বলেন তাবিথ। তিনি বলেন, আজ বৃষ্টি ও প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও আমি ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি, তাদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। ভোটাররা বৃষ্টি ও শীত উপেক্ষা করে আমার কথা শুনছেন, আমাকে আশ্বস্ত করছেন। তাবিথ আউয়াল বলেন, নির্বাচন কমিশন ভালোভাবেই জানে যে, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ করতে গেলে কি কি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়। তাই সব পরিস্থিতিতে যেন ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে তা কমিশনকেই নিশ্চিত করতে হবে। এ সময় ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সকল অবস্থায় আপনারা প্রস্তুত থাকবেন। নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন। কোনো ভয়ের কিছু নেই। আপনারা ধানের শীষে ভোট দেবেন, আপনাদের অধিকার চর্চা করবেন। নাগরিক দায়িত্ব পালন করবেন। তাবিথ আরো বলেন, যেভাবে ভোটারদের মধ্যে সাড়া পাচ্ছি তাতে ধানের শীষের বিজয় ঠেকানো যাবে না। বিজয়ী হওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। আমরা ভোট কেন্দ্রে যাবো, আমাদের পোলিং এজেন্টরা যাবেন, প্রার্থীরা যাবেন। ভোটের পরিবেশ নির্বাচন কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে।
সকালে বারিধারা ডিওএইচএস দক্ষিণ গেইট (ইউনাইটেড হাসপাতালের পাশে), কালাচাঁদপুর নর্দ্দা এলাকায় গণসংযোগ করেন তাবিথ আউয়াল। এসময় বৃষ্টি ও প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে তার কর্মী সমর্থকরা এসে যোগ দেন। এছাড়া ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী শরিফ উদ্দীন জুয়েলসহ (ব্যাডমিন্টন মার্কা) নেতাকর্মীরা সঙ্গে ছিলেন। এরপর ১২টার দিকে শাহাজাদপুর বাসস্ট্যান্ডে গণসংযোগ করেন তাবিথ। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মনোনীত এই মেয়রপ্রার্থী বলেন, হামলা মামলার পরও আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আছি। আপনারা সরকারকে প্রশ্ন করেন, হামলা-মামলা করে সরকার আমাদেরকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিতে চাইছে। শাহজাদপুরের পর তাবিথ আউয়াল কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে খিলবাড়িটেক, বাঁশতলা, নুরের চালা, ভাটারা, সোলমাইদ, সাঈদনগর, একশ ফিট রোডসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ধানের শীষে ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেন। গণসংযোগে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ছিলেন ১৮ নং ওয়ার্ডে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবীবুর রহমান হাবীব, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল হক, নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ঐক্যফ্রন্টের দপ্তর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ। এদিকে, দুপুরে প্রথম ধাপের গণসংযোগ শেষে তাবিথ বিকাল সাড়ে চারটার দিকে রাজধানীর গুলশান-১ ডিএনসিসি মার্কেট এলাকায় প্রচারণা চালান। পরে সন্ধ্যার দিকে মহাখালী কাঁচা বাজার এলাকায়ও গণসংযোগ করেন বিএনপি মনোনীত এ প্রার্থী।
অর্ধেকের বেশি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ
ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই সিটির ২ হাজার ৪৬৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ৫৯৭ টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ন (গুরুত্বপূর্ন)। এরমধ্যে দক্ষিণে ১ হাজার ১৫০ টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭২১ টি ও উত্তর সিটিতে ১ হাজার ৩১৮টি কেন্দ্রে মধ্যে ৮৭৬ টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন। মূলতঃ কেন্দ্রের অবস্থান, বহিরাগতদের আনোগোনা, স্থানীয় প্রভাব ও এলাকার পরিস্থিতিসহ সবকিছু বিবেচনা করে এসব কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে আইন শৃংঙ্খলা বাহিনী। এর আগে ২২শে জানুয়ারি আইন শৃঙ্খলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন। দুই সিটির রিটার্নিং অফিস সূত্রে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ১ হাজার ৩১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮৭৬টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) বাকি ৪৪২টি কেন্দ্র সাধারণ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এদিকে, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১ হাজার ১৫০টি কেন্দ্রের মধ্যেগুরুত্বপূর্ণ ও ৪২৯ টিকে সাধারণ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন আর সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে ১৬ জন আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়ন থাকবে। ইসির তথ্য অনুযায়ী উত্তর সিটিতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রামপুরা থানার ৪৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ। মোহাম্মদপুর থানার ৭২টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ, শেরেবাংলার ৪৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৭টি ঝুঁকিপূর্ণ, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে ৩৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৪টি ঝুঁকিপূর্ণ, আদাবর থানার ৪২টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১টি ঝুঁকিপূর্ণ, তেজগাঁও থানার ৪০টি কেন্দ্রের ৪০টি ঝুঁকিপূর্ণ, হাতিরঝিলের ৬৭টি কেন্দ্রের ২৩টি ঝুঁকিপূর্ণ। মিরপুরের ১২৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ১২১টি ঝুঁকিপূর্ণ, পল্লবীর ১৪৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৮টি ঝুঁকিপূর্ণ, কাফরুলের ৯০টি কেন্দ্রের সবগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ, শ্যামলীর ৪১টি কেন্দ্রের মধ্যে ২২টি ঝুঁকিপূর্ণ, দারুসসালামের ৫৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৩টি ঝুঁকিপূর্ণ, রূপনগরের ৪২টি কেন্দ্রের মধ্যে ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ। গুলশানের ২৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ২১টি ঝুঁকিপূর্ণ, বনানীর ৪৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪২টি ঝুঁকিপূর্ণ, বাড্ডার ৮৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৮টি ঝুঁকিপূর্ণ, ভাটারার ৬৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬০টি ঝুঁকিপূর্ণ, খিলক্ষেতের ২৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১টি ঝুঁকিপূর্ণ, ক্যান্টমেন্টের ১২টি কেন্দ্রের মধ্যে ২টি ঝুঁকিপূর্ণ। উত্তর-পূর্ব থানার ১০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, উত্তর-পশ্চিম থানার ২৬টি কেন্দ্রের সবগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ, বিমানবন্দর থানার ১০টি কেন্দ্রের সবগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ, তুরাগ থানার ৩৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১২টি ঝুঁকিপূর্ণ, দক্ষিণখান থানার ৬২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬০টি ঝুঁকিপূর্ণ ও উত্তরখান থানার ২৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯টি ঝুঁকিপূর্ণ।
দক্ষিণ সিটিতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রেগুলোর মধ্যে রয়েছে, হাজারিবাগ এলাকার ৭২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৪টি ঝুঁকিপূর্ণ,খিলগাঁওয়ে ৮৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭৭ টি,মুকদা ৪৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৭ টি,কদমতলি, ১০৮ টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬৯ টি, সবুজবাগ ৫৪ টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৪যাত্রাবাড়ি ১২৬ কেন্দ্রের মধ্যে ৭৮ টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানা যায়।
ঢাকার দুই সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৯ জন। নতুন ইউনিয়নসহ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ জন ও মহিলা ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন। এই সিটিতে মোট সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪ টি,সংরক্ষিত, ১৮ টি। মোট ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১৩ হাজার ১৮টি, ভোটকক্ষ ৭ হাজার ৮৪৬ টি। দক্ষিণ সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ জন ও মহিলা ১১ লাখ ৬৯ হাজার ৭৫৩ জন। এই সিটিতে মোট সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫টি। মোট ভোট কেন্দ্র ১ হাজার ১৫০টি ও ভোট কক্ষ ৬ হাজার ৫৮৮টি।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল গ্রহণ ও পরিবেশন কেন্দ্র এবং কন্ট্রোল কক্ষ হিসেবে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হবে। এ লক্ষ্যে গতকাল র্যাব-২ এর অধিনায়ক বরাবর চিঠি দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম।
এবিষয়ে উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেম মানবজমিনকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে করা হয়েছে। আইন শৃংঙ্খলা বাহিনী এই তালিকাটি আমাদের দিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ২জন বেশি করে পুলিশ সদস্য রাখা হয়েছে। সাধারণ ওয়ার্ডে ১৬জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ১৮ জন আইন শৃংঙ্খলা বাহিনির সদস্য মোতায়ন থাকবে।