করোনা ভাইরাস সারা দেশে আইসোলেশন ইউনিট খোলার নির্দেশ

Slider জাতীয় ফুলজান বিবির বাংলা


চীনে শনাক্ত হওয়া নতুন নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সারা দেশের সরকারি হাসপাতালে অনতিবিলম্বে আইসোলেশন ইউনিট খোলার নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আপাতত; দেশের আটটি বিভাগের সকল জেলাসদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ইউনিট খোলা হবে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনদের সঙ্গে করোনা ভাইরাস নিয়ে ভিডিও কনফারেন্স চলাকালে এ নির্দেশনা দেন।

একইসঙ্গে দেশের সকল স্থল ও নৌবন্দরে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, এখনও পর্যন্ত দেশে নোবেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া না গেলেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরে স্ক্যানার মেশিন দিয়ে চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীদের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এর আগে রোববার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে জেলাসদর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৃথক আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি দেশের ২৪টি স্থল ও নৌবন্দরে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয় এবং তা চিঠি দিয়ে বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনদের জানিয়ে দেয়া হয়।

অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। বিভিন্ন স্থলবন্দরে আপাতত বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদেও হেলথ কার্ডের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মেপে মনিটরিং করা হবে।
গতকাল পর্যন্ত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্ক্যানার মেশিন ও হ্যান্ড স্ক্যানিং মেশিনের মাধ্যমে দুই হাজার ৪৭০ জন যাত্রীর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় বলে বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছেন। তবে এখনও পর্যন্ত দেশে কোনো করোনা ভাইরাস রোগী পাওয়া যায়নি বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছেন।
চীনে নতুন করোনা ভাইরাসের কারণে দেশিটিতে ভ্রমণে বাংলাদেশিদের নিরুৎসাহিত করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিরবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। একারণে আজ ২৮শে জানুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে চীনে ও চীন থেকে বাংলাদেশে সকল ধরণের ভ্রমণ সাময়িকভাবে স্থগিত করার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। গত রোববার স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার একটি আলাদা বিবৃতিতে দেশবাসীকে কোনো রকম আতংকিত না হতে অনুরোধ করেছেন এবং করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় সম্ভাব্য সব ধরণের প্রস্তুতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় হাতে নিয়ে রেখেছে বলে জানিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা জানান, হেলথ কার্ডের মাধ্যমে আগত যাত্রীদের তথ্য-উপাত্ত রাখা হচ্ছে। কোনো যাত্রী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তার এ রোগের উপসর্গ দেখা নাও দিতে পারে। দুই থেকে ১৪ দিনের মধ্যে রোগ দেখা দিতে পারে। এ কারণে যাত্রীদের বলা হচ্ছে, এ সময়ের মধ্যে যদি কেউ অসুস্থতা অনুভব করে তাহলে যেন আইইডিসিআরে যোগাযোগ করে। গত ৩১শে ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলের উহান শহরে প্রথমবারের মতো প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। এরপর এই ভাইরাস চীনের বিভিন্ন শহরের পাশাপাশি ইতিমধ্যে বিশ্বের এক ডজনের বেশি দেশে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। চীনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে ৮০ জন প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া আরো দুই হাজার ৭৪৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *