করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ চীন ছাড়তে ৫০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর আবেদন

Slider জাতীয় ফুলজান বিবির বাংলা


করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রাণকেন্দ্র চীনের উহান শহরে আটকা পড়া প্রায় ৫০০ বাংলাদেশি দেশে ফিরতে চায়। এ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর করা এক আবেদনে বেইজিংস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কারও সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে দ্রুত তাদের উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। উহানের হুবাই ইউনিভার্সিটির অ্যাগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থী আসিফ আহমেদ সৌরভ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের বরাবর ওই আবেদন করেছেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, তারা ঘরের বাইরে যেতে পারছেন না প্রায় এক সপ্তাহে ধরে। দোকান-পাট বন্ধ থাকায় খাওয়া-দাওয়াতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। ঘরে থাকা খাবারও ফুরিয়ে আসছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে। শিক্ষার্থী, গবেষকসহ উহানে ৫০০ বাংলাদেশি রয়েছেন উল্লেখ করে সৌরভ লিখেন, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তারা জীবন নিয়ে শংকিত।

কী করবেন সেটি ভেবে পাচ্ছেন না। সবার প্রতি প্রার্থনার অনুরোধ জানিয়ে ওই শিক্ষার্থী লিখেন-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশ দূতাবাসের কেউ তাদের সঙ্গে তখনও যোগাযোগ করেনি। যদিও ঢাকার তরফে গত রাতে দূতাবাসে হটলাইন চালুসহ চালু এবং আতংকিতদের নির্ভয় দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে। উহানের শিক্ষার্থী তার আবেদনে লিখেন স্থায়ী কর্তৃপক্ষ তাদের কোন সমাধান দিতে পারছে না। ফলে তাদের বাংলাদেশ সরকারের বড় সমর্থন- সহায়তা দরকার। আবেদনে আশা করা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এব্যাপারে জরুরি প্রদক্ষেপ নেবেন।

ফেসবুকে উদ্ধারের আকুতি: এদিকে বিভিন্ন ডরমেটরি ও আবাসনে অবস্থানকারী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। ওই শহর থেকে বহির্গামী সব বাস- ট্রেন এবং বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশি প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীর জন্য সাহায্যের আবেদন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেন রকিবুল তূর্য্য নামের এক শিক্ষার্থী। এতে তিনি লিখেন, ‘সম্প্রতি চায়নাতে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত শহর উহানে আমি বাস করছি। এখানে আমরা প্রায় ৫০০ জনেরও অধিক বাংলাদেশী উহানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচজডিও প্রোগ্রামে অধ্যায়নরত। উহান থেকে বহির্গামী সব বাস-ট্রেন এবং বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ২৫ জন মারা গেছে এবং ৬০০-এরও বেশি মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছে। আমরা চাইলেও এখন নিজ দেশে ফিরে যেতে পারছি না। বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আমাদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে এমন নিউজ বাংলাদেশের মিডিয়াতে প্রচার করা হলেও এ খবর ভিত্তিহীন। আমাদের এখন পর্যন্ত কোন প্রকার কোনো খোঁজ নেয়া হয়নি। আমরা সবাই এক কঠিন মুহূর্ত পার করছি। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের সবাইকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করেন।’

উল্লেখ্য, এক কোটি ১০ লাখ মানুষের উহান শহর কার্যত অচল। সব যাত্রীবাহী ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে বিমানবন্দরে। শহরের সব প্রধান সড়কের চেকপয়েন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। উহান শহরের কাছে আরো কমপক্ষে ১০টি শহরে একই রকম অচলাবস্থা আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ।

অ্যাম্বাসিতে হট লাইন খোলা হয়েছে: ওদিকে চীনে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে বেইজিংয়ের বাংলাদেশ অ্যাম্বাসিতে হটলাইন খোলা হয়েছে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। তার ভেরিফাইড ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে প্রতিমন্ত্রী লিখেন, বেইজিং এ আমাদের অ্যাম্বাসিতে হটলাইন খোলা হয়েছে (৮৬)-১৭৮০১১১৬০০৫। আমাদের কর্মকর্তা খায়রুল বাসার এবং আসিফ বাংলাদেশিদের করা ২৪৫ সদস্যের ডব ঈযধঃ গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। বিশেষ করে ডঁযধহ শহরে সরকার কাউকেই বাসা থেকে বের হতে দিচ্ছে না, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে। বিচলিত না হয়ে সরকারি নির্দেশ মেনে চলার জন্য সবাইকে বলা হয়েছে।
করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৪১, বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ: চীনের করোনা ভাইরাস নিয়ে এখন বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ। একদিনের মধ্যে সেখানে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ২৬ থেকে বেড়ে গতকাল শনিবার এসে দাঁড়িয়েছে ৪১ জনে। মারা গেছেন একজন ডাক্তারও। তিনি উহান শহরে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। এ খবর দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, বিশ্বজুড়ে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১৩০০। বিশ্বজুড়ে যাতে এই মহামারি ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য সতর্কতা অবলম্বন করছে স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্তৃপক্ষ। উহান শহরে হুবেই সিনহুয়া হাসপাতালে প্রথম এই ভাইরাস ধরা পড়ে। সেখানে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিচ্ছিলেন ডাক্তার রিয়াং উডং (৬২)। চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এক টুইটে বলেছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন।

যে ৪১ জন মারা যাওয়ার কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে এই চিকিৎসক অন্তর্ভুক্ত কিনা তা স্পষ্ট নয়। রিপোর্টে বলা হয়েছে, মৃত ৪১ জনের মধ্যে ৩৯ জনই হুবেই প্রদেশের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের। শনিবার ন্যাশনাল হেলথ কমিশন বলেছে, এই ভাইরাসে চীনে আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৮৭। এরই মধ্যে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, নেপাল, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায়।

শনিবার প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। বলা হয়েছে, সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ৫০-এর কোটায় পা রাখা এক চীনা নাগরিক। তিনি ছিলেন চীনের উহানে। সেখান থেকে ১৯শে জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়া গিয়েছেন। মেলবোর্ন হাসপাতালে তার অবস্থা স্থিতিশীল। সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান মেডিকেল অফিসার ব্রেন্ডন মারফি বলেছেন, চীনের বাইরে যে পরিমাণ এই ভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে এবং উহান শহর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যে পরিমাণ মানুষ যান, তাতে আরো আক্রান্ত পাওয়া যেতে পারে। শনিবারই প্রথম একজনের দেহে এই ভাইরাস পাওয়া গেল। তবে প্রতিদিন অনেকের পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাতে নেতিবাচক ফল আসছে।
শুক্রবার রাতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের খবর আসে ইউরোপের প্রথম দেশ ফ্রান্স থেকে। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বলেছে, তারা পরীক্ষাধীন রেখেছে ৬৩ জন রোগীকে। তার মধ্যে দু’জনের দেহে এই ভাইরাস নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা চীনের উহান সফরে গিয়েছিলেন। এই ভাইরাস মানুষের দেহ থেকে মানুষের দেহে সংক্রমিত হওয়ার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় এ সপ্তাহে করোনা ভাইরাস নিয়ে চীনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে একে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদ্বেগ হিসেবে ঘোষণা করেনি তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *