করোনা ভাইরাসে মৃত্যু বেড়ে ২৬

Slider জাতীয় বাংলার মুখোমুখি সারাবিশ্ব


ঢাকা: চীন থেকে বিশ্বের কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়া নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। ইতিমধ্যে এতে আক্রান্ত হয়ে নিহত হয়েছে ২৬ জন। এখন পর্যন্ত এতে আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ৮০০ জন। চীনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। তাই বাংলাদেশ ঝুঁকিমুক্ত নয়। এখন পর্যন্ত চীন থেকে আসা দুজন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হলেও তাদের মধ্যে এ ভাইরাস পাওয়া যায়নি। তারা ইনফ্লুয়েঞ্জা বি ভাইরাসে আক্রান্ত। এখন পর্যন্ত থাইল্যান্ড, সৌদি আরব, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, জাপান, তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাসকে চীনের জন্য জরুরি ঘোষণা করেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পানা ও উন্নয়ন) এবং সিডিসি’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, কিছু ভাইরাস মানুষ ছাড়া অন্যান্য পশু-পাখির মধ্যে সংক্রমিত হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এটি এ রকমই একটি ভাইরাস। এই ভাইরাসের উপস্থিতি সর্বপ্রথম পরিলক্ষিত হয় ২০১৯ সালের ৮ই ডিসেম্বর।

এরপর ৩১শে ডিসেম্বর এই ভাইরাসটিকে চিহ্নিত করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরীক্ষা করে দেখেছে, যারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের সবাই অন্য কোনো শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত ছিলেন। অধ্যাপক ডা. সানিয়া বলেন, যেহেতু চীনের সঙ্গে আমাদের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে এবং বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ী ও পর্যটক ভ্রমণ করতে যায়, তাই এক্ষেত্রে কিছুটা ঝুঁকি রয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি নিউমোনিয়া হবে। সর্বশেষে কিডনি ফেইলিওরের মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করে। দেশের বিভিন্ন স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরগুলোতে ইমিগ্রেশন ও আইএইচআর স্বাস্থ্য ডেস্কগুলোতে সতর্কতা ও রোগের সার্ভেইল্যান্স জোরদার করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন প্রবেশপথে নতুন করোনা ভাইরাস স্ক্রিনিং কার্যক্রম চালু হয়েছে। নতুন ভাইরাস সম্পর্কে ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইসস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরো জানান, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও পর্যটকদের নিয়মিত যাতায়াত থাকায় নোবেল করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি রয়েছে। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। তিনি জানান, দেশে কোনো রোগী পাওয়া গেলে তাদের আলাদা করে রেখে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারি কুর্মিটোলা হাসপাতালে পৃথক ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য রি-এজেন্টও আছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নমুনা পরীক্ষার ফল পাওয়া যাবে। এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত বুধবার রাজধানীর গ্রীনরোড এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগ জ্বুর নিয়ে আসেন দুই রোগী। তারা উভয়ই সম্প্রতি চীন ভ্রমণ করেছেন। তাদের সম্পর্কে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অবহিত করে। এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদের রাগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইসস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
জানা যায়, করোনা ভাইরাস মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। এছাড়াও অনেক ধরনের করোনা ভাইরাস উটসহ বিভিন্ন পশু, বিড়াল ও বাদুরের মধ্যে দেখা যায়। চীনের উহান শহরের শনাক্তকৃত বেশির ভাগ রোগী শহরের সামদ্রিক খাবার ও পশুর বাজার হতে আক্রান্ত হয়েছেন। পরবর্তীকালে সাংহাই, বেইজিং ও অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে পড়েছে।

চীনের উহান শহরের একটি মাছের বাজার থেকে এ ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। নিউমোনিয়া-সদৃশ এ ভাইরাসটি নতুন এক ধরনের করোনা ভাইরাস। নোবেল করোনা ভাইরাস, উহান করোনা ভাইরাস, উহান ফ্লু, উহান সি ফুড মার্কেট নিউমোনিয়া ভাইরাস ও উহান নিউমোনিয়া নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়েছে ভাইরাসটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে বলছে 2019-nCoV ।

সভায় ১০ শহর অবরুদ্ধ করলো চীন: রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে বড় ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে চীন। ইতিমধ্যে এর আক্রমণে নিহত হয়েছেন ২৬ জন। এছাড়া এখন পর্যন্ত এতে আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ৮০০ মানুষ। বিস্তার রোধে ১০টি শহরের গণপরিবহন বাতিল করেছে চীন। বন্ধ করে দিয়েছে মন্দিরগুলো। এমনকি বিখ্যাত গ্রেট ওয়ালের একাংশও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার থেকে সপ্তাহব্যাপী ছুটি শুরু হয়েছে চীনে। ফলে দেশটির কয়েক মিলিয়ন মানুষ এখন শহর থেকে গ্রামে ছুটে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে এর মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে করোনা ভাইরাস। যদিও ঝুকিপূর্ন ১০ শহর থেকে কাউকে ঢুকতে বেরুতে দেয়া হচ্ছে না। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাসকে চীনের জন্য ইমার্জেন্সি ঘোষণা করেছে। তবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এটিকে ঝুঁকি হিসেবে এখনি ঘোষণার সময় আসেনি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। যদিও এখন পর্যন্ত যত নিহতের ঘটনা ঘটেছে সব চীনেই তারপরেও চীনের বাইরেও এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত থাইল্যান্ড, সৌদি আরব, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, জাপান, তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *