ঢাকা: ঢাকার দুই সিটির অন্তত ৫০টি ভোটকেন্দ্র নিয়ে চিন্তিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, পরিবেশ এবং স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির রেকর্ড থেকে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব কেন্দ্র ঘিরে বিশেষ ছক কষছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আগে থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে গোয়েন্দা তথ্য । এসব কেন্দ্রে নির্বাচনের দিন থাকবে বিশেষ নজরদারি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি এসব কেন্দ্রে ঊর্ধতন কর্মকর্তারাও নজর রাখবেন।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখে ঝুঁকিপূর্ণ ৫০টি কেন্দ্রের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৩টি আর দক্ষিণ সিটিতে রয়েছে ২৭টি কেন্দ্র। কেন্দ্রগুলোর ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকা, সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাসিনো ও দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের প্রভাব, দলীয় মনোনায়ন না পাওয়া প্রার্থীদের ক্ষোভ, বিরোধী দলের শক্ত প্রার্থী থাকা ও এলাকাগুলো ক্রাইম জোন হওয়ার কারণে কেন্দ্রগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ধরে নেয়া হয়েছে।
এসব ভোট কেন্দ্রের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আগাম সতর্কতা হিসেবে সংশ্লিষ্ট থানা ও পুলিশ ফাঁড়িগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ভোট কেন্দ্রগুলো ও আশপাশের এলাকায় থানা পুলিশের মোবাইল পার্টি, পিকেট পার্টি, হাঁটা পার্টি, গাড়ি টহল পার্টিকে বেশি সক্রিয় হতে বলা হয়েছে। বিট পুলিশিংকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ভোট কেন্দ্রের আশপাশে বসাতে বলা হয়েছে চেকপোস্ট। এছাড়াও ভোটের কয়েকদিন আগে থেকে ভোট কেন্দ্রের আশপাশের এলাকাগুলোতে দৃর্বৃত্তদের দমনের জন্য বাসা বাড়িগুলোতে রেইড দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ঢাকা সিটি নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা এমন তথ্য জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন মানবজমিনকে জানান, ‘আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখা ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পুলিশ সর্বদা সতর্ক। জননিরাপত্তা বিধানে পুলিশ শক্ত ভূমিকা পালন করবে। কোন ধরনের বিশৃঙ্খলাকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৩১৮ আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ১৫০টি। নির্বাচনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়াও আগের দায়িত্ব পালন করা কাউন্সিলর যারা দলের মনোনায়ন পাননি তারাও ভোটে দাঁড়িয়েছে। কোন প্রার্থী না দাঁড়িয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে ভোটের মাঠে জোড় চেষ্টা চালাচ্ছেন। এতে ওই ভোট কেন্দ্রের এলাকাগুলোতে দলাদলির প্রভাবে সংঘর্ষের আশংঙ্কা রয়েছে।
সূত্র জানায়, ভোট কেন্দ্রগুলোকে নিয়ে শঙ্কার অন্যতম কারণ হচ্ছে, ওই সব এলাকায় কিছুদিন আগে ক্যাসিনো ও দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে। এতে অবৈধ উপায়ে যারা অর্থ আয় করেছেন তারা অনেকটা দৌঁড়ের ওপর আছেন। তাদের পক্ষের এবং বিপক্ষের লোকজনের তৎপরতা সক্রিয় আছে এলাকায়। সূত্র জানায়, চিহ্নিত ভোট কেন্দ্রগুলোর আশপাশের এলাকা ক্রাইম জোন নামে পরিচিত। এলাকাগুলোতে সিরিয়াল মার্ডার, ছিনতাই, চুরি, ভূমি দখল, ডিস ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব, বালু মহল নিয়ে কারবার, মাদক ব্যবসার দৌরাত্ম, দল ও ব্যক্তি পর্যায়ে আন্তঃকোন্দল রয়েছে। এছাড়াও ভোট কেন্দ্রগুলোর আশপাশে ছিন্নমূল ও বস্তির লোকজনের আনাগোনা বেশি।
ঢাকা উত্তর সিটির ২৩টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হচ্ছে, বাড্ডা প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাড্ডা হাই স্কুল, তেজগাঁও কলেজ, আইডিয়াল কলেজ সেন্টাল রোড, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা কমার্স কলেজ মিরপুর, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, আল হেরা কলেজ মোহাম্মদপুর, বাড্ডা কলেজ, নিকুঞ্জ মডেল কলেজ খিলক্ষেত, পল্লবী কলেজ, রামপুরা একরামুন্নেছা ডিগ্রি কলেজ, লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, শের-ই-বাংলা আদর্শ মহিলা কলেজ, মণিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজ, তেজগাঁও মহিলা কলেজ, উত্তরা মডেল টাউন স্কুল, নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজ শুক্রাবাদ, পল্লবী কলেজ, কল্যাণপুর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ, উত্তরার ঢাকা ওমেন কলেজ ও মকবুল হোসাইন কলেজ।
দক্ষিণ সিটির ২৭ টি ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্র হচ্ছে, খিলগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়, আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ মতিঝিল, নটরডেম কলেজ মতিঝিল, ঢাকা সিটি কলেজ রোড ধানমন্ডি, সলিমুল্লাহ ডিগ্রি কলেজ ওয়ারী, সিদ্ধেশ্বরী ডিগ্রি কলেজ মগবাজার, মতিঝিল মডেল হাই স্কুল এন্ড কলেজ, আবুজর গিফারি ইউনিভার্সিটি কলেজ, মালিবাগ অগ্রণী স্কুল এন্ড কলেজ, আরামবাগ গার্লস হাই স্কুল এন্ড কলেজ, শহীদুল্লাহ কলেজ বকশীবাজার, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ, পুরানা পল্টন গার্লস কলেজ, আর কে চৌধুরী কলেজ সায়েদাবাদ, দনিয়া কলেজ ডেমরা, ঢাকা সিটি ইন্টারন্যাশনাল কলেজ শহীদবাগ, ইস্পাহানি স্কুল এন্ড কলেজ নিউ ইস্কাটন রোড, কমলাপুর স্কুল এন্ড কলেজ, খিলগাঁও গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ, খিলগাঁও মডেল কলেজ, মেহেরুন্নেছা গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ ধানমন্ডি, মির্জা আব্বাস ওমেন্স ডিগ্রি কলেজ শাহজাহানপুর, শাহ আলী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ, শান্তিবাগ স্কুল এন্ড কলেজ, শেখ বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ, টি এন্ড টি কলেজ মতিঝিল, সিদ্ধেশ্বরী ও বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ, চকবাজার।