মুসলিম উম্মার শান্তি কামনায় শেষ হলো দ্বিতীয় পর্বের আখেরী মোনাজাত

Slider জাতীয় সারাদেশ


এ কে এম রিপন আনসারীে/ আবু বকর সিদ্দিক সুমন/মোঃ জাকারিয়া/আলী আজগর খান পিরু, বিশ্ব ইজতেমা ময়দান: চোখ বন্ধ করে চোখের জলে মুখ ভাসিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে গিয়েছিল বিশ্ব ইজতেমার শেষ আখেরী মোনাজাত। ‍দুনিয়ার সকল পাপ কাজ থেকে মুক্ত থেকে সকল গুণাহ ক্ষমা করার আকুতি ছিল তাদের কন্ঠে। আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের সপে দিয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি ও কল্যান কামনায় শেষ হলো দুই পর্বে অনুষ্ঠিত ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরী মোনাজাত।

আজ রোববার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে শুরু হওয়া আখেরী মোনাজাত শেষ হয় ১২টা ০৭ মিনিটে। ১৭মিনিটে আখেরি মোনাজাত শেষ হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন দিল্লির নিজাম উদ্দিন মার্কাজের মুরুব্বি মাওলানা জামশেদ।

৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার আজ শেষ দিন। দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে এ বছরের মতো ইজতেমার সমাপ্তি হবে। ইতিমধ্যে এই মোনাজাতে অংশ নিতে ইজতেমামুখী মানুষের ঢল নামে।

দ্বিতীয় পর্বের ইজতমার তৃতীয় ও শেষদিন আজ সকাল থেকে হেদায়েতি বয়ান শুরু হয়। এ পর্বে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন দিল্লির মাওলানা জমশেদ।

দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে শনিবার রাত থেকেই ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে মুসল্লিগণ ইজতেমা ময়দানের দিকে আসতে থাকে স্রোতের মতো। সকালে মুসল্লিদের এই সোত আরও বাড়তে থাকে। ইজতেমা ময়দানের আশপাশে এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ ও আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া সড়কে মুসল্লিদের ঢল লক্ষ্য করা গেছে। মুসল্লিরা সবাই নিজের মতো করে এক ধরনের শৃঙ্খলা মেনে চলেন। সবার মাঝেই ছিল সহযোগিতার মনোভাব।

আখেরি মোনাজাতের দিন ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের সুবিধার্থে ১৬টি বিশেষ ট্রেন চলাচল করে। এছাড়া সব আন্তঃনগর ট্রেন টঙ্গীতে যাত্রা বিরতি করে। এছাড়া বিআরটিসি’র শতাধিক বিশেষ বাস সার্ভিস চালু থাকে। মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী ও আশপাশ এলাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সকাল থেকে ইজতেমায় বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইকবাল হাফিজ। তিনি বলেন, যে দ্বীন ইসলামের বিধান অনুসারে চলবে এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করবে, সে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জন করবে। ঈমানকে শক্তিশালী করতে হলে মানুষকে মসজিদের পরিবেশে বসাতে হবে। মুসলমানের নামাজ ছাড়ার প্রশ্নই আসে না। নামাজ এমনভাবে আদায় করতে হবে, যেমন নবী করিম (সা.) আদায় করেছেন।

মাওলানা ইকবাল হাফিজ বলেন, আমাদের দাওয়াতের কাজে দিনে ৮ ঘণ্টা সময় দিতে হবে। জবরদস্তি করে নয়, তাজিমের সঙ্গে বুঝিয়ে কাউকে মসজিদে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের প্রত্যেকটি কাজ আল্লাহকে রাজি ও খুশি করার জন্যই করতে হবে।

শুক্রবার রাত পর্যন্ত ৩১ দেশের ১ হাজার ৪৪১ জন বিদেশি মেহমান এ পর্বে অংশ নিয়েছেন। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথমদিনই জর্ডান, লিবিয়া, আফ্রিকা, লেবানন, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ইরাক, সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের ৩৫টি দেশ থেকে দেড় সহস্রাধিক মুসল্লি এসেছেন। ভাষাভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ময়দানে ছিলেন বিদেশি মেহমানরা।

আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে আখাউড়া, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেলওয়ে বিভাগ। মোনাজাতের আগে ও পরে সব ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে। ইজতেমায় আগত যাত্রীদের কথা বিবেচনায় রেখে টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে অতিরিক্ত টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করেছে।

আরো চার মুসল্লির মৃত্যু: বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আরও চার মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত ও গতকাল শনিবার ভোরে বার্ধক্যজনিত কারণ ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের মৃত্যু হয়। তারা হলেন- রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার উসমানপুর গ্রামের মৃত হাজী জয়নাল উদ্দিনের ছেলে হুমায়ুন কবির (৬৫), ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালাহাট গোপালপুর গ্রামের আফম জহুরুল আলম (৬২), ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানার নলভোগ এলাকার ফজলু মিয়ার ছেলে ইলিয়াস মিয়া (৮৫) ও গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানার কামালের পাড়া গ্রামের আলহাজ মো. আবুল কাশেমের ছেলে আলহাজ মো.আবদুস সোবহান (৮০)। ময়দানের জিম্মাদার রফিকুল ইসলাম এ তথ্য জানান। এ নিয়ে ময়দানে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে সাতজন মুসল্লির মৃত্যু হলো।

যৌতুকবিহীন বিয়ে: ইজতেমার প্রথমপর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও ৭ জোড়া যৌতুকবিহীন বিয়ে পড়ানো হয়েছে। বিয়ে পড়ান ভারতের মাওলানা শামীম আজমী। তবে তা বয়ানের মঞ্চে না পড়িয়ে বিদেশি মুসল্লিদের তাঁবুতে পড়ানো হয়।

শনিবারের বয়ান: গতকাল বাদ ফজর বয়ান করেন। ভারতের মাওলানা মুরসালিন ইমান, বাদ জোহর বয়ান করেন দিল্লির মুরব্বী রিয়াজসত, বাদ আছর বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা মোশারফ, এর আগে সকাল ১০টায় ওলামাদের উদ্দেশ্যে বয়ান করেন মাওলানা সাত্তার, বাদ মাগরিব বয়ান করেন মাওলানা জামশেদ দিল্লি।

মাওলানা মুরসালিন ইমান- আমল, জাহান্নাম, জান্নাত ও দাওয়াতে মেহনতের উপর গুরুত্বপূর্ণ বয়ান রাখেন। তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) এর কাছে ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.) আসতেন এবং নবী করিমকে (সা.) সবকিছু শিখাতেন। পরে নবী করিম (সা.) সবকিছু সাহাবায়ে কেরামদের শিখাতেন। সাহাবায়ে কেরামগণ তা শিক্ষা লাভ করে যার যার ঘরে ফিরে তাঁদের স্ত্রী-সন্তানদের শিক্ষা দিতেন। তিনি আরও বলেন, ভাই-দোস্ত বুজুর্গ আমাদের বর্তমান সমাজে অনেক কিতাব আছে, কিতাবের বড় বড় লাইব্রেরি আছে। তবে আমাদের মাঝে দ্বীনের মেহনত নাই। কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম আজমাইনদের সময় কিতাব ছিল না, তারা লেখাপড়া জানতেন না। কিন্তু তাদের মধ্যে দ্বীনের মেহনত ছিল। তাঁরা দাওয়াতে মেহনতের মাধ্যমে দ্বীন জিন্দা করেছেন। তাদের দাওয়াতের মাধ্যমেই সারা দুনিয়ায় দ্বীন বাস্তবায়ন হয়েছে।

আখেরি মোনাজাতে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা: বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয়পর্বের আখেরি মোনাজাতে মুসল্লিদের সুষ্ঠুভাবে যাতায়াতের সুবিধার্থে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচলে গাজীপুর ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়। ১৮ই জানুয়ারি শনিবার মধ্যরাত থেকে আবদুল্লাহপুর, ভোগড়া বাইপাস এবং মীরের বাজার, টঙ্গী স্টেশন রোড পর্যন্ত উভয়মুখী রাস্তায় সকল প্রকার যানবাহান চলাচল বন্ধ থাকে। এছাড়াও টঙ্গীব্রিজ, ভোগড়া বাইপাস, মীরের বাজার ও কামারপাড়া ব্রিজে চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজন গাড়িতে তল্লাশি চালানো হবে বলেও জিএমপি কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন।

বিশেষ ট্রেন: টঙ্গী রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার মো. হালিমুজ্জামান জানান, দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে আখাউড়া, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। মোনাজাতের আগে ও পরে সব ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে ৫ মিনিট যাত্রা বিরতি করে। ইজতেমায় আগত যাত্রীদের কথা বিবেচনায় রেখে টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে অতিরিক্ত টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয় বলেও তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *