রাতুল মন্ডল সাফারি পার্ক থেকে ফিরে: বছর খানেক আগে যে জায়গাটায় বিদেশি ধনেশে পাখি আর বিভিন্ন জাতের হাজারো কবুতরের কলকাকলিতে মুখরিত ছিলো। অল্প সময়ের ব্যবধানে এই জায়গাটি নিস্তব্ধ, নেই দর্শনার্থীদেরও পদচারণা, কারণ কতৃপক্ষের অযত্ন আর অবহেলার কারণে ইতিমধ্যেই বিলীন হয়ে গেছে বিদেশী ধনেশ পাখি।
সাফারি পার্কে আসা দর্শনার্থীরা নেমপ্লেটে ধনেশ পাখি লেখা তীর চিহ্ন দেখে, ধনেশ পাখি সন্ধানে যেয়ে দেখেন প্রবেশ মুখে বড় তালা ঝুলছে। আর মরিচা লেগে আছে লোহার তৈরি বিভিন্ন জিনিসে। এতে পার্কে আসা দর্শনার্থীরা রীতিমতো বিব্রত হন।
এখনও যেখানে বড় নেমপ্লেটে লেখা রয়েছে নিজের হাতে টিকেট নিন, এক লাইনে প্রবেশ করুন। অথচ কর্তৃপক্ষের অযত্ন আর অবহেলার কারণে বছর খানেক আগেই বিলীন হয়েছে ধনেশ পাখি। সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বিভিন্ন পাখিদের জন্য যে, আশ্রম স্থল তৈরি করেছিলেন। আজ এগুলো হয়েছে মরিচার নিত্যদিনের খাবার। জানাযায়, ধনেশ এভিয়ারির এই এরিয়াতে বেশ কয়েক প্রকারের বিদেশি পাখি আর বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো কবুতরের চিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকতো সব সময়।
এক বছরের ব্যবধানে শত শত পাখি আর হাজারো কবুতরের একটিও অবশিষ্ট নেই এই এরিয়াতে। পার্কের প্রবেশ মুখ থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয় ধনেশ এরিয়াতে। যাওয়ার পরেও দেখা যায় প্রবেশ মুখে বড় তালা ঝুলছে। প্রবেশ মুখে তালা ঝুলতে দেখে পার্কে আসা দর্শনার্থীরা রীতিমতো বিরক্ত হন। টাঙ্গাইল থেকে বেড়াতে আসা দর্শনার্থী হারুন অর রশিদ জানান, অনেকটা পথ হেঁটে এসে দেখি ধনেশ এরিয়ার প্রবেশ মুখে তালা! কত বছর আগে তালা লাগানো হয়েছে সেটাও বলা মুশকিল।
ধনেশ তো নেই ধনেশ এরিয়ার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি মরিচা ধরে আছে দায়িত্বহীনতার যথেষ্ট অভাব আছে বলে মনে করেন তিনি।
নরসিংদী থেকে আসা আমির হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ধনেশ যেহেতু পার্ক থেকে বিলীন হয়ে গেছে, তাহলে পার্কের বিভিন্ন জায়গায় ধনেশ পাখি লিখা ফেস্টুন গুলো না লাগালেও তো হয়। তাহলে হয়তো আমরা ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে এত বেশি ভোগান্তিতে পড়তাম না।
মুন্সিগঞ্জ থেকে আসার শিলা বলেন, ধনেশের খোঁজে এসে দেখি প্রবেশ মুখে তালা। দর্শনার্থীদের সাথে প্রতারণার সামিল বলে মনে করেন তিনি।
আর ধনেশ পাখি যেহেতু নেই তাহলে পার্কের বিভিন্ন পয়েন্টে ফেস্টুন গুলো খুলে ফেলার দরকার বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য থাইল্যান্ডের সাফারি ওয়ার্ল্ড ও ইন্দোনেশিয়ার বালি সাফারি পার্কের ধারণা থেকে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের রাথুরা মৌজা ও সদর উপজেলার পিরুজালী ইউনিয়নের পিরুজালী মৌজার খন্ড খন্ড শালবন ঘেরা ৪৯০৯.০ একক জমি নিয়ে ২০১১ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। এর মধে ৩৮১০.০ একর জমি প্রাথমিকভাবে মাস্টারপ্ল্যানে আনা হয়। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কটি ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণির জন্য নিরাপদ আবাসস্থল হিসাবে যাত্রা শুরু করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১০ সালে ৬৩.৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এবং পার্ক প্রতিষ্ঠা কার্যক্রম শুরু হয় ২০১১ সালের ২ ফেব্রয়ারী। প শুরুতে কোন মাষ্টার প্লান প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক মানের সাফারী পার্কে উন্নীত করার লক্ষ্যে একটি মাষ্টার প্লান তৈরী করা হয়। মাষ্টার প্লানে বর্ণিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে ৪ অক্টোবর ২০১১ তারিখে ’’বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক, গাজীপুর (১ম সংশোধিত) প্রকল্পটি একনেক কর্তৃক বর্ধিত আকারে ২১৯.৮৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অনুমোদিত হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান বলেন, ধনেশ পাখি আর বিভিন্ন প্রজাতির কবুত গুলো পার্ক থেকে আমি যোগদনের আগেই বিলিন হয়েছে। এখানে কতগুলো পাখি ছিলো সঠিক পরিসংখ্যান দিতে চাননি তিনি।
তিনি আরো বলেন, খুব দ্রুত সংস্কার করে, আগের ন্যায় ধনের এড়িয়ার সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনব। আর দর্শনার্থীরা যাতে ভোগান্তিতে না পড় হয় সেজন্য পার্কের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ধনেশ লেখা নেমপ্লেট গুলো আপাতত সরিয়ে নেব।