ঢাকা: দুই জোটের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘিরে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে দেশজুড়ে। ঢাকায় রোববার বিকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকামুখি যানবাহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে রাজধানী। নিজের কার্যালয়ে গতকাল রাত থেকেই অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সমাবেশে যাতে কেউ যোগ দিতে না পারেন সে জন্যই বাধার সৃষ্টি করছে সরকার। এদিকে পরিবহন মালিকরা জানিয়েছেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে তারা নিজেরাই যান চলাচল বন্ধ রেখেছেন। বগুড়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, রোববার সকাল থেকেই বগুড়ার ওপর দিয়ে সকল ধরণের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকা অভিমুখে কোন গাড়ি ছাড়েনি। বরিশাল থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, সহিংসতার আশঙ্কায় বাস ও লঞ্চমালিক সমিতির নেতারা ঢাকামুখী সকল পরিবহন বন্ধ রেখেছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের সংবাদ পাওয়া গেছে। রাজশাহী থেকেও দুর পাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। সিলেট থেকে রোববার বিকাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে কোন বাস ছাড়েনি। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এদিকে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজধানীতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। দুপুরের পর থেকে বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে পল্টন, তেজগাঁও, গেন্ডারিয়া, নর্দা, গুলিস্তান ও শনির আখড়ায় পাঁচটি বাস ও একটি প্রাইভেট কার এবং ময়মনসিংহ সদরে একটি যাত্রীবাহী বাস পোড়ানো হয়েছে। বেলা পৌনে ১টার দিকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইটের দিকে ফুটওভার ব্রিজের নিচে একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বিকাল পৌনে ৪টার দিকে তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে গাবতলীগামী আরেকটি বাসে আগুন দেয়া হয়।
বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে গেন্ডরিয়ার দয়াগঞ্জ এলাকায় মালঞ্চ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। বিকাল সোয়া ৫টার দিকে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে সুপ্রভাত পরিবহনের আরেকটি বাস অগ্নিসংযোগ করে কে বা কারা। সাড়ে ৫টার দিকে শনিরআখড়া এলাকায় একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেয়া হয়। সন্ধ্যা ৬টার পর গুলিস্তানে একটি বাসে আগুন দেয়া হয়।
নাটোর প্রতিনিধি জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ২০দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গুলশানের দলীয় অফিসে পুলিশ অবরুদ্ধ করে রাখা, যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহম্মেদসহ নেতাকর্মীদের আটক ও ঢাকাগামী সকল বাস ও ট্রেন বন্ধের প্রতিবাদে রোববার বিকালে বড়াইগ্রাম উপজেলা সদর বনপাড়ায় বিএনপির মিছিলে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। পুলিশের লাঠিচার্জে বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ একরামুল আলম, পৌর সভাপতি লুৎফর রহমান, বিএনপি নেতা হোসেন আলী, ছাত্রদল নেতা কোরবান আলী, স্বপন ও সোহেল সহ ১৫জন আহত হয়েছেন। স্থানীয়রা জানায়, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বনপাড়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ একরামুল আলমের নেতৃত্বে মিছিলটি শুরু হয়ে নতুন বাজার সোনালী ব্যাংকের সামনে গেলে পুলিশ দুই দিক থেকে মিছিলে হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে তারা আহত হন। পরে মিছিল থেকে পুলিশ জোয়ারী ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদকে আটক করে নিয়ে যায়। একই সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বনপাড়া পৌরসভা মাঠে সমবেত হয়ে অবস্থান করে।
সিলেট অফিস জানায়, সিলেটে অস্ত্র ঠেকিয়ে বাসার ভেতরে গুলি করে পুলিশ। এ সময় বাসায় চিৎকার শুরু করেন বসবাসকারীরা। বিকাল ৪ টার দিকে নগরীর কাজী ইলিয়াস গলির মুখ থেকে ছাত্রদল সভাপতি সাঈদ আহমদ ও যুগ্ন সম্পাদক মকসুদ আহমদের নেতৃত্বে মিছিল বের করে ছাত্রদল। মিছিলটি জিন্দাবাজার এলাকায় পৌছামাত্র পুলিশ তাদের বাধা দিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় ১০ মিনিট ব্যাপী সংঘর্ষে পুরো জিন্দাবাজার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। এ সময় পুলিশ মিছিলকারী ছাত্রদল কর্মীকে লক্ষ্য করে গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ছাত্রদল কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ও ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ছাত্রদল কর্মীরা কাজী ইলিয়াস গলি, তাতীপাড়া গলি দিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ পিছূ ধাওয়া করে পাশ্ববর্তী তাতীপাড়া এলাকায় ঢুকে পড়ে। ছাত্রদল কর্মীদের অবস্থান করছেন এমন সন্দেহে পুলিশ তাতীপাড়াস্থ সালমা হাউস নামের একটি বহুতল বাসায় অভিযান চালাতে যায়। কিন্তু ডাকাডাকির পর বাসার ফটক খোলা হয়নি। এক পর্যায়ে পুলিশ লাথি দিয়ে ফটক খোলার চেষ্টা করে। পরে ব্যর্থ হয়ে বাসার ফটকের উপর দিয়ে দুই রাউন্ড ফাকা গুলি ছুড়ে।