ঢাকা: ফের ক্ষমতার লড়াই জাতীয় পার্টিতে। জীবিত থাকার সময় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছিলেন রেফারির ভূমিকায়। যদিও তিনি স্বাধীন রেফারি ছিলেন না। বরাবরই এটা স্বীকার করে গেছেন, তিনি একজন পরাধীন রাজনীতিবিদ। যদিও প্রয়াত এই স্বৈরশাসক বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য খ্যাতিমান ছিলেন।
এরশাদের মৃত্যুর পর জাপাতে চলে আসছে দেবর-ভাবির লড়াই। কখনও এ লড়াই থেমেছে। পরক্ষণেই আবার নতুন করে চালু হয়েছে। মাঝে কিছুদিন বিরতি ছিলো।
এখন আবার নতুন করে শুরু হয়েছে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের মধ্যকার লড়াই। গতকাল রওশন ও কাদের পাল্টাপাল্টি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিজেদের আত্মীয় স্বজনসহ বেশ কয়েকজনকে নেতা ঘোষণা করেছেন। এটা অবশ্য এদেশের ‘গণতন্ত্রের’ পুরনো খেলা। নেতা চাইলেই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যে কাউকে নেতা বানিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যেভাবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রেসিডিয়াম সদস্য বাড়াতেন অনেকেই হিসাব রাখতে পারতেন না জাপায় আসলে প্রেসিডিয়াম সদস্য কত? কারাইবা সদস্য। তবে তার স্ত্রী এবং ভাই সম্ভবত এরশাদেেকও ছাড়িয়ে গেছেন।
গতকাল বুধবার জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ছেলে সাদ এরশাদসহ ১৬ জন নেতাকে পদোন্নতি দিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রওশন এরশাদ বলেন, সম্মেলনে অর্পিত দায়িত্ব ও প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সংগঠনের কার্যক্রম গতিশীল করার স্বার্থে এই পদায়ন করা হলো। রওশন এরশাদ তাঁর ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ ও এম এ ছাত্তারকে কো-চেয়ারম্যান করেন। এছাড়া ১১ জনকে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ প্রেসিডিয়ামে অন্তর্ভুক্ত করেন। তাঁরা হলেন দেলোয়ার হোসেন খান, খালেদ আখতার, ইকবাল হোসেন (রাজু), নূরে হাসনা লিলি চৌধুরী, রওশন আরা মান্নান, ফকরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, কাজী মামুন, মাহজাবিন মুর্শেদ, নুরুল ইসলাম (নুর), নুরুল ইসলাম (ওমর) ও আরিফুর রহমান খান। এর বাইরে আমানত হোসেন ও মো. ইয়াহিয়াকে ভাইস চেয়ারম্যান এবং জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া ও মো. রেজাউল করিমকে যুগ্ম মহাসচিব নিযুক্ত করা হয়। এই মনোনয়ন ও সাংগঠনিক নির্দেশ অনতিবিলম্বে কার্যকর হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
এ বিষয়ে জাপার মহাসচিব মসিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রধান পৃষ্ঠপোষক (রওশন এরশাদ) এমন কিছু করতে পারেন না। গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয় থেকে বিবৃতি পাঠিয়ে এ পদোন্নতিকে বিভ্রান্তিকর আখ্যা দিয়ে তা প্রচার না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, এভাবে কোনো নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার প্রধান পৃষ্ঠপোষকের নেই।
ওদিকে, গতকালই জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের ২১ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করেছেন। তাতে পরিবারের তিন সদস্যের নাম রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমজন জি এম কাদেরের স্ত্রী। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত উপদেষ্টাদের মধ্যে নীলফামারীর মেরিনা রহমান তার বোন এবং একই জেলার ড. মেহেজুবুন্নেসা রহমান ভাগনি। জি এম কাদেরের নিয়োগ পাওয়া তার স্ত্রী, বোন ও ভাগনি ছাড়া ছয় উপদেষ্টারা হলেন চট্টগ্রামের সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ময়মনসিংহের ক্বারি মো. হাবিবুল্লাহ বেলালী, ঢাকার ড. মো. নুরুল আজহার শামীম, রংপুরের মো. হাসিবুল ইসলাম জয়, চাঁদপুরের মনিরুল ইসলাম মিলন এবং সিলেটের আব্দুল্লাহ।