প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,’৭৫-এর পর সত্যিই বাংলাদেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। সেই অন্ধকার ভেদ করে এখন বাংলাদেশ আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন ও আদর্শ নিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন, তা বাস্তবায়নে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। তাই মুজিববর্ষকে মানলো বা কে মানলো না- সেজন্য জাতি বসে নেই, বসে থাকেনি। তারা যদি কাউকে সম্মান না দেখাতে পারে তাহলে সেটা আইন দিয়ে তো তাদের মনের ইচ্ছাটা পূরণ করা যাবে না। তবে বাঙালি জাতিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, পারবেও না। ২৯৮টি কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব বছরব্যাপী মুজিববর্ষ পালন করবে। জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য বিরল সম্মানের।
বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত, যারা সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যকাণ্ডে জড়িত খুনিদের বিচারের হাত থেকে মুক্ত করে পুরস্কৃত করেছে, যারা স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী, যাদের বিচার শুরু হয়েছিল- তাদের বিচারের পথ বন্ধ করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়ে মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিল-তাদের (বিএনপি) কাছ থেকে ভাল কিছু আশা করা যায় না। তারা যদি কাউকে সম্মান না দেখাতে পারে, সেজন্য জাতি বসে থাকেনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাঁর অবদান, নাম, স্লোগান ও ভাষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছিল। আজকে সেই সঠিক ইতিহাস সারাবিশ্বে উদ্ভাসিত হয়েছে। শুধু বাঙালির মুখে নয়, সারাবিশ্বে বঙ্গবন্ধুর অবদান স্বীকৃতি পেয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ত্রিশ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর এক সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে বছরব্যাপী দেশে-বিদেশে গৃহীত বিস্তারিত কর্মসূচি সংসদে তুলে ধরেন।
সত্যকে কখনো মিথ্যা দিয়ে চাপা দিয়ে রাখা যায় না: সম্পুরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-এর পর ২১টি বছর জাতির পিতার নাম-নিশানা ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু বাংলার মাটিতে সত্যকে কখনো মিথ্যা দিয়ে চাপা দিয়ে রাখা যায় না। মুছে ফেলা যায় না-সেটা আজ প্রমাণিত সত্য। প্রমাণিত সত্য বলেই বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে। গত আড়াই হাজার বছরে বিশ্বের যত নেতৃত্বের ভাষণ তার দেশ ও দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে-তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ। এটা গোটা বিশ্বই স্বীকার করে নিয়েছে। সংসদ নেতা বলেন, জাতির পিতার যে আদর্শ আমরা ধারণ করেছি, যে আদর্শ ও চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ জাতির পিতা দেশকে স্বাধীন করেছিলেন, তাঁর সেই চেতনা ও আদর্শ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি। আজকে বাংলাদেশের উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সত্য ইতিহাস আজ উদ্ভাসিত হয়েছে। আজকে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ইউনেস্কোর মাধ্যমে বিশ্বের জাতিসংঘভূক্ত সকল দেশ উদযাপন করবে। এর থেকে বড় সত্য আর কী আছে? কাজেই কে মানলো বা কে মানলো না- তার জন্য কেউ বসে থাকেনি। জাতির পিতা বলেছিলেন- ৭ কোটি বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। এখন ৭ কোটি থেকে ১৬ কোটি জনগণ হয়েছে। কিন্তু তাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, পারবেও না। বাংলাদেশের মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই।