প্রথম দুই দিন অনেকটা অভিযোগ ছাড়াই চলেছে প্রচার-প্রচারণা। শনিবার সন্ধ্যায় বাংলামটর এলাকায় প্রচারণার সময় হামলার প্রথম অভিযোগ আসে। গতকাল পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কাছ থেকে। এ ছাড়া একজন নারী কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রচারণায় হামলা ও তার বাসায় ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় গতকাল বিকালে জমজমাট প্রচারণার মধ্যে হঠাৎ উত্তেজনা দেখা দেয়। অনেকে বলছেন, শান্তিপূর্ণ প্রচারণা শুরু হলেও এখন কি তাহলে পরিস্থিতি পুরনো পথেই যাচ্ছে। চেনা পথেই কি দেখা যাবে নির্বাচনে মাঠের লড়াই। এর আগের বার অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটি নির্বাচনে প্রচারণার সময় ব্যাপক হামলা ভাঙচুরের অভিযোগ এসেছিল।
এছাড়া বিগত নির্বাচনগুলোতে প্রচারণায় বাধা ও হামলা ভাঙচুরের অভিযোগ করে আসছিলেন বিরোধী প্রার্থীরা। সরকারের দ্বিতীয় বছরের শুরুতে ঢাকা সিটি নির্বাচন কেমন হয় তা দেখতে উদগ্রিব গোটা দেশ। এ নির্বাচনে দৃষ্টি আছে আন্তর্জাতিক মহলেরও। শুরু থেকে নির্বাচন কমিশন এবং ক্ষমতাসীন দল বলে আসছে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তারা নির্বাচন করতে চান। তবে প্রধান প্রতিপক্ষ শুরু থেকেই বলে আসছে অতীত অভিজ্ঞতার কারণে আস্থাহীনতায় ভূগছেন প্রার্থীরা।
ঢাকা উত্তরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল অভিযোগ করেন রোববার দুপুরে মিরপুর-১ নম্বরের উত্তর বিশিলে শাহ আলী মাজারের কাছে পুলিশের সামনেই তার প্রচার মিছিলে হামলা করেছেন ‘ক্ষমতাসীন দলের’ কর্মীরা। অন্যদিকে দক্ষিণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস অভিযোগ করেছেন, আগের দিন সন্ধ্যায় রামকৃষ্ণ মিশন রোডে তার গণসংযোগে ‘হামলা করেছে’ প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। শাহ আলী মাজার এলাকায় হামলার জন্য আওয়ামী লীগ কর্মীদের দায়ী করে তাবিথ বলেন, মাজারের সামনে প্রচারের সময় জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে হামলা চালানো হয়। পুলিশের সামনেই আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। ২০১৫ সালে হামলার আশঙ্কায় আমি নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছিলাম। তখন আমাকে পুলিশ প্রটেকশন দিয়েছিল। কিন্তু এবার পুলিশের সামনেই হামলার শিকার হলাম। গতকালও (শনিবার) আমার কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে, ইসিকে জানাবো। প্রচারণাকালে নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকার দিকে তাকিয়ে আছেন উল্লেখ করেন ঢাকা উত্তরের বিএনপি মনোনীত এই মেয়র প্রার্থী।
এদিকে দক্ষিণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস শান্তিনগর কাঁচাবাজার থেকে তৃতীয় দিনের নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরুর আগে সাংবাদিকদের সামনে হামলার অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, শনিবার আরকে মিশন রোডে নির্বাচনী প্রচারের এক পর্যায়ে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ইশরাক হোসেনের বাসাতেও আমি গিয়েছি। সেখানে সকলের সঙ্গে সাক্ষাত করেছি, ভোট প্রার্থনা করেছি। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আমরা সেখান থেকে চলে আসার পর সন্ধ্যার দিকে তারা অতর্কিতভাবে আমাদের ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীসহ গণসংযোগে যারা ছিল তাদের ওপর আক্রমণ করেছে। এটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আমরা চাই সম্প্রীতির রাজনীতি, পরিবর্তনের রাজনীতি। আমরা এই রাজনীতির সূচনা করতে চাই। আমরা আশা করব সকলে আমার সাথে সেই সূচনায় অংশগ্রহণ করবে।
এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় বাংলামোটরে বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্রের কাছে হামলার শিকার হন তার কর্মীরা। ওই হামলায় চার জন আহত হন বলে তাবিথের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মেহেরুন নেছার বাসা ও নির্বাচনী অফিসে হামলা চালিয়েছে দৃর্বৃত্তরা। রোববার সন্ধ্যায় কাউন্সিলর প্রার্থীর ওয়ারীর বাসায় ও অফিসে এ হামলা চালানো হয়েছে। বিকাল চারটায় কাউন্সিলর প্রার্থী মেহেরুন নেছা নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করলে পেছনে থেকে তার মিছিলে হামলা চালায় দৃর্বৃত্তরা। পরে তিনি তার বাসায় চলে গেলে সেখানেও হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়েছে। সরকার দলীয় লোকেরা এই হামলা চালিয়েছে অভিযোগ করে ঢাকা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার বলেন, বিকাল চারটায় ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী প্রচারণা চালানোর সময় মিছিলের পেছন দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। ওই সময় সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছিলেন। উনাদের এ বিষয়ে অভিযোগ জানানো হলেও তারা কোন সাড়া দেননি। পরে মিছিল থেকে প্রার্থী বাসায় গেলে সেখানেও হামলা চালায় সরকার দলীয় লোকেরা। এতে বাসার অধিকাংশ আসবাবপত্র ভাংচুর এবং অফিসের প্রার্থীর পোস্টার ছিড়ে ফেলেছে তারা।
নতুন ওয়ার্ডগুলোতে উন্নয়নে আতিকুলের প্রতিশ্রুতি: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোতে ব্যাপক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাইছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। গতকাল দুপুরে উত্তরা সংলগ্ন কসাইবাড়ি রেলগেট, কাঁচপুরা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, ময়নারটেক, ফায়দাবাদ, ছাপড়া মসজিদ এলাকায় গণসংযোগ কালে তিনি এসব প্রতিশ্রুতি দেন। এসময় সাধারণ ভোটারদের উদ্দেশ্যে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন ওয়ার্ডগুলো উন্নয়নের মাধ্যমে ভালোভাবে সাজানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা বলতে চাই, নৌকা উন্নয়নের মার্কা। নৌকায় ভোট দেয়ার মাধ্যমে আমাকে যদি নির্বাচিত করেন তাহলে প্রথমেই এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা দূর করতে কাজ করবো। রাস্তা উন্নয়ন হয় আর এলইডি বাতিতে যেন আলোকিত হয় সেই কাজ করব। এছাড়া নতুন ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নের জন্য অনেক বড় বড় পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, উন্নয়ন চলছে, চলবে। এ শহরে উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে এবার গন্তব্যে নেয়ার পালা। সবাই মিলে সবার ঢাকা, সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়তে চাই। গণসংযোগ কালে মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র নির্বাচিত হয়ে গত ৯ মাসে এক মিনিটও বসে থাকিনি। এই নগরীকে আরো উন্নত করতে নৌকায় ভোট দিয়ে আমাকে আবারো আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন। আপনাদের দেয়া ভোটে আগামীতে নির্বাচিত হলে কি কি কাজ করবো সেসব পরিকল্পনা করা হয়েছে, এখন শুধু কাজ করবো।’ পরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আব্দুল্লাহপুর হয়ে তুরাগ, কামারপাড়া, নয়ানগর মাদরাসা, রানাভোলা হয়ে বাওনিয়া এলাকায় গণসংযোগ করেন।
তাবিথের দিনভর প্রচারণা: সব বাধা উপেক্ষা করে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। গতকাল তৃতীয় দিনের মতো নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় একথা বলেন তিনি। এদিন সকাল ১০ টা ৪৫ মিনিটে মিরপুর শাহ আলী মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে তৃতীয় দিনের মতো প্রচারণা শুরু করে উত্তর বিশিল, গুদারাঘাট, চিড়িয়াখানা রোড, ১ নং মিরপুর ঈদগাঁ মাঠ, ডি-ব্লক মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, ১২ নং ওয়ার্ডে দক্ষিণ বিশিল, হাজী বশির উদ্দিন স্কুল রোড, হাবুলের পুকুর পাড়, ১৩নং ওয়ার্ডে উত্তর পীরের বাগ, ৬০ ফিট, মধ্য পীরের বাগ, মোল্লা পাড়া, মনিপুরি স্কুল রোড, জোনাকি রোড, বড়বাগ হয়ে মিরপুর থানা, ১০ নং ওয়ার্ডে মিরপুর মাজার থেকে ২য় কলোনী, ৩য় কলোনী হয়ে দারুস সালাম ফুরফুরা শরীফ এলাকায় জনসংযোগ করেন। গণসংযোগকালে তাবিথ আউয়াল বলেন, আমরা ইতিমধ্যে নাগরিক সমস্যার ১২টা জায়গা চিহ্নিত করেছি। দায়িত্ব পেলে এই ১২টা জায়গায় আমরা সমন্বয় ও গুরুত্বের ভিত্তিতে একযোগে কাজ শুরু করবো। ডেঙ্গু, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও যানজটের মতো বাসা ভাড়াও ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য একটি বড় সমস্যা। এই লড়াইয়ে জয়ী হতে পারলে ঢাকার নাগরিক সমস্যার সমাধানে কাজ করা সহজ হবে। তিনি বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতিতে ভরে গেছে। মেয়র নির্বাচিত হলে তিনি সবার আগে এই দুর্নীতি দমনে কাজ করতে চান বলে জানান। তাবিথ বলেন, পুলিশের মামলা হবে, হামলা হবে আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের পক্ষ থেকে। আমরা শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করেও নির্বাচনী মাঠে থাকবো ইনশাল্লাহ। গতকাল তাবিথ আউয়ালের পক্ষে প্রচারণা চালান বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায় চৌধুরী, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দুলু, ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মাসুদ খান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, স্বেচ্ছাসেবক দল উত্তরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন, সাধারণ সম্পাদক রেজোওয়ান ইসলাম রিয়াজসহ বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
তাপসের সরব প্রচারণা: দিনভর সরব প্রচারণা চালিয়েছেন দক্ষিণে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আলহাজ এনামুল হক আবুল ও ১৩, ১৯ ও ২০নং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদপ্রার্থী সৈয়দ রোকসানা ইসলাম চামেলী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগেরে সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, যুবলীগের সভাপতিমন্ডলীর সাবেক সদস্য মাহবুবুর রহমান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা নেতাকর্মীদের সঙ্গে কনকনে শীত উপেক্ষা করে দিনভর গণসংযোগ করেন। আর নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে রাখেন এবং নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করেন।
শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমরা একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আমাদের প্রাণের ঢাকাকে সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা গড়ে তুলতে চাই। আমরা ঢাকাকে গড়ে তুলতে চাই উন্নত ঢাকায়। আমরা সকলের সাড়া পাচ্ছি। আশা করি জনগন আমাদের পক্ষে রায় দেবেন। আমাদের জয়যুক্ত করবেন। ঢাকা- ১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তাপস আরো বলেন, আপনারা অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করবেন। সড়কে কোন প্রকার যানজটের সৃষ্টি যাতে না হয়। খেয়াল রাখবেন যাতে আমরা প্রতিটি ব্যক্তির কাছে পৌঁছাতে পারি। এসময় তিনি শান্তিনগর এলাকার (১৩ নম্বর ওয়ার্ড) কাউন্সিল প্রার্থী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক আবুল (ঘুড়ি মার্কা) ও সৈয়দ রোকসানা ইসলাম চামেলীকে (আনারস মার্কা) পরিচয় করিয়ে দেন। এছাড়াও তাপস সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে গতকাল শেখ ফজলে নূর তাপসের হয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন তার ভাবি অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা জু?থি। তিনি যুবলীগের নবনির্বাচীত চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী। গতকাল দুপুরে অ্যাডভোকেট জুথি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবিদের নিয়ে পান্থপথ এলাকায় বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের আশে পাশে প্রচারণা চালান। এসময় তারা দোকানদার ও পথচারীদের লিফলেট বিতরণ করেন। প্রচারণার সময় অ্যাডভোকেট যুথি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা প্রচারণা চালাতে গিয়ে জনতার আগ্রহ দেখছি। আমাদের কিছু বলার আগেই তারা বলছেন, আমরা নৌকার লোক। নৌকাতেই ভোট দেব।
কেউ আমাদের থামাতে পারবে না-ইশরাক: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেছেন, কেউ আমাদের থামাতে পারবে না। ইশরাক বলেন, আমাদেরকে নানাভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে। মিছিল থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করার ঘটনা আমরা শুনতে পেরেছি। আমি বলতে চাই, কোনো ধরণের বাধা আমরা মানবো না। কেউ আমাদের থামাতে পারবে না। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। কোনোভাবেই দমে যাবো না। ইনশাআল্লাহ বিজয় আমাদের আসবেই। আশাকরি আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন, গণতন্ত্র মুক্ত করবেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবেন।
তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর একটি বিশেষ মহল থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ক্রমেই বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে। রোববার সূত্রাপুর ও কোতয়ালী থানার বিভিন্ন ওয়ার্ডে আমার নির্বাচনী প্রচারণা ও গণসংযোগের কর্মসূচি ছিল। ঢাকা জজকোর্ট এলাকা থেকে এই প্রচারণা শুরু করে তাঁতীবাজার, শাখারীবাজার হয়ে নয়াবাজারে মধ্যাহ্ন বিরতি দেয়া হয়। বিরতির পর সেখান থেকে পুনরায় প্রচারণা চালানোর সময় পুলিশ অহেতুক আমাদের কয়েকজন কর্মীকে হয়রানি করতে থাকে। সে সময় আমি সরাসরি গিয়ে হস্তক্ষেপ করায় পুলিশ নিবৃত হয়। কিন্তু গণসংযোগ চালিয়ে আমি সামনে এগিয়ে গেলে পেছন থেকে আমার ৪(চার) জন কর্মীকে আটক করে। এ খবর শোনামাত্র আমি বংশাল থানায় যাওয়ার উদ্যোগ নেই। কিন্তু তখন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, কাউকে আটক করা হয়নি।
তিনি বলেন, বিকালে ওয়ারী থানার অধীন বলধা গার্ডেন এলাকায় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৫ জন কর্মীকে ধানের শীষ পোষ্টার লাগানোর সময় পুলিশ আটক করে। পরে আমি সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। এর পরপরই পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। হাজারীবাগ পার্কের সামনে থেকে আমার প্রচার কাজ চালানোর সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা রিকসার গতিরোধ করে ২ জন কর্মীকে মারধর করে মাইক ও মাইকের সরঞ্জাম রেখে দেয় এবং পরবর্তীতে থানা পুলিশে দেয়ার হুমকি দেয়। প্রায় একই সময় ৩৮নং ওয়ার্ডস্থিত ৩নং যোগীনগর রোডে সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থী মেহেরুন নেছা’র নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা চালানো হয়। এ হামলায় শ্রমিক দলের ওয়ার্ড সভাপতি আব্দুস সালাম গুরুতর আহত হন। ৬২নং ওয়ার্ডস্থিত নয়ানগর এলাকার যাত্রাবাড়ী থানার স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ইয়ামিন, ইয়াছিন ও ইমন’কে ধানের শীষের পক্ষে পোষ্টার লাগানোর কারণে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে মারধর করে। কবি নজরুল কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি এহসান মামদুদ, নিখিল চন্দ্র শ্রাবন ও সিরাজ ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগ শেষে গোপীবাগ আসার পথে যোগীনগর এলাকায় স্থানীয় যুবলীগ কর্মীরা হামলা করে। এতে গুরুতর আহত হয়। ২৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সাহিদা মোর্শেদ-এর প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. তামিম ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাকিবসহ অন্যরা প্রচারণা না করার হুমকি এবং তার বাসায় গিয়ে নেতা-কর্মীদের দীর্ঘ ৫(পাঁচ) ঘণ্টা আটকে রাখেন। সকাল ১১:০০টায় নূরফাতে আলী লেনে বিএনপি সমর্থিত ধানের শীষ ও লাটিম মার্কার প্রচারণাকালীন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নেতৃত্বে পুলিশসহ তার নেতা-কর্মীদেরকে নিয়ে সাহিদা মোর্শেদ-এর প্রচারণা বাধাগ্রস্থ করে এবং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতির চশমা নিয়ে তাকে লাঞ্ছিত করে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ইশরাক হোসেন বলেন, সম্প্রতি আমার প্রতিপক্ষ মেয়র প্রার্থী সম্প্রীতির কথা বলেছেন, কিন্তু এটাই কি সম্প্রীতির নমুনা? যদি তিনি সত্যিই সম্প্রীতি চান, তাহলে আজ এখন থেকেইে এধরনের হামলা বন্ধ করার উদ্যোগ নিবেন। তিনি বলেছেন আমরা নাকি তার প্রচারণায় হামলা করেছি। আমরা তাদের হামলা করিনি, বরং তারাই আমাদের উপর হামলা করেছে। আমাদের কাছে ছবি আছে। আমাদের গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে।
গতকাল প্রচারণায় ইশরাকের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কাজী আবুল বাশারসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।