এরশাদের রহস্য নাটকের অভিনেতা!

জাতীয় বাংলার মুখোমুখি

57629_f3

ঢাকা: এরশাদ কি আদতেই ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। নাকি তার অবস্থান ছিল কোন নাটকের অংশ। সেই রহস্য এখনও মেলেনি। এসব প্রশ্নের জবাব সরাসরি তিনি গত এক বছরেও দেননি। তবে স্ত্রী রওশন এরশাদ ১লা জানুয়ারি জাপা’র মহাসমাবেশে কবুল করেছেন জাপা চেয়ারম্যানের নির্দেশেই নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। এর আগে গত বছর ৯ই জানুয়ারি দশম সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে তার নাম ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেছিলেন এরশাদের পরামর্শে নির্বাচনে গেছেন রওশন। নির্বাচন বর্জন করার পর আবার শপথ নিয়ে এরশাদ বলেছিলেন, রংপুরের মানুষ ভোট দিয়েছে তাই শপথ নিতে এসেছি। জাপা’র এমপিরা শপথ নেয়ার পর রওশন এরশাদকে সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত করার পর গুঞ্জন ছিল এরশাদ আর শপথ না-ও নিতে পারেন। এর আগে গত ১৫ই ডিসেম্বর সকালে এরশাদ সিএমএইচ থেকে নিজেই গণমাধ্যমকে জানান, নিজের কথা আর কি বলবো? আমি সুস্থ, আমাকে অসুস্থ বানিয়ে রাখা হয়েছে। যত চেষ্টাই তারা করুক না কেন, তাতে কোন লাভ হবে না। আত্মসমর্পণ করিনি। কেউ শপথ নেবেন না। অবশ্য ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের একদিন আগেও সিএমএইচে থাকাকালীন গলফ খেলে ও টিভি দেখে সময় কাটান এরশাদ। আর এরশাদের পক্ষে তার বিশেষ উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজ ৪ঠা জানুয়ারি নির্বাচনের আগের দিন লন্ডন থেকে এক ভিডিও বার্তায় নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি। ইউটার্ন দিয়ে ২০১৩ সালের ৩রা ডিসেম্বর সাংবাদিকদের উদ্দেশে এরশাদ বলেছিলেন, তোমরা আমার সম্পর্কে অনেক কথা বলো, আমি নাকি সকালে এক কথা, বিকালে অন্য কথা বলি। তোমাদের এ কথার কিছুটা সত্যতাও রয়েছে। কিন্তু তোমরা এর কারণ উপলব্ধি করো না। সব কষ্টের কথা বলা যায় না। যুদ্ধ করে চলেছি মামলার বিরুদ্ধে। কোন সুবিচার পাইনি। ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়ার পরপরই আমাকে জেলে নেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল আমি কুচক্রী রাষ্ট্রদ্রোহী। ৬ বছর ২ মাস জেলে ছিলাম। ইফতারে একটা মিষ্টি চেয়েছিলাম। আমাকে তা দেয়া হয়নি। আমার বিরুদ্ধে ৭৪টি মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছিল। আমার ক্ষমতা ছাড়ার পাঁচ বছর পর মঞ্জু হত্যা মামলা করা হয়েছে। রায় দুই মাস পিছিয়ে ২১শে জানুয়ারি পর্যন্ত ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ আমাকে ঝুলিয়ে রাখতেই হবে। এবার চুপ থাকবো না। সূত্র জানায়, সরকার বা বিরোধী দলে থাকার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে এরশাদের দর কষাকষি চলছিল। এর অংশ হিসেবেই শপথ নিলেন তিনি। নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে একেক সময় একেক রকম বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ। তাকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হতে পারে- এ আশঙ্কা করে আত্মহত্যারও হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। তবে অনেকে বলছেন, ইমেজ উদ্ধারের জন্য এরশাদের পুরো অবস্থানই ছিল পরিকল্পিত নাটক। নির্বাচন বর্জন করলেও ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ৪১ জন এমপি হয়েছেন। তবে এরশাদের পক্ষ নেয়া তার ভাই জি এম কাদের এমপি হতে পারেননি। এরশাদের নির্দেশে দলের বেশির ভাগ প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এর আগে এরশাদ ১৬ই নভেম্বর বলেন, মহাজোটে থেকে নির্বাচন করলে লোকে আমাকে বেইমান বলবে। ১৩ই নভেম্বর তিনি বলেছিলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এক তরফা নির্বাচন ও সর্বদলীয় সরকারে অংশ নেবে না জাতীয় পার্টি। আমি তো অনেক আগেই ঘোষণা দিয়েছি সব দল অংশগ্রহণ না করলে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। আর সে নির্বাচনে জাতীয় পার্টিও অংশগ্রহণ করবে না। ১১ই নভেম্বর এরশাদ বলেছিলেন, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে এক তরফা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি যাবে না। সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে গেলে মানুষ আমাকে থুতু দেবে। এর চেয়ে জেলে মরাই ভাল। নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে প্রায় ২৭ ঘণ্টা পর এরশাদ আত্মপ্রকাশ করেন ৫ই ডিসেম্বর বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে। নিজের অবস্থানে অনড় থেকে বলেছিলেন জেলে পচবো তবুও গণভবনে যাবো না। ওই রাতে আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তখন তিনি বলেছিলেন, তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হলে তিনি নিজেই নিজের পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যা করবেন। ওইদিন বিকালে সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব সুজাথা সিংকে বলেন, ১০০ মানুষকে জিজ্ঞেস করে দেখেন কেউ আওয়ামী লীগের কথা বলবে না। পরে এরশাদ সাংবাদিকদের বলেন, ১৫ই ফেব্রুূয়ারির মতো নির্বাচন হলে এর পরিণতি  তো আপনারাই ভাল জানেন। জেলে পচবো তবুও গণভবনে যাবো না। এটাই আমার শেষ কথা। পরে দশম সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে রওশন এরশাদের নাম ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে সংসদ সচিবালয়। আর নানা নাটকের পর ১১ই জানুয়ারি রংপুর-৩ আসনের এমপি হিসেবে শপথ নেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১২ই জানুয়ারি মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানেও যোগ দেন তিনি। একই দিন তাকে মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত করা হয়। বঙ্গভবনে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে দীর্ঘ এক মাস সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে থাকা এরশাদ ওই দিন সন্ধ্যায় ফেরেন নিজ বাসায়। গণমাধ্যমকেও মৃদু কথায় বুঝিয়ে দেন যে তিনি বসে এসেছেন সরকারের। আর ক্ষমতাচুত হওয়ার ২৪ বছর পর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়ে গাড়িতে পতাকা উড়িয়ে চলছেন। এক বছর ধরে নিচ্ছেন বিশেষ দূত হিসেবে সরকারের সব সুযোগ-সুবিধা। এদিকে, গতকাল একটি অনলাইন পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, এখন সংসদে দুই নম্বরে আছি, তবে বাইরে কি জানি না। ওদিকে ৫ই জানুয়ারি সোমবার সকাল ১১টায় সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *