সরকারি কোনো কর্মকর্তাকে ১৫০ দিনের বেশি অফিসার অন স্পেশাল ডিউটিতে (ওএসডি) রাখা যাবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। সরকারের ক্ষমতা আছে ওএসডি করে রাখার, এটি সঠিক। কিন্তু ১৫০ দিনের বেশি ওএসডি রাখা বেআইনি। বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ রায় দেন। ঘোষিত রায়ে হাইকোর্ট যেসব কর্মকর্তাদের ১৫০ দিনের বেশি ওএসডি করে রাখা হয়েছে, তাদের অবিলম্বে স্ব স্ব পদে ফেরত পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া, ১৫০ দিনের বেশি ওএসডিতে থাকা কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে জনপ্রসাশন মন্ত্রনালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কমিটি গঠনের নব্বই দিনের মধ্যে প্রতিটি ঘটনা খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে আইন অনুসারে কমিটিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
তবে ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত বলেন, ওএসডি করার ক্ষমতা সরকারের রয়েছে বলে রায়ে এসেছে। তবে ১৫০ দিনের বেশি কাউকে ওএসডি রাখা যাবে না বলে রায়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করবে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অনীক আর হক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত ও সহকারী অ্যার্টনি জেনারেল অবন্তী নুরুল। আইনজীবী অনীক আর হক জানান, ১৫০ দিনের বেশি ওএসডিতে থাকা বর্তমানে ৭৭৫ জন কর্মকর্তা আছেন। ১৫০ দিনের বেশি বা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোনো কর্মকর্তাকে ওএসডি করে রাখা হলে তারা সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন হন বলে রায়ে এসেছে। জনগনের আয়করের টাকায় তাদের বেতন হয়ে থাকে। সুতরাং সংবিধানের ২০ অনুচ্ছেদ অনুসারে তাদের ক্ষেত্রে নো ওয়ার্ক নো পে নীতির পরিপন্থী।
এর আগে, ২০১২ সালের ৩১শে মে জনস্বার্থে সাবেক সচিব এম আসাফউদ্দৌলাহ ওএসডির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিটটি করেন। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৪ঠা জুন হাইকোর্ট রুলসহ অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেন। রুলে নির্ধারিত কারণ ও সময়ের বাইরে কোনো দায়িত্ব ছাড়া কর্মকর্তাদের ওএসডি করে রাখা এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন দেয়া কেন অসাংবিধানিক হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রিটে সংবিধানের পরিপন্থী উল্লেখ করে বলা হয়, ১৯৯১ সালের ৩রা অক্টোবর তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে কী কী কারণে ওএসডি রাখা যায় সে বিষয়ে এবং এর সময়সীমা বলা আছে। কিন্তু অনিদিষ্টকালের জন্য ওএসডি রাখা হচ্ছে, তা বেআইনি। অনেক কর্মকর্তাকে কোনো কারণ ছাড়াই চিঠি দিয়ে ওএসডি করে রাখা হচ্ছে। সংবিধানের ২০ (২) অনুচ্ছেদ অনুসারে অনুপার্জিত আয় কোন ব্যক্তি ভোগ করতে পারবে না। যাদের ওএসডি করে রাখা হচ্ছে, তারা কোন দায়িত্ব ছাড়া সরকারের কাছ থেকে বেতন ভোগ করছেন। জনগণের ট্যাক্সের অর্থ থেকে তাদের বেতন দেয়া হয়। এটা জনস্বার্থ ও সংবিধান পরিপন্থী। কারণ সংবিধানের ২৭ ও ৪৪ অনুচ্ছেদে সমতার কথা বলা আছে। একজন করদাতা হিসেবে যেকোন ব্যক্তিরই অধিকার রয়েছে তার প্রদত্ত কর যেন সঠিকভাবে ব্যবহার হয়।