শীতের সঙ্গী আগুনই শুধু নয়!

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি জাতীয়


ঢাকা: এই বছর শীতটা যেন একটু জেঁকেই বসেছে। গত বছরের নভেম্বর মাসের শেষ থেকে এ বছরের জানুয়ারিতেও শীত শীত অনুভূতির কমতি নেই। একের পর এক শৈত্যপ্রবাহে শীতের মেজাজ ভালোই টের পাওয়া যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে বলা যায়, শীত পুরো জানুয়ারি মাস বহাল তবিয়তেই থাকবে!

বলা চলে, শীতকাল ফ্যাশনপ্রেমীদের জন্য আনন্দের বারতা নিয়েই আসে! উইন্টার ট্রেন্ডের সব পোশাকের স্বাদই তারা নিতে চান। শীত তাড়াতে ভারী পোশাকের সঙ্গে শীত অনুষঙ্গ হিসেবে মাফলার আর কানটুপির কদরের কথা না বললেই নয়। গলায় রঙিন মাফলার আর মাথায় কানটুপি শীত ফ্যাশনকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়, একথা বলাই বাহুল্য। জ্যাকেট, চাদর, গাউন, জিন্স, ফুল স্লিভ টি-শার্ট, ফতুয়া কিংবা শার্টের সঙ্গে চমৎকারভাবে মানিয়ে যায় মানানসই একটি মাফলার ও টুপি।

আমাদের দেশে তথা গ্রামাঞ্চলে শীতের মৌসুমে মাফলারের প্রচলন ছিল বহু আগে থেকেই। তবে এর ব্যবহার সীমিত ছিল শুধু ছেলে বা পুরুষদের ক্ষেত্রে। সময়ের পালাবদলে এই ধারণার ঘটেছে পরিবর্তন। বৈচিত্র্যময় ডিজাইনে, নকশার ভিন্নতায় আর বাহারি রঙের মিশেলে দৃষ্টিনন্দন মাফলার দেখা যায় ছেলেমেয়ে উভয়ের গলায়। নগরীর ফ্যাশন হাউস থেকে শুরু করে ফুটপাতেও মিলছে নান্দনিক এসব মাফলার। উলের নেট মাফলার, অ্যান্ডিকটন, পশমি মাফলারসহ নানা রকম চেক মাফলার পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। লং ও শর্ট দু’রকম মাফলার পাওয়া যায়। মেয়েদের মাফলার ছেলেদের তুলনায় একট খাটো হয়। তবে কালার ও শেডের ভিন্নতায় কিছু মাফলার তৈরি করা হয় যেন ছেলেমেয়ে উভয়েই ব্যবহার করতে পারে। উলের নেট নকশার মধ্যেও পাওয়া যায় হরেক রকম মাফলার। লাল-কালো, কমলা-সবুজ, টিয়া-সাদা, বেগুনি-গোলাপি, সাদা-কালোর মিশেলের মাফলারগুলো পছন্দ হওয়ার মতোই। পোশাকের রঙের সঙ্গে মিল রেখে বেছে নিতে পারেন আপনার গলাবন্ধনী।

মাফলার বাঁধারও রয়েছে নিজস্ব কিছু স্টাইল। লম্বাকৃতির, স্কয়ার বা ত্রিভুজাকার করে আপনি মাফলার বাঁধতে পারেন গলায়। পাগড়ির মতো করেও মাথায় বাঁধতে পারেন। গলায় পেঁচিয়ে দুই কোনা বুকের ওপর রাখতে পারেন। কাঁধের দু’পাশে ছড়িয়ে বা বাড়তি অংশ শার্টের ভেতরে ঢুকিয়ে রাখতে পারেন। গলায় পেঁচিয়ে বিনুনি করে নিতে পারেন। নিজেকে যেভাবে ভালো লাগে, সেভাবেই স্টাইল করাটা ভালো।

শীতে মাফলার ব্যবহার পূর্ণতা পায় জুতসই টুপির মাধ্যমে। শীতের সময় উলের কানটুপির জুড়ি মেলা ভার। এ ছাড়াও সুতি, পশমি কাপড়ের পাশাপাশি নিট কাপড়ের কানটুপির কদর বেড়েছে। এসব টুপি চাইলেই কান পর্যন্ত টেনে পরা যায় আবার কেউ চাইলে শুধু মাথা ঢাকতে ব্যবহার করতে পারেন। হিম হিম দিনের উষ্ণতায় কানটুপির সত্যিই কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই! একটা সময় ছিল, যখন মানুষ টুপি পরত শীত নিবারণের জন্য। কিন্তু এখন কেবল শীত নয়; মানানসই একটি টুপি ফুটিয়ে তুলতে পারে আপনার ব্যক্তিত্বকেও। বিভিন্ন রকমের কানটুপি আছে বাজারে। মাঙ্কি টুপি, মাফলার টুপি আর ঝোলা টুপি। এ ছাড়াও ক্ল্যাসিক ফ্যাশনের টুপির মধ্যে মোটা উলের টুপি, একসঙ্গে মুখ ও মাথা ঢাকার টুপিও পাওয়া যায়। আপনার মুখের গড়ন আর ত্বকের সঙ্গে মিল রেখে টুপি বাছাই করাটা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। টুপির রং নির্বাচনে মাথায় রাখা উচিত যেন প্রায় সব পোশাকের সঙ্গেই পরিধান করা যায়। বিশেষ করে কালো, খয়েরি ও নীল রঙের টুপিগুলো সুন্দর মানিয়ে যায় যে কোনো পোশাকের সঙ্গে। আর উৎসবমুখর পরিবেশে লাল, সাদা অথবা সবুজ রঙের টুপিও পরখ করে দেখতে পারেন। টুপির রং নির্বাচনের পর দৃষ্টি দেওয়া উচিত আকারের দিকে। মাথায় রাখতে হবে, টুপি যেন একটু বড় হয়। তবে তা মাথায় একটু ঢিলে হবে আর পরেও পাওয়া যাবে আরাম।

শীতের ফ্যাশনে ট্রেন্ডে সোয়েটার, জ্যাকেট দুটিই পরতে দেখা যায় এ সময়ের তরুণদের। এর সঙ্গে মিল রেখে বাছাই করতে হবে আপনার টুপি ও মাফলার। দেখা যায় যে, ছেলেরা মাথা ঢাকতে টুপি পরে; কিন্তু এটা আবার মেয়েদের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে। সঠিক টুপি বাছাই করতে না পারলে দেখা যাবে, টুপির কারণে মেয়েদের চুলের স্টাইল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মেয়েরা মাফলার ওড়নার মতো করে পরতে পারেন। এ ধরনের ফ্যাশন নির্ভর করবে ড্রেসকোডের ওপর। অফিসিয়াল লুকে কোট-প্যান্ট থাকলে তার সঙ্গে মানিয়ে একই কালারের মাফলার বেছে নিতে পারেন। চাইলে এটা ওড়নার মতো মাথায় পেঁচিয়ে নিতে পারেন। আবার যদি থ্রি-পিস পরে থাকেন, তাহলে শুধু মাফলারটি গলায় পেঁচিয়ে নিন। কিছু আইডিয়া নিজেই বের করে নিতে পারেন নিজের লুকের সঙ্গে মিল রেখে।

মাফলার ও টুপির সঙ্গে শীতের সময় আরাম পেতে বেছে নিন হাতমোজা। বাজারে পাওয়া যায় হরেক রকমের হাত মোজা। আপনার জ্যাকেট, সোয়েটার, মাফলার ও টুপির সঙ্গে মিল রেখে পাতলা বা ভারী হাতমোজা বেছে নিতে পারেন অনায়সেই।

দরদাম :

মাফলারের মধ্যে হাতেবোনা ও চিকন উলের বিভিন্ন চেক মাফলারের দাম পড়বে ১০০-৮০০ টাকার মধ্যে। দেশি মাফলারগুলো পাওয়া যায় ১০০-৩০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া স্টাইলিশ মাফলারের দাম পড়বে ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে। ডিজাইন, কাপড় ও আকারভেদে ১০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যেই পেতে পারেন পছন্দের মাফলার। সিঙ্গেল পার্টের মাফলারের দাম ১০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। একটু চওড়া মাফলারের দাম শুরু হয় ২০০ টাকা থেকে। টুপির মধ্যে ফোল্ডিং ১০০ টাকা, মাঙ্কি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, চায়না টুপি ১৫০ থেকে ৬০০ টাকা, খরগোশ টুপি ২০০ টাকা, মেকি ১৫০ টাকা, ক্যাপ সিস্টেম কানটুপি ১৮০ টাকা। হাতমোজা পাওয়া যায় ১০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে।

কোথায় পাবেন :নিউমার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজা, বসুন্ধরা সিটিসহ আশপাশের অভিজাত শপিং মলগুলোর পাশাপাশি দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোয় পেয়ে যাবেন পছন্দের ট্রেন্ডি মাফলার, কানটুপি ও হাতমোজা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *