২০১৯ সালে বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনে ৩৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৪১৩ জন নারী ধর্ষণ ও গণধর্ষণ, উত্ত্যক্ত ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ২৫৮ নারী। এদের মধ্যে উত্ত্যক্তের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১৮ নারী। এছাড়া নির্যাতনে ৪৮৭ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) তাদের এক প্রতিবেদনে এ পরিসংখ্যান দিয়েছে। আজ সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ-২০১৯’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি।
আসকের জ্যেষ্ঠ উপ-পরিচালক নিনা গোস্বামী প্রতিবেদন তুলে ধরে জানান, সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে ৩৮৮ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। ২০১৮ সালের ৯ই মার্চ মাদকবিরোধী এক সমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ক্রসফায়ার নয়, আত্মরক্ষার খাতিরেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি ছোড়ে।
যা প্রকারান্তরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে উৎসাহিত করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের হেফাজতে ১৪ জন মারা যান। গ্রেপ্তারের আগে নির্যাতনে মারা যান ৬ জন এবং গুলিতে নিহত হয়েছেন আরো ১২ জন। এ বছর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ৩৭ জন এবং তাদের শারীরিক নির্যাতনের কারণে ৬ জনসহ মোট ৪৩ জন মারা গেছে। এ বছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ১৩ জন অপহরণ, গুম ও নিখোঁজের শিকার হয়েছেন, তাদের মধ্যে পরবর্তীতে ৫ জনের সন্ধান পাওয়া গেলেও বাকি ৮ জন এখনও নিখোঁজ বলে জানায় আসক।
আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে সারাদেশে ধর্ষণ ও দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এক হাজার ৪১৩ নারী। এর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৭৬ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ১০ জন। অথচ ২০১৮ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ৭৩২ নারী। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিলো ৮১৮টি।
এ বছর নারী উত্ত্যক্তকরণ যৌন হয়রানীর ঘটনাও বেড়েছে বলে জানায় আসক। ২০১৯ সালে ২৫৮ জন নারী যৌন হয়রানী ও উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতন ও হয়রানীর শিকার হয়েছেন ৪৪ পুরুষ। উত্ত্যক্তের কারণে ১৮ নারী আত্মহত্যা করেছেন। যৌন হয়রানীর প্রতিবাদ করতে গিয়ে চার নারীসহ ১৭ জন খুন হয়েছেন। গত বছরের তুলনায় ২০১৯ সালে শিশু নির্যাতনের ঘটনাও বেড়েছে বলে এ প্রতিবেদনে বলা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ বছর শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, অপহরণ ও নিখোঁজের পর মোট ৪৮৭ শিশু নিহত হয়েছেন। গতবছর এই সংখ্যা ছিলো ৪১৯টি। বছর জুড়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর বাধা এসেছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে। এছাড়া এ বছর ১৪২ জন সাংবাদিক শারীরিক নির্যাতন, হামলা, হুমকি ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। আর বছরের মাঝামাঝিতে ‘পদ্মা সেতুতে মাথা লাগবে’ গুজব ছড়ানো হয়। হঠাৎ করে ছেলে ধরা আতঙ্কের মধ্যে নিরহ মানুষদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ বছর গণপিটুনিতে ৬৫ জন মারা যান।
এসব বিষয় তুলে ধরে আসক সরকারের কাছে কয়েকটি সুপারিশও করেছে। এগুলো হল- এ পর্যন্ত সংঘটিত সকল গুম, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তে নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী, নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের ম্যান্ডেট বাস্তবায়নে কাজ করতে সরকারকে সহযোগিতার করার সুপারিশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- আসকের মহাসচিব তাহমিনা রহমান, নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা, জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবিরসহ আরো অনেকে।