ব্যাপক কড়াকড়ির মধ্যে নতুন বছর-২০২০ সালকে বরণ করে নিতে প্রস্তুতি চলছে। থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এরইমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাস্তার মোড়ে, ফ্লাইওভারে ও খোলা কোনো জায়গায় থার্টিফার্স্টের কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না। তারকা হোটেলের ইনডোরে কোনো আয়োজন করতে হলে ডিএমপির অনুমতি নিতে হবে। তবে ইনডোরের অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের অশ্লিলতায় জড়ালে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পটকা আতশবাজিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। থার্টিফাস্ট উদযাপন প্রতিটি মদের বারও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এছাড়া প্রকাশ্য অস্ত্রবহনও করা যাবে না।
অভিজাত এলাকার মানুষকে সন্ধ্যার মধ্যে বাসায় প্রবেশ করতে হবে। মাতাল হয়ে গাড়ি চালানো ও বেপরোয়া রেসিং থেকে বিরত থাকতে হবে। এজন্য প্রতিটি মোড়ে মোড়ে এ্যালকোহল টেস্টের ব্যবস্থা থাকবে। গুলশান বনানী এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এদিকে গতকাল ডিএমপি কমিশনার মুহা. শফিকুল ইসলাম থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপনের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বিগত বছরগুলোতে থার্টিফাস্ট উদযাপন সুখকর ছিল না। এসব দিক মাথায় রেখে এবছরও ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। থার্টিফাস্ট নাইটে ইউনিফর্মের পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন থাকবে। বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের পাশাপাশি সোয়াত টিম মুভমেন্টে থাকবে। গুরুত্বপূর্র্ণ স্থানে সুইপিংয়ের পাশাপাশি ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশী করা হবে। আজ ভোর ৬টা থেকে পহেলা জানুয়ারি ভোর ৬টা পর্যন্ত ঢাকার প্রতিটি বারে কেনাবেচা বন্ধ থাকবে। ওই সময়গুলো প্রকাশ্যে কেউ অস্ত্র বহন করতে পারবে না। হাতিরঝিলসহ অনুমতি সাপেক্ষ যেসব স্থানে অনুষ্ঠান করা হবে রাত চারটার ভেতরে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। তারকা হোটেলের ইনডোরের অনুষ্ঠানে কোনো অশ্লিলতা করা যাবে না। আমাদের দেশের কালচারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অনুষ্ঠান করতে হবে।
অভিজাত এলাকা গুলশান বনানী ও বারিধারা এলাকার বাসিন্দাদের জন্য চলাচলের ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা আজ সন্ধ্যা ৮টার ভেতরে বাসায় প্রবেশ করতে হবে। আটটার পরে এসব এলাকায় বহিরাগতদের প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। স্থানীয়রা যদি প্রবেশ করতে চান তবে তাদেরকে কাকলি ও আমতলি মোড়ের চেকপোষ্ট হয়ে প্রবেশ করতে হবে। একইভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ধ্যা ৬ টার পর বহিরাগতরা প্রবেশ করতে পারবে না। এরপরে যারা প্রবেশ করবে তারা শুধুমাত্র শাহবাগ মোড় ও নীলক্ষেত মোড় দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। তবে সেখানে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে পরিচয়পত্র দেখিয়ে প্রবেশ করতে হবে। আবাসিক শিক্ষকদেরকেও একই গেট দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপনের নিরাপত্তা নিয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, নির্বিঘ্নে যাতে থার্টিফাস্ট উদযাপন করা যায় সেজন্য আমরা ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নিয়েছি। গোয়েন্দা টিমের সঙ্গে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রয়েছে। বড়দিনকে ঘিরে থ্রেট ছিল। আমরা সবাই মিলে কাজ করায় নির্বিঘ্নে বড়দিন উদযাপন করেছি। থার্টিফাস্টকে ঘিরে যেসব থ্রেট আছে সেগুলো আমরা এনালাইসিস করছি। সোস্যাল মিডিয়ায় নজরদারি চলছে।
থার্টি ফাস্ট উদযাপন নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ইংরেজি নববর্ষের প্রথম প্রহর উদযাপনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনেরর নিরাপত্তা হুমকি নেই। ইতিমধ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এ রাতে যাতে কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি-উচ্ছৃঙ্খলতা না হয় সেদিকেও কড়া দৃষ্টি রাখবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দারা ইতিমধ্যে তথ্য সংগ্রহ করেছে। এ উদযাপনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের হুমকি নেই। তবে রাতে রাস্তা বন্ধ করে বা অন্যকে কষ্ট দিয়ে যাতে কোনো অনুষ্ঠান না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ঢাকার বেশ কিছু অভিজাত হোটেল, ক্লাবে থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রতিটি হোটেলেই আজ রাত ১১টা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ডিজে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। এসব পার্টির জন্য ভাড়া করা হয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক ডিজে গার্লকে। থার্টিফাস্ট নাইটকে প্রাণবন্ত করতে তারা প্রস্তুতি নিয়েছেন। এরই মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন পাঁচ তারকা হোটেলে থার্টিফার্স্টের বিশেষ আয়োজন উপলক্ষে টিকেট বিক্রি প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তে টিকেট বিক্রি।
আয়োজনের কমতি নেই: প্রশাসনের কড়াকড়ি স্বত্ত্বেও অভিজাত হোটেল ও মধ্যম মানের হোটেলে আয়োজনের কমতি নেই। হোটেলগুলোতে ডিজে পার্টিসহ নানা জাকজমকপূর্ণ আয়োজন করা হয়েছে। সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া এসব আয়োজন চলবে ভোর রাত পর্যন্ত। হোটেল লা মেরিডিয়ানের কাস্টমার হোস্টেস শারমিন বলেন, থার্টিফাস্ট উপলক্ষে হোটেল থিম সাজানো গোছানো থাকবে। এছাড়া থার্টিফার্স্টের আয়োজনে থাকছে ডিজে পার্টি, ফ্যাশন শো এবং ডান্স। আয়োজক সজল বলেন, কাস্টমারদের সুবিধার্থে নাম ঠিকানা বললে সেই ঠিকানায় আমরা টিকেট পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা রেখেছি। থার্টিফার্স্ট উপলক্ষে বুফেতে কিছু বাড়তি ফুড আইটেমের ব্যবস্থা থাকবে। ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের সিনিয়র সুপারভাইজার আসাদ বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে আমাদের মোট তিন জায়গায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। রুফটপ, বার এবং সেলিব্রেশন হলে ডিজে প্রোগ্রাম, ফায়ারবক্স, ফ্যাশন শো এবং মিউজিক্যাল নাইটের ব্যবস্থা থাকবে। আমাদের টিকেটের মূল্য ৫ হাজার এবং আরেকটি ৩ হাজার টাকা। ৫ হাজার টাকার টিকেট কিনলে এর সঙ্গে এক বক্স খাবার ও ড্রিংকস ফ্রি দেয়া হবে। এই টিকেট দিয়ে আমাদের তিনটি আউটলেটেই প্রবেশ করতে পারবে। আর ৩ হাজার টাকার টিকেটের সঙ্গে শুধুমাত্র একটি ফ্রি ড্রিংকস দেয়া হবে। এই টিকেটে শুধুমাত্র দুটি ভেন্যুতে প্রবেশ করতে পারবে। তবে অনুষ্ঠানে সব খাবারই আলাদাভাবে কিনে খেতে হবে।
প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের সুপারভাইজার দুর্গা বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে আমাদের বিশেষ বুফে আয়োজন রয়েছে। বুফে টিকেট ৪ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া মিউজিক্যাল নাইট নামে একটি অনুষ্ঠান আছে। এটার সঙ্গে কেউ রুম বুক করলে সেক্ষেত্রে বিশেষ ডিসকাউন্টের ব্যবস্থা থাকবে। অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭ টায় শুরু হয়ে শেষ হবে রাত ১টায়। এছাড়া স্পেশাল ডিজে পার্টির আয়োজন করা হবে। এটা নতুন বার ‘প্যাসিফিক এ্যভিনিউ’তে’ হবে। এটার কাপল টিকেট ৮ হাজার ৫০০ টাকা। ডিজে পার্টি রাত ৮টায় শুরু হয়ে চলবে রাত ২টা পর্যন্ত। এছাড়া পুল ক্যাফেতে বারবিকিউ স্পেশালের ব্যবস্থা থাকবে। এখানে অংশ নিতে হলে জনপ্রতি ৩ হাজার ৫০০ টাকা প্রবেশ ফি দিতে হবে।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সার্ভিস অফিসার রেদওয়ান বলেন, থার্টিফার্স্ট উপলক্ষে আমাদের হোটেলে শুধুমাত্র একটি ডিনার পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। ডিনার পার্টিতে অংশ নিতে চাইলে জনপ্রতি ৬ হাজার ৫০০ টাকা করে টিকেট কিনতে হবে। এখানে আলাদা কোনো প্রবেশ ফি নেই। তবে আমাদের একটি প্যাকেজ আছে এবং এর সঙ্গে মাল্টিকুইজিং বুফে ফুডের ব্যবস্থা থাকবে। ডিনার পার্টি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হবে এবং রাত ১১টায় শেষ হবে। সিকিউরিটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে আমাদের এখানে আলাদা কোনো বিনোদন পার্টির ব্যবস্থা করা হয় নি।