ঢাকা:লজ্জাবতী। একটি গাছের নাম। দিনের আলোতে লজ্জাবতী পাতা মেলে ধরে। আলো নেভার সাথে সাথে ঝিমিয়ে যায়। তবে দিনের আলোতে উজ্জ্বীবিত থাকা অবস্থায় যদি কেউ একটু ছুঁয়ে দেয়, তবে ঝিমিয়ে যায়। তবে শুধু প্রাণী নয়, কোন বস্তুও যদি ছুঁয়ে দেয় তবে লজ্জাবতী নুয়ে পড়ে ও লজ্জায় মিলিয়ে যায়। কিছুক্ষন পর বা আবার আলো পেলে চোখ মেলে তাকায়।
সুতরাং প্রকৃতির কোন উপাদানের ছুঁয়া পেলেও প্রকৃতির আরেক উপাদান তা সহ্য করতে পারে না। তাহলে সহজেই প্রশ্ন এসে যায়, প্রকৃতির এক উপাদানও যদি অন্য উপাদানকে সহ্য করতে না পারে, তবে মানুষ কি ভাবে মানুষকে সহ্য করবে! এটি নিয়ে প্রশ্ন আসাও স্বাভাবিক।
যেহেতু প্রকৃতির উপাদান প্রাণী নয়, সেহেতু প্রাণীর মত প্রকৃতির জীবন যাপনও এক নয়। মানুষ স্বার্থের জন্য পাগল কিন্তু প্রকুতি তা নয়। মানুষ সহজে কিছু দিতে চায় না, আর প্রকৃতি শুধু দেয় কিন্তু নেয় না। প্রকৃতির জীবন যাপন প্রাকৃতিক আর মানুষের জীবন যাপন জাগতিক। মানুষ কাজ করে নিজের জন্য বেশী আর প্রকৃতি কাজ করে অন্যের জন্য, নিজের জন্য নয়।
মানুষ মানুষের জন্য এটা মানবতার বানী। কিন্তু মানুষ মানুষের জন্য এই রীতি অনেকটা বিলিন। কিছু মানুষ মানুষের জন্য কাজ করে আর বাকীরা সুবিধাভোগী।
লজ্জাবতী গাছের সাথে মানুষের তুলনা করলে অনেক কিছু বুঝা যায়। মানুষের মধ্যেও লজ্জাবতীর মত মানুষ আছে। সেরকম মানুষগুলো অনেকটা নীরবে নিভৃতে জীবন যাপন করেন। এই মানুষগুলো শুধু দিয়ে যায়, নিয়ে যায় না, তারা শুধু রেখে যায় অন্য মানুষদের জন্য। মানুষের জন্য কাজ করা ওই মানুষগুলো সম্মানিত হওয়ার পরিবর্তে সুবিধাভোগীদের দ্বারাই অপমানিত হয় বেশী। লজ্জাবতী গাছকে কোন মানুষ বা বস্তু ছুঁয়ে দিলে যেমন প্রতিশোধ বা প্রতিবাদ না করে সাময়িকের জন্য ঝিমিয়ে যায় ঠিক তেমনি মানুষের জন্য জন্ম নেয়া মানুষগুলোও অপমানে লজ্জাবতী হয়ে যায়।
আজকের সমাজ ব্যবস্থায় লজ্জাবতী মার্কা মানুষের বড়ই অভাব। দিন দিন লজ্জাকারী মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে নতুন নতুন অপরাধ প্রতিমুহুর্তে বাড়ছে। সম্মানী লোককে সম্মান করতে না পারার কারণে সম্মানী মানুষ জন্মাচ্ছেন না। তাই লজ্জাবতী মানুষের সাংখ্যাও কমছে। এই নৈতিক অবস্থার উন্নতি না হলে এক সময় সমাজ ও দেশ অনাচারে ডুবে যাবে এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।