ডেস্ক: ভারতীয় পার্লামেন্ট তথা লোকসভা ভোটে বিজেপি একা তিন শ’র বেশি আসন পেয়ে দ্বিতীয় মোদি সরকার গঠন করেছিল। মনে করা হয়েছিল, আগামী পাঁচ বছরে বিরোধীরা এই ধাক্কা সামলে উঠতে পারবে না। বিজেপি নেতৃত্ব ধরেই নিয়েছিল, আগামী দিনের একের পর এক রাজ্য বিধানসভা ভোটেও নরেন্দ্র মোদির অশ্বমেধের ঘোড়া আর থামবে না। ২০১৮ সালের মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে বিজেপির পরাজয়কে বস্তুত ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেছে বিজেপি।
কিন্তু লোকসভা ভোটের বিপুল জয়ের মাত্র ৫ মাসের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড সর্বত্র বিজেপি খারাপ ফল করছে। সর্বোপরি বিজেপি বিরোধীরা এককাট্টা হলেই বিজেপি মুখ থুবড়ে পড়ছে।
ঝাড়খণ্ডে সোমবার যেভাবে বিজেপি সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত হয়েছে, তারপর নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহের কাছে সব থেকে বড় উদ্বেগ হলো, আসন্ন দিল্লি ও বিহারের ভোট। দিল্লিতে ২০১৫ সালে মোদি জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা অবস্থাতেই বিজেপিকে গোহারা হারতে হয়েছিল কেজরিওয়ালের কাছে। এবারও কি দিল্লি অধরাই থেকে যাবে? ঝাড়খণ্ডের মতো দিল্লিতেও হারতে হবে? এই চিন্তাই শুরু হয়েছে বিজেপির মধ্যে। একইভাবে বিহার নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ, সাম্প্রতিক উপনির্বাচনগুলোতে আরজেডি-কংগ্রেসের জোট এনডিএকে হারিয়ে একাধিক আসনে জয়ী হয়েছে।
ঝাড়খণ্ড বার্তা দিলো, মানুষ কেন্দ্রে এখনো মোদিকে সমর্থন করলেও বিস্ময়করভাবে রাজ্যের ভোটে সেই মোদির দলকেই প্রত্যাখ্যান করছে। আশঙ্কার বিষয় হলো, এই প্রবণতা চলতে থাকলে ২০২০ সালে দিল্লি ও বিহারেও বিজেপিকে বড় ধাক্কা খেতে হবে। আর ২০২১ সালে আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরলে ভোট। এই চার রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গকেই পাখির চোখ করেছেন নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ। কিন্তু ভারতজুড়ে এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়েছে। আর্থিক মন্দা, কৃষি সমস্যা, কর্মহীনতা নিয়েও ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর জেরে ২০২১ সালে বঙ্গদখল কি আদৌ সম্ভব বিজেপির পক্ষে? আসাম নিয়েও চিন্তা বেড়েছে। তামিলনাড়ু ও কেরলে জয়ের কোনো সম্ভাবনাই নেই। উপরন্তু পশ্চিমবঙ্গে তিনটি আসনের উপনির্বাচন প্রমাণ করেছে তৃণমূল এখনো ভোটব্যাংক অটুট রেখেছে। সুতরাং ২০২০ সালের দিল্লি ও বিহার এবং ২০২১ সালে চার রাজ্যে বিজেপি অপ্রত্যাশিত ভালো ফল করতে না পারলে দলের শক্তিক্ষয় চলতেই থাকবে। আর তা হলে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস মুক্ত ভারত নয়, উল্টে অনেক রাজ্যই বিজেপি মুক্ত হয়ে যাবে।
সোমবার ঝাড়খণ্ড জয়ের পর বিজেপি ও এনডিএ শাসিত রাজ্যের তুলনায় অবিজেপি শাসিত রাজ্যের সংখ্যা আরো বেড়ে গিয়েছে। আগামী দিনে এই সংখ্যা আরো বেড়ে গেলে সেটা হবে মোদির পক্ষে অসম্মানের। দেখা যাবে, সিংহভাগ রাজ্যই চালাচ্ছে বিরোধীরা। কমে যাবে কেন্দ্রের কর্তৃত্ব। ঝাড়খণ্ড হাতছাড়া হওয়ায় তাৎক্ষণিক ধাক্কা হলো, আরো একটি রাজ্য নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি বিরোধী হয়ে গেল। আগামীদিনের চিত্র কি তাহলে একঘরে কেন্দ্র বনাম রাজ্যগুলোর জোট?
সূত্র : বর্তমান