ঢাকা: ডাকসু ভবনে ঢুকে ভিপি নুরুল হক নুর এবং অন্যদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। দুপুর ১২টায় এ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর ও তার সহযোগীদের ওপর হামলার ঘটনায় আহত তুহিন ফারাবিকে (২৫) লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এরই মধ্যে ফারাবির মা-বাবাসহ স্বজনদের ডাকা হয়েছে হাসপাতালে। রবিবার (২২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে স্বজনরা ফারাবির কাছে যান। সেখানে তাঁর চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন তাঁরা।
তুহিন ফারাবি রাজধানীর চার্টার্ড ইউনিভার্সিটি কলেছের শিক্ষার্থী। বাড়ি নোয়াখালী সোনাইমুড়ি উপজেলায়। তিনি বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক।
হামলায় গুরুতর আহত ডাকসুর ভিপি নুরকে হাসপাতালের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। তার অবস্থা উন্নতির দিকে বলে জানা গেছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, নুর ও সোহেলকে রাতে কেবিনে স্থানান্তরিত করা হয়। সন্ধ্যার দিকে ফারাবীকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। আমিনুল নামের একজনকে জরুরি বিভাগের ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টারে ভর্তি রাখা হয়েছে।
গতকাল রবিবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনে ভিপি নুরুল হক নুর এবং অন্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে নুর ও ফারাবীসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন।
হামলার পর সন্ধ্যায় ভিপি নুরসহ আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেখতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এ ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। রাতে আহতদের দেখতে হাসপাতালে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
হামলায় নুরুল হক নুর ছাড়াও আহতরা হলেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান, ফারুক হাসান, এ পি এম সুহেল, মশিউর রহমান প্রমুখ। আহতদের মধ্যে নুর, নুরের ছোট ভাই আমিনুর এবং এ পি এম সুহেল ঢাকা মেডিক্যালের আইসিইউতে রয়েছেন। লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন চার্টার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক তুহিন ফারাবী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশ (বুলবুল-মামুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বুলবুল ও মামুনের নেতৃত্বে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের কার্যালয়ে যায়। সেখানে বহিরাগতদের রাখার অভিযোগ তুলে নুরদের ওপর হামলা ও অফিস কক্ষে ভাঙচুর চালিয়ে ডাকসু ভবন থেকে নেমে ভবনের নিচে অবস্থান নেয় তারা। এ সময় ডাকসু ভবনের গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়।
ভিপি নুরের সংগঠন ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘প্রথমে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ডাকসু ভবনের ভেতরে অবস্থানরত ভিপি নুরকে হুমকি দিয়ে কক্ষ ভাঙচুর করেন। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নুরসহ বেশ কয়েকজনকে রুমে আটকে মারধর করেন। মারধরে নুরসহ প্রায় ৪০ জনের মতো আহত হয়েছেন।’
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানান, ডাকসু ভবনের মধ্যে ভিপি নুরের সমর্থক এবং নিচে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। একপর্যায়ে তাঁরা একে অপরকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ডাকসু ভবনে প্রবেশ করেন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন। সেখানে গিয়ে বহিরাগতদের বের হয়ে যেতে বলেন সাদ্দাম হোসেন। এ সময় নুরের কয়েকজন সমর্থক বের হয়ে গেলে নিচে থাকা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মধুর ক্যান্টিন এলাকায় তাঁদের ওপর হামলা চালায়।
একপর্যায়ে নুর সনজিতকে বলেন, ‘আপনি ডাকসুর কেউ না, এখানে কেন এসেছেন?’ সনজিত ও সাদ্দাম সেখান থেকে বের হয়ে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নুরের কক্ষে থাকা রাশেদ, ফারুকসহ অন্যদের বেধড়ক মারধর করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানীসহ সহকারী প্রক্টররা ঘটনাস্থলে এসে তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।