ওবায়দুল কাদেরই নাকি দীপু মনি আজমত উল্লাহ

Slider জাতীয় বাংলার মুখোমুখি


আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে নতুন কমিটিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। বাদ পড়ছেন বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ নেতা। সভাপতিমণ্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের বেশির ভাগ নেতা এবার তাঁদের পদ হারাচ্ছেন। সরকারের প্রথম মেয়াদের মন্ত্রিসভার মতো বিপুল চমক নিয়ে আসছে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি। এমনকি সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের পাশাপাশি আরো দুই বিকল্প দলটির হাইকমান্ডের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। তাঁরা হলেন বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান। গণভবন ও আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্র কালের কণ্ঠকে এ তথ্য জানিয়েছে।

আজ শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের দুই দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করবেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামীকাল শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশন বসবে। সেখানে প্রথমে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত করবেন কাউন্সিলররা। সে ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বিকল্প এখন পর্যন্ত কেউ না থাকায় পুনরায় তিনি সভাপতি নির্বাচিত হবেন, এটা নিশ্চিত। এরপর অধিবেশনে উপস্থিত কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে একজন সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রস্তাব করলে আরেকজন তা সমর্থন করবেন। এভাবে চূড়ান্ত হবে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক। এরপর আওয়ামী লীগের রীতি অনুযায়ী কাউন্সিলররা নবনির্বাচিত সভাপতির ওপর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ভার ন্যস্ত করবেন। সম্মেলন শেষে কয়েক দিন পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী লীগে এই রীতিই চলে আসছে। কিন্তু এবার হতে পারে এর ব্যতিক্রম।

দলটির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র কালের কণ্ঠকে জানায়, আগামীকাল শনিবার আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের অন্য গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত নেতাদের নাম ঘোষণা করার প্রস্তুতি চলছে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাঁর একজন আস্থাভাজন দলীয় নেত্রীকে নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির এই তালিকা চূড়ান্ত করছেন। সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশমতো ওই নেত্রী কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে নেতাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করছেন। আজ সকালে সম্মেলন শুরুর আগে এই তালিকা পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সূত্রটি জানায়, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের পাশাপাশি বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানের নাম সক্রিয় বিবেচনায় রেখেছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। তাঁদের তিনজনের মধ্য থেকে যেকোনো একজনকে বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সূত্রটি জানায়, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি স্বামীর অসুস্থতার কারণে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিতে অনাগ্রহী। তাঁর স্বামী বিশিষ্ট আইনজীবী ড. তৌফিক নাওয়াজ স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর ভারতের মুম্বাইয়ে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মন্ত্রিত্ব ও দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ডা. দীপু মনিকে সময় করে চিকিৎসাধীন স্বামীর পাশে থাকতে হচ্ছে। সে জন্য প্রতি সপ্তাহে তাঁকে ভারতের মুম্বাইয়ে উড়ে যেতে হয়। এ অবস্থায় এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়—এমন মনোভাব তিনি আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডকে জানিয়েছেন। এর পরও দলীয় হাইকমান্ড সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাঁর নাম সক্রিয় বিবেচনায় রেখেছে বলে জানা গেছে।

গণভবনের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাখা হবে কি হবে না, সে সিদ্ধান্ত গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চূড়ান্ত করেনি আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। তাই তাঁর বিকল্প হিসেবে ডা. দীপু মনির পাশাপাশি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানের নাম রাখা হয়েছে। আজমত উল্লাহ খান রাজধানীর নিকটবর্তী টঙ্গী পৌরসভার তিনবারের নির্বাচিত মেয়র ছিলেন। তিনি গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। টঙ্গী পৌরসভা গাজীপুর সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর এই মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। গত বছর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হন। সেখানে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বিশেষ আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীর আলম। বর্তমানে তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে দলীয় কাজে আরো সক্রিয় হওয়ায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই হয় অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানের।

সূত্র জানায়, দলের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যের তালিকায় রয়েছেন। ডা. দীপু মনি শেষ পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক না হলে তাঁকেও সভাপতিমণ্ডলীতে নেওয়া হবে। এ ছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের তালিকায় রয়েছেন। তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহ্মুদকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অথবা সাংগঠনিক সম্পাদক করা হতে পারে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। এর বাইরে ঢাকাসহ ঢাকার বাইরের প্রায় ৩০ নারীর নাম আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের তালিকায় রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *