ঢাকা: আজ ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকাল ৩.০০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তন, ঢাকায় “তীব্র নীল নিঃশেষে লাল-শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার” বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী জনাব ডাঃ দীপু মনি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জনাব মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল এম পি এবং যুব ও ক্রীড়া সচিব মোঃ আখতার হোসেন।
মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস- চ্যান্সেলর ড. মো: আখতারুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন বইটির সম্পাদক জনাব মোঃ রশীদুল হাসান। স্বাগত বক্তব্য বইটির সহ-সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, গাজীপুরের মাটি ও মানুষের প্রিয় নেতা শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার স্যার আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু রয়েছে তার কর্ম, তার জীবনাদর্শ। তিনি ছিলেন সৎ, নির্লোভ নিরহংকার একজন নীতিবান মানুষ। তিনি সারাজীবনই সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিলেন। মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ায় তাকে অকালে মৃত্যু বরণ করতে হয়েছিল। তবে তিনি বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন মানুষের অন্তরে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার একজন কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ, আদর্শ শিক্ষক ও জনপ্রিয় শ্রমিক নেতা। তিনি ১৯৬৬- র ছয়দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০- র নির্বাচন, ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ সহ সব আন্দোলন সংগ্রামে আহসানউল্লাহ মাস্টার স্যার সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতের দেরাদুনে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি মুজিব বাহিনীতে যোগদান করেন এবং পাক আর্মির বিরুদ্ধে একাধিক সফল অপারেশন পরিচালনা করেন।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতস্বরূপ দেশ স্বাধীনের পর তাকে ভালো চাকরির সুযোগ দেয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেন নি। তিনি শিক্ষকতার মতো মহান পেশা বেছে নিয়েছিলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্ন ও আর্দশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, সেই স্বপ্ন ও আর্দশের ধারক ও বাহক ছিলেন শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার। বঙ্গবন্ধুর মতোই তিনি কখনো ভাবতেই পারেন নাই তাকে হত্যা করা হতে পারে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, তাকে নির্মম ভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হয়েছে। তাই তার রেখে যাওয়া আর্দশ ও কর্মকে বুকে ধারন করে দেশ সেবায় আমাদের কে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জনাব মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল এম পি বলেন, মানুষকে ভালোবাসাই হলো আসল সম্পদ কথা গুলো প্রায়ই বলতেন আমার বাবা শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার। তিনি বলেন, শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার, শাহ এস এম কিবরিয়া, আইভি রহমানদের আত্মত্যাগ ব্যর্থ হবে না। তাদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ জননেত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেয়েছে। ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের পরিকল্পনাকে ধারন করে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্র গঠনের পথে অগ্রসর হচ্ছে। আমার বাবার রাজনীতির অনেক কাছের মানুষদের আবেগ অনুভূতি নিয়ে এই বইটি লেখা হয়েছে। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে জনমানুষের সাক্ষাৎকার ভিত্তিক এই ইতিহাস কেন্দ্রীক বইটি পূর্ণতা লাভ করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার স্থান ও কালোত্তীর্ণ একজন মানুষ। ভাবতে অবাক লাগে, তিনি ছিলেন একাধারে বরেণ্য রাজনীতিবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আর্দশ শিক্ষক। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আর্দশের একজন অকুতোভয়ী সৈনিক। তিনি কখনোই অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করেন নি। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির কাছে মাথা নত করেন নি।
গভীর দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা আর সামাজিক মূর্ল্যবোধ এ তিনটি বিরল গুনের অভূতপূর্ব সম্মিলন ঘটেছিল আমাদের সবার প্রিয় আহসানউল্লাহ মাস্টারের চরিত্রে।
সভাপতির বক্তব্যে বইটির সম্পাদক মোঃ রশীদুল হাসান বলেন, আমার কেবলই মনে হতো সব জনপ্রিয় ব্যক্তিবিশেষ সম্পর্কে যদি অল্পবিস্তর জ্ঞান অর্জন করা যেতো। আর সেই আফসোস থেকেই বইটি লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। বইটির সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।