ভারতের অনেকগুলো শহরে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে এবং সংশোধিত নাগরিক আইনের প্রতিবাদে পঞ্চম দিনের মতো বিক্ষোভ চলছে। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
দিল্লী, মুম্বাই, হায়দ্রাবাদ, কলকাতা – এসব বড় শহরে ব্যাপক প্রতিবাদের খবর পাওয়া গেছে।
Ad by Valueimpression
বিবিসি নিউজ অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, রাস্তাঘাটে ব্যারিকেড ও বাসে আগুন দেয়ার জের ধরে রবিবার পুলিশ টিয়ারশেল ছুঁড়ে এবং অনেককে আটক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।
নতুন আইনে বাংলাদেশসহ ভারতের প্রতিবেশী তিনটি দেশ থেকে আসা অমুসলিম সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে।
তবে যারা বিক্ষোভ করছে তারা প্রতিবাদের কারণ হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন কথা বলছেন।
কিছু সমালোচক বলছেন আইনটি মুসলিম বিরোধী, আবার সীমান্ত অঞ্চলে অনেক এ আইনে কারণে বড় ধরণের অভিবাসী ঢলের আশংকা করছেন।
প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার এবং উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে তা ছড়িয়ে পড়ার আগে ছয় জন নিহত হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে।
কিন্তু তারপরেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা দেশজুড়ে সোমবার বিক্ষোভ করছে।
কলকাতায় লাখ লাখ মানুষের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস।
আরো অনেক শহরে বিক্ষোভের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বেশ কয়েকজন আইনজীবী এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য সুপ্রিম কোর্টের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু প্রধান বিচারপতি বলেছেন, শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ বন্ধ না করা পর্যন্ত তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডা তাদের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে – বিশেষ করে উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে।
দিল্লিতে কী হচ্ছে?
শিক্ষার্থীদের সমাবেশ শেষে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের পর সোমবার সকালে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
রবিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৫ জনকে আটকের পর সোমবার তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নাজমা আক্তার পুলিশী পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তারা পুলিশের বিরুদ্ধে একটি মামলা করবেন যাতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি করা হবে।
তবে শিক্ষার্থী নিহত হবার গুজবকে তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তবে এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে ঠিক কারা সহিংসতা শুরু করেছিলো। স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে শিক্ষার্থী ও পুলিশসহ অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা সহিংসতা থেকে দুরেই ছিলো – যা পুলিশও ব্যক্তিগতভাবে স্বীকার করছে।
অন্য শহরগুলোতে প্রতিক্রিয়া কেমন?
লখনৌ থেকে আসা লাইভ ফুটেজে দেখা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ছে।
শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসেই অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
টিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে পুলিশ ছাত্রদের ওপর লাঠিচার্জ করছে।
পরিস্থিতি এখন উত্তেজনাময় এবং আরো বিক্ষোভের আশংকা করা হচ্ছে। মর্যাদাপূর্ণ ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে।
সংহতি প্রকাশ করে পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা এসেছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে।
রোববার কী হয়েছিলো?
জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমর্থনে ভারতজুড়ে বহু শহরে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসেন।
আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে, যার জের ধরে ক্যাম্পাস ৫ই জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বড় বিক্ষোভ হয়েছে হায়দ্রাবাদেও, যেখানে দিল্লিতে পুলিশী হামলার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন মৌলানা আজাদ উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
মোমবাতি হাতে মিছিল করেছেন মুম্বাইয়ের টাটা ইন্সটিউট অফ সোশাল সায়েন্সেস-এর শিক্ষার্থীরা।
দিল্লিতে ছাত্ররা অভিযোগ করেছে যে পুলিশ রোববার শিক্ষার্থীদের শারীরিক হামলা ও যৌন হয়রানি করেছে।
বারাণসী ও কলকাতার মতো আরো অনেক শহরে সংহতি প্রকাশ করে মিছিল হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি