এখনো থমথমে শিলং। রাস্তায় গাড়ি চলছে না। দোকানপাট, খাবার রেস্টুরেন্ট বন্ধ। চারদিকে গুমোট ভাব। রাস্তায় সশস্ত্র প্রহরায় আধা সামরিক বাহিনী। পর্যটকরা আটকা পড়েছে হোটেলে হোটেলে। চাপা আতঙ্কের মধ্যে শিলং ছাড়ছেন পর্যটকরা। ঝুঁকি নিয়ে রওয়ানা দিচ্ছেন বাংলাদেশের পথে।
গতকাল সকালে সিলেটের তামাবিল স্থল বন্দরে এসে পৌঁছেন কয়েকজন পর্যটক। জানান- এমনিতেই শিলং ‘ঠাণ্ডার শহর’। তার উপর কারফিউ। গোটা শহরই পরিণত হয়েছে নিরব জনপদে। এ কারণে তারা হোটেল ছেড়ে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছেন। এখনো সেখানে কয়েকশ’ পর্যটক আটকা রয়েছেন। তারা বের হতে সাহস পাচ্ছেন না। এদিকে- এই অবস্থার মধ্যও খুলে দেয়া হয়েছে তামাবিল ও ডাউকি ইমিগ্রেশন।
গতকাল ৩০-৩৫ জন পর্যটক বাংলাদেশ থেকে ভারতের মেঘালয়ের ডাউকি গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তামাবিল স্থল বন্দরের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা। তারা জানান- যারা মেঘালয়ে যাচ্ছেন তাদের সতর্ক করেই ছাড়া হচ্ছে। তারা যেনো নিজ দায়িত্বে যান সে বিষয়টিও জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তারা জানান- এখনো স্বাভাবিক হয়নি শিলং। ফলে অঘটনের আশঙ্কা রয়েছে। এ কারনেই পর্যটকদের সতর্ক করে দিয়ে ছাড়া হচ্ছে। সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান গতকাল বিকেলে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তামাবিল স্থল বন্দরের ইমিগ্রেশন খুলে দেয়া হয়। এরপর বেশ কয়েকজন পর্যটক ভারতে ঢুকেছেন। কয়েকজনও এসেছেন। দিন শেষে শিলংয়ে থাকা প্রায় ৬০ জন পর্যটক বাংলাদেশে এসেছেন বলে জানান তিনি। শিলং যাওয়ার প্রাক্কালে কয়েকজন পর্যটক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- তারা কেবল বেড়াতে যাচ্ছেন না। কাজেও যাচ্ছেন। গৌহাটি থেকে কেউ কেউ বিমানে দিল্লি যাবেন। সেখানে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস থেকে তাদের ভিসা সংগ্রহ করার কথা রয়েছে। মধ্য বয়সী এক পর্যটক জানান- তিনি ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন।
পূর্বে থেকে তারিখ নির্ধারণ করা থাকায় তাকে যেতেই হচ্ছে। নাগরিকত্ব বিলকে কেন্দ্র করে উত্তাল ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা। এ কারনে তিনটি রাজ্যে চলছে কারফিউ। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে শিলংয়ের পুুলিশ বাজারে প্রথমে কয়েকটি গাড়িতে আগুন এবং পরে বিক্ষোভের ঘটনায় কারফিউ জারি করা হয়। এই কারফিউর মধ্যে শিলংয়ের পরিবেশ অশান্ত হওয়ার ঘটনায় শুক্রবার সকাল থেকে ডাউকি সীমান্তের চেকপোস্ট দিয়ে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ কারণে শতাধিক পর্যটক ভারতে যেতে পারেননি। শনিবার সকাল থেকে আবার কয়েক জন পর্যটক ভারত যাওয়ার জন্য তামাবিলে যান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ হওয়ার পর পর্যটকদের ভারতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। পরে তারা ডাউকি ইমিগ্রেশনে গেলে ওখান থেকেও তাদের ভারত ঢোকার অনুমতি দেয়া হয়। বিকেল পর্যন্ত শিলং থেকে তামাবিল ইমিগ্রেশন দিয়ে ঢুকেন প্রায় ৬০ জন পর্যটক। এর মধ্যে পরিবার পরিজন নিয়ে কয়েকজন আসেন।
তারা জানান- শিলং শহরে কারফিউ থাকার কারণে খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে দোকান কিংবা রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় পর্যটকরা পড়েছেন বিপদের মুখে। শহরে টহল দিচ্ছে সামরিক-আধা সামরিক বাহিনী। গতকালও কারফিউ জারি থাকায় রাস্তায় যানবাহন চলছে না। তবে- পর্যটকদের জন্য কিছুটা ছাড় দেওয়া হচ্ছে। কেউ সীমান্তে আসতে চাইলে তাদের বাধা দিচ্ছে না। তবে- শিলং গৌহাটি সড়কে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ। শিলংয়ের মতো কারফিউ চলছে গৌহাটিতেও। গৌহাটিতে বাংলাদেশী অনেক পর্যটক আটকা পড়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশে ফেরত আসা পর্যটকরা।