গ্রাম বাংলা ডেস্ক: মিরপুরে কালশীতে বিহারি ক্যাম্পের ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করতে দ্রুত বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে নিতেই মিরপুরের ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
একইসাথে ওই ঘটনায় কয়েক হাজার অজ্ঞাতনামা বিহারিকে আসামী করে দায়ের করা ছয় মামলা প্রত্যাহার এবং স্থানীয় এমপির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখারও দাবি জানিয়েছে দলটি। সোমবার বিকেলে মিরপুরের কালশীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি করেন। নিহত পরিবারসহ ক্ষতিগ্রস্থদের পর্যাপ্ত দ্রুত ক্ষতিপুরণের দাবিও জানান তিনি।
এর আগে বিকেল তিনটার দিকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অন্য নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে মিরপুরের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নিহত ও আহত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে নয়া পল্টনের কার্যালয়ে এসে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ঘটনার তিন দিন অতিক্রান্ত হয়েছে। সেখানে ক্ষতিগ্রস্তরা আমাদের বলেছেন, তারা তিনদিন অভুক্ত অবস্থায় আছেন। অথচ সরকারের কোনো সংস্থা তাদের দুর্ভোগ লাঘবে এগিয়ে আসেনি।
তিনি বলেন, শবে বরাতের রাতে কালশীতে বিহারি ক্যাম্পে দুষ্কৃতিকারীরা ঘরে তালা বন্ধ করে আগুন লাগিয়ে ৯ জন মানুষ হত্যা করেছে। পরে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এটা ভয়াবহ জঘন্যতম ও বর্বরোচিত ঘটনা। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মানুষজনের সাথে আলাপ করে জানতে পেরেছি, ওই ঘটনার পেছনে অভিযোগের আঙ্গুল স্থানীয় এমপির দিকে। এই ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে আমরা দ্রুত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানাচ্ছি। আমরা মনে করি অবৈধ ও অনৈতিক সরকার জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে নিতেই এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ওই ঘটনার পর সেখানে ৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওইসব মামলায় কয়েক হাজার অজ্ঞাতনামা বিহারিকে আসামী করা হয়েছে। উদ্দেশ্য মামলা দিয়ে বাণিজ্য করা। ইতিমধ্যে ৬ জন বিহারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা অবিলম্বে দায়েরকৃত ৬ মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের আশু মুক্তি দাবি করছি।
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, স্থানীয়রা আমাদের বলেছেন, মিরপুরের ঘটনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে ঘটেছে। তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। পত্র-পত্রিকায় খবর বেরিয়ে এসেছে, কেনো এই ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দেরও অভিযোগের আঙ্গুল স্থানীয় এমপির দিকে। কিছুদিন আগে ইলিয়াস মোল্লা তাদের যুবলীগের লোকজনকে নিয়ে সেখানকার জমি দখলের জন্য এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তারা (ক্ষতিগ্রস্ত) আমাদেরকে জানিয়েছে।
কেবল তাই নয়, বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ লাইন থেকে অবৈধভাবে পাশ্ববর্তী এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার জন্য কয়েকদিন আগে ওই এমপি (ইলিয়াস মোল্লা) বিহারিদের হুমকিও দিয়ে এসেছিলেন। বলেছিলেন, নাকি বিদ্যুৎ না দিলে ৪৮ ঘন্টার ভেতরে পরিণতি পাবে। তাই আমরা এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া, মহানগর সদস্য সচিব আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবীর খোকন, আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করীম শাহিন, শিরিন সুলতানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিহারি পল্লী পরিদর্শনে ফখরুল
রাজধানী মিরপুরের বিহারী পল্লীতে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে ১০ জন নিহতের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বিকাল ৩টায় কালশীর বিহারি বস্তিতে যান তিনি। সেখানে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি নিহতের স্বজনদের সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি কিছু আর্থিক সহযোগিতা দেন মির্জা আলমগীর। এছাড়া বর্বরোচিত এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন তিনি।