ঢাকা: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ৬ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আজ সকাল ১০টার কিছু পরে আদালতে কার্যতালিকার ১২ নম্বরে থাকা খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি শুরু হয়। শুরুতে বিএসএমএমইউ’তে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়। আদালত প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করে এ আদেশ দেন।
পর্যবেক্ষণে আপিল বিভাগ বলেছেন, যদি আবেদনকারী (খালেদা জিয়া) প্রয়োজনীয় সম্মতি দেন, তাহলে মেডিকেল বোর্ড দ্রুত তার অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের (বায়োলজিক এজেন্ট) জন্য পদক্ষেপ নেবে, যা বোর্ড সুপারিশ করেছে।
শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন নিয়ে কথা বলেন। পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বক্তব্য দেন।
শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেন, এই আদালতের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। আমরা মানবিক কারণে খালেদা জিয়ার জামিন চাইছি।
খালেদা জিয়া সুস্থ মানুষ ছিলেন। কিন্তু আমরা দেখলাম, তার অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে।
আদালতকে জয়নুল আবেদীন বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা এমন যে, তিনি পঙ্গু অবস্থায় চলে গেছেন। হয়তো ছয় মাস পর তার অবস্থা আরও খারাপ হবে। এ জন্য মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হোক।
বেলা ১১টার পর আদালত বিরতিতে যান। বিরতির পর আবার শুনানি গ্রহণ করেন।
জয়নুল আবেদীনের পর খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানিতে অংশ নেন।
পরে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান শুনানি করেন।
বেলা একটার দিকে শুনানি শেষ হয়। বেলা সোয়া একটার দিকে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
এর আগে, সকাল ৯টায় আপিল বিভাগে দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। এদিন সকালে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা আপিল বিভাগে প্রবেশ করতে গেলে বাধার মুখে পড়েন। প্রবেশ পথে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আইনজীবীদের জানান, আপিল বিভাগের তালিকাভুক্ত আইনজীবী যারা (মোট ৬১৩ জন), কেবল তারাই আদালতে প্রবেশ করতে পারবেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ অবস্থানের কারণে বিএনপিপন্থি অনেক আইনজীবীই আদালতে প্রবেশ করতে পারেননি।
আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে বিএনপিপন্থি তালিকাভুক্ত আইনজীবীদের যারা আদালতে প্রবেশ করেছিলেন, তারা শুরুতেই আইনজীবীদের প্রবেশে বাধা দেয়ার বিষয়ে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহমুদ হোসেন আদালতকে বলেন, আমাদের আইনজীবীরা আদালতে প্রবেশ করতে পারছেন না। এ বিষয়টির সমাধান করা প্রয়োজন। আজ শত শত পুলিশ আদালত এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু আইনজীবীরা আদালতে প্রবেশ করতে পারছেন না।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, আমাদের দুই পক্ষের ৩০ জন করে আইনজীবীকে উপস্থিত থাকার সুযোগ দিন। পরে আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত দেন, বিএনপি ও রাষ্ট্রপক্ষের ৩০ জন করে আইনজীবী জামিন আবেদনের শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত থাকতে পারবেন।
আদালত জানান, কার্যতালিকার ১২ নম্বর বিষয়টি (খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি) যখন আসবে, তখন পাঁচ মিনিট সময় দেওয়া হবে। এ সময়ের মধ্যে দুই পক্ষের ৩০ জন করে আইনজীবী উপস্থিত হতে পারবেন আদালতে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়। এই সাজা বাতিল চেয়ে গত বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। শুনানি নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট ওই আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে বিচারিক আদালতের দেওয়া জরিমানার আদেশ স্থগিত করেন। এছাড়া বিচারিক আদালতে থাকা মামলার নথি তলব করেন হাইকোর্ট। গত ২০ জুন মামলার নথি হাইকোর্টে আসার পর খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন আদালতে তুলে ধরেন তার আইনজীবীরা। গত ৩১শে জুলাই জামিন আবেদন খারিজ করেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টে জামিন চেয়ে বিফল হয়ে গত ১৪ নভেম্বর আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন খালেদা জিয়া। এই জামিন আবেদনের শুনানিতে গত ২৮ নভেম্বর আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার সবশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা সম্পর্কে জানাতে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে বোর্ডের মেডিকেল রিপোর্ট ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেন। সেদিন (৫ ডিসেম্বর) মেডিকেল প্রতিবেদন জমা না পড়ায় শুনানি পিছিয়ে ১২ ডিসেম্বর (আজ) তারিখ ধার্য করেন আদালত।