মোঃ জাকারিয়া, গাজীপুর: ৮ ডিসেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত গাজীপুর মহানগরের পূর্বচান্দনা এলাকায় শতাধিক ব্যক্তি ডায়রিয়া রোগে হঠাৎ আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে ৪জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এখনো নতুন নতুন রোগী হাসপাতালে আসছে। এদিকে ডায়রিয়া মোকাবেলায় বিশেষ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন অনুসন্ধান করে মৃতদের পরিচয় পাওয়া গেছে।
ডায়রিয়ায় মৃত গাজীপুর মহানগরের ২৭ নং ওয়ার্ডের ৩৪/৩ পূর্বচান্দনার আলী আকবর শেখের স্ত্রী সুমা আক্তার(৩২)। গ্রামের বাড়ি গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের মরাশ গ্রামে। সুমার ভাশুর মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জানান, ৯ডিসেম্বর ভোররাতে সুমা ও সিদ্দিকুর রহমানের শাশুড়ি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। তাদের গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুমার অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যায় ঢাকার মহাখালী কলেরা হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়া হয়। মহাখালী নেয়ার পর ওই দিনই রাত পৌনে ৮টায় ডাক্তাররা তাকে মৃতু ঘোষনা করেন। সিদ্দিকুর রহমান জানান, ঢাকায় নেয়ার পথেই তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী সুমা মারা যায়। অতঃপর গ্রামের বাড়িতে তার লাশ দাফন করা হয়েছে।
ডায়রিয়ার মারা যাওয়া আব্দুস সালাম(৬০) একজন মাটি কাটা শ্রমিক। তিনি ১৩১ পূর্বচান্দনা এলাকার সাবেদা বেগমের বাড়ির ভাড়াটিয়া ছিলেন। ভাড়ির মালিকের ছেলে ভাই ভাই জেনারেল ষ্টোরের মালিক মোঃ আলী জানান, তাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া আব্দুস সালাম ৯ডিসেম্বর রাতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেলে ভর্তি হয়। ১১ ডিসেম্বর ঢাকার মহাখালী কলেরা হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। অতঃপর তার লাশ গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দাফনের জন্য।
গাজীপুর মহানগরের ছোট দেওড়া এলাকার ৩৯ কাজি বাড়ির আবুল হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া খেছু মিয়া(৬০) ৯ডিসেম্বর রাতে ডায়রিয়ায় অসুস্থ হয়ে শহীদ তাজউদ্দীন হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরদিন সকালে তার মৃত্যু হয়। খেছু মিয়ার লাশ তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খেছু মিয়ার দরজা খোলা রুমে বিছানার সাথে সেলাইন ঝুলে থাকতে দেখা যায়।
৩০/৭ ছোট দেওড়া এলাকার মোস্তফা কামালের বাড়ির ভাড়াটিয়া কামরুন্নাহার বেগম(১৮) ৮ডিসেম্বর বিকাল ৩টার দিকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে তার স্বামী মোজাম্মেল হক ও প্রতিবেশী শিউলি আক্তার রোগীকে শহীদ তাজউদ্দীনে নিয়ে যায়। ৯ডিসেম্বর ভোররাতে শহীদ তাজউদ্দীনের ৭তল তলার বারান্দায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় কামরুন্নাহার মারা যায় বলে জানিয়েছেন শিউলী আক্তার। কামরুন্নাহারের লাশ দাফন করার জন্য তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ইশ্বরগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কামরুন্নাহারের প্রতিবেশী ভাড়াটিয়ারা। ৭/৮ মাস আগে কামরুন্নাহারের বিয়ে হয়েছে বলে জানান প্রতিবেশীরা। বিয়ের পর স্বামী গাজীপুরের একটি তেলে পাম্পে শ্রমিকের কাজ করার সুবাধে এই বাসায় ভাড়া থাকতেন।
এদিকে বুধবার রাত সোয়া ৯টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত সিনিয়র ষ্টাফ নার্স জোহরা জানান, তিনি রাত ৮টা থেকে ডিউটিতে বসেছেন। ৯টায় কল্পনা আক্তার(৩৫) নামে একজন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। তার স্বামীর নাম নবী হোসেন। ঠিকানা পূর্বচান্দনা কাজী বাড়ি।
বুধবার রাত ৯টা ২৩ মিনিটে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ আমির হোসাইন রাহাত জানান, ডায়রিয়ায় কোন রোগী মারা গেছেন এমন খবর জানা নাই। তবে ৯৬জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রন কক্ষকে তিনি যাথাযথভাবে অবহিত করেছেন বলে জানান। বৃহসপতিবার গাজীপুরে ডায়রিয়ার এক হাজার স্যালাইন বিতরণ করে ডায়রিয়া মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হবে বলে জানান ডাঃ রাহাত।
প্রসঙ্গত: ৮ডিসেম্বর রাত থেকেই গাজীপুর মহানগরের পূর্বচান্দনা এলাকায় হঠাৎ করেই মহামারী আকারে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। আস্তে আস্তে এই প্রকোপ ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। স্থানীয়দের মতে শত শত রোগী হঠাৎ করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। বেশ কয়েকজন মারাও যায়। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শতাধিক ডায়রিয়া রোগীর কথা স্বীকার করেছেন। তবে মারা যাওয়ার কোন সংবাদ তারা জানেন না বলে জানান।
এদিকে গাজীপুর মহানগরের একটি নিদিষ্ট এলাকায় হঠাৎ করে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই ডায়রিয়া রোগের উৎস জানতে নগরবাসী উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবী করেছেন।