কলকাতা: আইন হওয়ার পথে আর কোনো বাধা রইলো না বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের। লোকসভার পর বুধবার রাজ্যসভাতেও পাস হয়ে গেছে বিলটি। গত সোমবার লোকসভায় দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা ধরে চলা বিতর্কের শেষে ভোটাভুটিতে বিলটি ৩১১-৮০ ভোটে পাস হয়েছে। শিবসেনার তিন সাংসদ অবশ্য ভোটদানে অংশ নেননি। অন্যদিকে বিরোধীরা সংগঠিতভাবে বিলের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেও তাদের মাত্র ১০৫ জন বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। বিলটি সংসদের দুই কক্ষে পাস হওয়ায় এবার সেটি যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে স্বাক্ষরের জন্য। সেই স্বাক্ষর পেলেই বিলটি আইনে পরিণত হবে। লোকসভার পর বুধবার রাজ্যসভায় দুপুরের দিকে বিলটি পেশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
তিনি বিলটির পক্ষে বলতে গিয়ে বারে বারে বলেছেন, মুসলিমদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বিলে তাদের নিয়ে কোনো কথাই বলা হয়নি। বুধবার রাজ্যসভায় বিলটি পাস হওয়ায় এবার সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে নতুন নাগরিক তালিকা তৈরি হবে। সেই তালিকায় ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৪ সালের পর থেকে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তানের অনুপ্রবেশকারীদের বাছাই শুরু হবে। তবে এদিন বিল পেশ করার পরেই অমিত শাহ জানিয়েছেন, এই বিলে ভারতীয় মুসলিমদের ভারত থেকে বহিষ্কার করা হবে না। তাই তারা ভয় পাবেন না। বিরোধী দলের সদস্যরা অপপ্রচার করার জন্য মিথ্যা কথা রটাচ্ছে। এই বিল কথা বলছে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান থেকে বেআইনি ভাবে আসা মুসলিমদের নিয়ে। ভারতীয়
মুসলিমরা ভয় পাবেন না। লোকসভার মতোই রাজ্যসভাতেও বিরোধীরা সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে বলেছেন, এই বিলের মাধ্যমে দেশে ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ শুরু হবে। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী এই দেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। কিন্তু এই বিল পাস হলে ভারতের সংবিধানকে খ-ন করা হবে। কংগ্রেসের সাংসদ আনন্দ শর্মা বলেছেন, যে সংবিধানকে স্মরণে রেখে সাংসদরা শপথ নেন, সেই সংবিধানকেই অস্বীকার করছে এই বিল। যা অন্যায়। তিনি ইতিহাস উল্লেখ করে দেখান, হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লীগই দেশভাগের প্রসঙ্গ তুলেছিল। তারাই বলেছিল ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ করতে। তাই কংগ্রেসের সঙ্গে দেশভাগের কোনো সম্পর্ক নেই। একই কথা বলেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন। তিনি উল্লেখ করেছেন লালন, নজরুলের কথা। বাংলায় ভাষণ শুরু করে ডেরেক ও ব্রায়েন বলেন, এ দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার ধারাকে অস্বীকার করছে এই বিল।