ঢাকা: ঘড়ির কাঁটায় রাত ৮টা ৫। মঞ্চে গাইছেন সনু নিগম। গানের মাঝেই হঠাৎ উল্লাসের বিস্ফোরণ দর্শকদের। জায়ান্ট স্ক্রিনে যে ভেসে ওঠে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দুই বলিউড সুপারস্টার সালমান খান ও ক্যাটরিনা কাইফের হাস্যোজ্জ্বল কথোপকথনের ছবি! কাল বঙ্গবন্ধু বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছবি এটিই।
আকর্ষণটা ছড়াচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। বিশেষ এই বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান জাঁকজমকপূর্ণ করার ঘোষণা আগেই দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। পাশে স্পন্সর হিসেবে পেয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপকে। দেশি-বিদেশি শিল্পীদের পারফরম্যান্সের সঙ্গে চোখ-ধাঁধানো আতশবাজি, লেজার শোর এই আয়োজনের পুরো অর্থের জোগান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সেই বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সায়েম সোবহান আনভীর কাল বিসিবির প্রেসিডেন্ট বক্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে বসে উপভোগ করেছেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
প্রধানমন্ত্রী স্টেডিয়ামে আসেন সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে। এর প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে শুরু হয়ে যায় অনুষ্ঠান, ‘ডিরকস্টার’ শুভর গানে। এরপর রেশমি মির্জা হয়ে জেমস। কালো পাঞ্জাবি, নীল জিন্সের চেনা চেহারায় বাংলার রকস্টার মঞ্চে এসেই সবাইকে উন্মাতাল করে দেন। তাঁর প্রথম গান শেষ হতে না হতেই স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রীর পদার্পণ। গ্যালারি ও মাঠের ১০-১২ হাজার দর্শক তুমুল করতালিতে বরণ করে নেয় তাঁকে। মিনিটখানেকের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু বিপিএলের। এরপর রাত ১১টা পর্যন্ত পুরো অনুষ্ঠান স্টেডিয়ামে বসে উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তাঁর বঙ্গবন্ধু বিপিএলের উদ্বোধন ঘোষণার পর মিনিট পাঁচেকের আতশবাজির রং খেলায় আলোকিত আকাশের অন্ধকার। আতশবাজির রেশ মেখেই আবার শুরু জেমসের গান। ‘সুলতানা বিবিয়ানা’য় শুরুর পর আরো দুটি গান গেয়ে শেষ করেন ‘সুন্দরীতমা’ দিয়ে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে উন্মাদনা ততক্ষণে পেয়ে যায় ভিন্ন মাত্রা। স্টেডিয়ামে স্বল্পসংখ্যক ভাগ্যবান দর্শক তা সরাসরি উপভোগের সুযোগ পেয়েছে। বাকিদের চোখ ছিল টেলিভিশনের পর্দায়। বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন নিউজটোয়েন্টিফোরসহ তিনটি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি। আর ‘সোনার হরিণ’ টিকিট জোগাড় করে যারা স্টেডিয়ামে এসেছিল, কালকের অনুষ্ঠান তাদের হতাশ করেনি।
জেমসের পর মঞ্চে উঠে দর্শকদের মাতিয়ে তোলা কঠিন। কিন্তু ভারতীয় শিল্পী সনু নিগম কিভাবেই না সবার মন জয় করে নিলেন! ‘ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ এবং ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে’—শুরুতেই পর পর দুটি বাংলা গানে দর্শকদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান তিনি। এরপর নিজের একের পর এক জনপ্রিয় সব হিন্দি গানে হয়ে ওঠেন বিনোদনের ফেরিওয়ালা। এরপর কৈলাস খেরের ধ্রুপদি পরিবেশনা। ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’—জনপ্রিয় এই বাংলা গানও গেয়ে শোনান তিনি।
কিন্তু আসল বিনোদন তখনো বাকি। আসল আনন্দ উপভোগের অপেক্ষায় তখনো দর্শকরা। সালমান খান ও ক্যাটরিনা কাইফের পারফরম্যান্সই যে মূল আকর্ষণ! তাদের হতাশ করেননি দুই বলিউড তারকা।
রাত ১০টা পেরিয়ে মঞ্চে প্রথম ওঠেন ক্যাটরিনা। নীল রঙের পোশাকের পারফরম্যান্সে আনন্দের নীলাভ আভা ছড়িয়ে দেন স্টেডিয়ামে। নায়িকার প্রস্থানের পর মঞ্চে নায়কের আগমন। সোনালি কনফেত্তির ঝরনাধারার মধ্যে প্রাণশক্তিতে ভরপুর পারফরম্যান্সে সালমান খান মোহমুগ্ধ করে রাখেন দর্শকদের। আর অনুষ্ঠানের শেষ আয়োজনে সালমান-ক্যাটরিনার একসঙ্গে নাচ। বিনোদনের তুফান বইয়ে দেন তাঁরা স্টেডিয়ামে। কংক্রিটের চৌহদ্দি পেরিয়ে তা বিদ্যুদেবগে ছড়িয়ে পড়ে সারা বাংলায়।
কাল বাদে পরশু থেকে শুরু হবে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের মাঠের লড়াই। সাত দলের সেই লড়াইয়ের ক্ল্যাপস্টিক ছিল কালকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সেটি এমন জমজমাট হলো যে আয়োজনের সাফল্যে এবারের টুর্নামেন্ট আগের সব আসরকে ছাড়িয়ে যাবে—এমন প্রত্যাশা তাই করাই যায়।