ডেস্ক | পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি বলেছেন, ভারতীয় মুসলিমদের নিয়ে শুধু পাকিস্তানই উদ্বিগ্ন নয়। একই সঙ্গে বেশ উদ্বিগ্ন বাংলাদেশও। ভারত সম্প্রতি তার ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে ভারতীয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। শুক্রবার সৌদি আরবের পার্লামেন্টারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠক হয় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের। সৌদি আরবের শুরা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. আবদুল্লাহ বিন মোহাম্মেদ বিন ইব্রাহিম আল শেখ ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন। তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনিও ভারতের বিহার রাজ্যের মুসলিমদের পরিণতি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
এ ছাড়া তিনি তার দেশে অভিবাসীদের ঢল নামতে পারে বলেও আতঙ্কিত।
পাকিস্তানি প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব মিয়া জেহাঙ্গীর ইকবাল ডন’কে বলেছেন, সম্প্রতি বাকু’তে এক সম্মেলনে শেখ হাসিনা ওয়াজেদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে ড. আলভির। সেখানে ভারতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হাসিনা।’
বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র বলেছেন, প্রেসিডেন্ট আলভি তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। তাতে বলা হয়েছে, সংশোধিত নাগরিকত্ব বিলের অধীনে ভারতের মুসলিমদেরকে নাগরিকত্ব পেতে তাদের দাদা, নানাদের সহায় সম্পদের বিষয়ে প্রমাণ দিতে হবে। ওই সূত্র প্রেসিডেন্টকে উদ্ধৃত করে বলেছেন , ‘প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ওয়াজেদ আশঙ্কা করছেন যে, যদি বিহারের মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভারত সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয় তাহলে তারা বাংলাদেশে অভিবাসী হওয়ার চেষ্টা করবেন।’
সরকারি এক বিবৃতি অনুযায়ী, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি বলেছেন, মুসলিম উম্মাহ যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে তাতে সব সময়ই সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে সৌদি আরব। ভারতের মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে তা তিনি জেরালোভাবে তুলে ধরতে সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এরই মধ্যে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, ৪ঠা ডিসেম্বর ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদ নাগরিকত্ব সংশোধন বিলে স্বাক্ষর করেছে। এর অধীনে মুসলিমদের বাদ রেখে কিছু ধর্মীয় সংখ্যালঘুকে নাগরিকত্ব দেয়া হবে। সংশোধিত বিলে নাগরিকত্ব নির্ধারণে বেশ কিছু বিধি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জন্মগত বিষয়, নিবন্ধনের মাধ্যমে, প্রাকৃতিকীকরণের মাধ্যমে অথবা বংশগতভাবে। এই বিলটি যদি পাস হয় তাহলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসীদের ক্যাটেগরির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরিবর্তন হবে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দুটি রাষ্ট্র এক সময় ১৯৩৫ সালের গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্টে অবিভক্ত ভারতের অংশ ছিল।
মিটিংয়ে প্রকাশ করা হয়েছে যে, কাশ্মীরের দুর্দশার বিষয়ে মুসলিম দেশগুলোর একটি সম্মেলন করতে উদগ্রীব হয়ে আছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। কাশ্মীরের মানুষ চার মাসেরও বেশি সময় কারফিউয়ের মধ্যে রয়েছেন। প্রেস রিলিজে বলা হয়েছে, কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানকে সৌদি আরব সমর্থন করে- এ বিষয়টি আবারো তুলে ধরেছেন সৌদি আরবের শুরা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান।
ওদিকে, সৌদি আরবের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা একটি মিটিং হয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের। এ সময় পাকিস্তান ও সৌদি আরবের পার্লামেন্টের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে প্রশংসা করেছেন সৌদি প্রতিনিধিরা। শুরা কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের কাছে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের করুণ মানবাধিকার ও মানবিক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন ইমরান খান। অমানবিকভাবে সেখানে গত ৫ই আগস্ট থেকে মানুষজনকে অবরুদ্ধ করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। ইমরান খান বলেছেন, দখলীকৃত কাশ্মীরে ভারতের ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে বিশ্বকে অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে। কাশ্মীরি মানুষের দুর্দশা কমিয়ে আনতে আমাদের সবাইকে সব রকম প্রচেষ্টা চালাতে হবে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুল্যুশন অনুযায়ী কাশ্মীর সমস্যার একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে আসতে হবে।
(অনলাইন ডনে প্রকাশিত রিপোর্টের অনুবাদ)