লাভে থেকেও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নেসকো’র

Slider জাতীয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতি


নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) লাভে থেকেও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আর তাতে বিরোধিতা করেছেন বিভিন্ন পর্যায়ের ভোক্তারা। একই সঙ্গে বিদ্যুতের এই কোম্পানিটির বিরুদ্ধে কৃষকের কাছ থেকে চড়ামূল্যে বিদ্যুতের দাম নেয়ার অভিযোগ করেছে বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষ। নেসকো বরেন্দ্র এলাকার কৃষক থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১০ টাকা করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা আগে ৪ টাকা করে নেয়া হতো। গতকাল কাওরান বাজারে টিসিবি অডিটোরিয়ামে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম নিয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন( বিইআরসি)-এর গণশুনানিতে অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। শুনানিতে বিইআরসি’ কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব এবং কমিশনের উপ পরিচালক (ট্যারিফ) মো. কামরুজ্জামান ক্যাব’র জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম-এর এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, নেসকো’র কোনো ঘাটতি নেই। অর্থাৎ লাভে থেকেও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে কোম্পানিটি।
উপস্থিত নেসকোর এক কর্মকর্তা জবাবে বলেন, তারা পিডিবি’র একটি কোম্পানি। গত অর্থ বছরে ৬ কোটি টাকা লাভ হয়েছে, যা পুরোটা পিডিবিকে দেয়া হয়েছে। এটা সমন্বয় বলেও তিনি শুনানিতে উল্লেখ করেন। তখন ক্যাব’র উপদেষ্টা নেসকোর বিদ্যুতের দাম বাড়ার প্রস্তাব বাতিল দাবি করেন। একই বিরোধীতা করেন মুঠোফোন গ্রাহক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদও। শুনানিতে অংশ নিয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান নেসকোর বিরুদ্ধে কৃষক থেকে চরামূল্যে বিদ্যুতের দাম নেয়ার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, এই এলাকায় কৃষক থেকে এই কোম্পানি হওয়ার আগে প্রতি ইউনিট ৪ টাকা দরে বিদ্যুতের দাম নেয়া হত। কিন্তু এখন ১০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে । এটা কৃষকদের পক্ষে দেয়া সম্ভব নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। বিকালে নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের ( নেসকো) শুনানি হয়। নেসকো’র পক্ষে প্রস্তাব উত্থাপন করেন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম।
অন্যদিকে সকালে একই স্থানে গণশুনানিতে পাইকারি দাম বাড়ানোর আনুপাতিক হারে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বিইআরসি’র গণশুনানিতে এমন প্রস্তাব তুলে ধরেন পিডিবি’র চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ। গণশুনানিতে পিডিবি’র পক্ষ থেকে দাম প্রস্তাব উপস্থাপন করেন সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার কাউসার আমীর আলী। অন্যদিকে, মূল্যায়ন কমিটির পক্ষে প্রস্তাব উপস্থাপন করেন কমিশনের উপ পরিচালক (ট্যারিফ) মো. কামরুজ্জামান। শুনানিতে বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটি প্রিপেইড গ্রাহকের কাছ থেকে রিবেট ছাড়া আয়কে বিদ্যুৎ বিক্রয়ের আয় হিসেবে দেখানোর সুপারিশ করে।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের উপর গণশুনানিতে আক্ষেপ প্রকাশ করেন ক্যাব’র জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, আমাদের কথা বুঝতে না পারলে বলতে পারতেন, আমরা বুঝিয়ে দিতাম। আর যদি আমাদের কথা ভুল হয়ে থাকে তাহলে বুঝিয়ে দিতে পারতেন। এভাবে চললে আবার আদালতে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। তিনি বলেন, আমরা শুধু প্রস্তাব দিয়ে যাবো, আপনারা ফেলে দেবেন। আর আমরা বারবার কোর্টে যাবো, এভাবে চলতে পারে না। এখানে এসে দু’বেলা না খেয়ে থাকতে পারি। কিন্তু কোর্টে গেলে লাখ লাখ টাকা খরচ করবো কিভাবে। আমাদের যুক্তিগুলো গ্রহণ করা হোক। আমি যাদের কথা বলছি তাদের পয়সায় বিইআরসিসহ সকলের বেতন হয়। কিন্তু তাদের যাবার জায়গা নেই। শামসুল আলম ইজিবাইকের বিদ্যুতে দাম কম রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, এসব যানবাহন সাধারণ জনগণ ব্যবহার করে। তাদের জীবনমান বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে যদি ব্যাপক দর বাড়ানো হয় তাহলে সেটা হবে দুঃখজনক। তিনি বিইআরসির কাছে প্রশ্ন রাখেন পিডিবির দেয়া ২০১৭ সালের নির্দেশনা পালন করছেন কি না, এবং তাতে বিইআরসি সন্তুষ্ট কি না। জবাবে বিইআরসি কারিগরি কমিটি না সূচক জবাব দেন। শামসুল আলম পিডিবি’র দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে বেশ কিছু অসঙ্গতি তুলে ধরেন। শুনানিতে শহরের প্রান্তিক মানুষের জন্য বিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে বস্তিতে আলাদা মিটার দেয়া সম্ভব কিনা, তা জানতে চান ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বস্তিতে দরিদ্র মানুষ বেশি বিদ্যুৎ বিল দেয়। একটি মিটারের অধীনে অনেকগুলো ঘরে লাইন দেয়া হয়। তিনি জানতে চান, এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব কিনা? জবাবে পিডিবি জানায়, বস্তিতে আলাদা লাইন দেয়া সম্ভব। ঢাকার বিহারি ক্যাম্প ও চট্টগ্রামের সুইপার কলোনিতে এভাবে বিদ্যুতের মিটার দেয়া হয়েছে। সেভাবে বস্তিতেও আলাদা প্রিপেইড মিটার দেয়া যেতেই পারে। গণশুনানিতে অংশ নিয়ে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, অপচয় দুর্নীতি, লুটপাটের মহোৎসব করা হচ্ছে। এর দায় কেনো জনগণ বহন করবে। আমি মনে করি যেভাবে চাল, ডাল, পিয়াজ লবণসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে, নতুন করে জনগণের উপর বোঝা চাপানো উচিত হবে না। আমি মনে করি দাম বাড়ানোর পরিবর্তে কমানোর যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে। আশাকরি বিইআরসি সেদিকে নজর দেবেন। সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু কোম্পানিকে উচ্চদরে কাজ দেয়া হচ্ছে। এতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এসব দুর্নীতি রোধ করা জরুরি বলে মন্তব্য বিএনপি’র এই নেতার। শুনানিতে বিজিএমইএর প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, পোশাক শিল্প অর্থনীতির রক্ত সঞ্চালন করে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে অনেক পোশাক শিল্প বন্ধ রয়েছে। এখন যদি আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ে তাহলে তাদের পোশাক শিল্পের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স শুনানিতে বলেন, এই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ডিজিটাল। সরাসরি কত বৃদ্ধি হবে তা বলা হয়নি। কিন্তু ডিমান্ড চার্জ বৃদ্ধিসহ অন্যান্য খাতে স্থায়ীভাবে বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। কৌশল করে প্রতি ইউনিটে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। যতোক্ষণ পর্যন্ত দুর্নীতি ও অবচয় রোধ না করা হবে ততোক্ষণ পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বাড়ানোা প্রস্তাব মানি না। গণশুনানিতে মুঠোফোন গ্রাহক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ ও লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরোধীতা করেন।
বিইআরসি’র চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য রহমান মুর্শেদ, মিজানুর রহমান ও মাহমুদউল হক ভুঁইয়া শুনানি গ্রহণ করেন। আজ সকালে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) এবং দুপুরে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের ( ডেসকো) শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *