ডেস্ক | প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে নয়া দিল্লিকে বেছে নেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে। তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার তিনি নয়া দিল্লি পৌঁছেন। তার এ সফরে ২৯ শে নভেম্বর শুক্রবার শ্রীলঙ্কাকে বহু শত কোটি ডলার সহায়তা ঘোষণা করেছে ভারত। শ্রীলঙ্কায় নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ঠিক ১২ দিন পরেই ভারত সফরে আসেন গোটাবাইয়া রাজাপাকসে। তার এই সফরকে কড়াভাবে নজরে রাখা হয়েছে। কারণ, ভারত মহাসাগর এবং এর কৌশলগত সামুদ্রিক রুটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত নয়া দিল্লি ও বেইজিং। চীনের প্রভাবকে কাটিয়ে উঠতে এই সহায়তা প্রস্তাব করা হয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন চ্যানেল নিউজ এশিয়া।
এতে বলা হয়, ভারতের প্রচলিত একটি মিত্র শ্রীলঙ্কা। কিন্তু গোটাবাইয়া রাজাপাকসের বড়ভাই মাহিন্দ রাজাপাকসের দশকব্যাপী শাসনের সময়ে এই দ্বীপরাষ্ট্রটিতে ব্যাপক বিনিয়োগ ও শত শত কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে চীন। শ্রীলঙ্কায় চীনের এই বিপুল বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত। শ্রীলঙ্কার এই নতুন নেতার সঙ্গে আলোচনার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, অর্থনীতি এবং অবকাঠামো উন্নয়নে শ্রীলঙ্কাকে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দেবে ভারত। এ ছাড়া ২১ শে এপ্রিল ইসলামপন্থি জঙ্গিদের সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ২৫৮ জন নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহকে সমৃদ্ধ করতে আরো ৫ কোটি ডলার দেয়ার প্রস্তাব করেন মোদি। গোটাবাইয়া রাজাপাকসের তিনদিনের সফরকে স্বাগত জানিয়ে মোদি বলেন, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ শ্রীলঙ্কা শুধু ভারতের স্বার্থেই নয় একই সঙ্গে পুরো ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দুই দেশের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন আন্তঃসম্পর্কিত। তাই আমরা একে অন্যের নিরাপত্তা ও সংবেদনশীলতার বিষয়ে সচেতন থাকবো।
গত ১৬ই নভেম্বর শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে নির্বাচিত হন গোটাবাইয়া রাজাপাকসে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থনীতি ও নিরাপত্তাকে উন্নত করার। তবে তাকে ঘিরে একটি বিতর্ক আছে। তাহলো, তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে কয়েক দশকের গৃহযুদ্ধে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ট শ্রীলঙ্কায় তার তখনকার ভূমিকা নিয়ে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ২০০৯ সালে পরাজিত হয়। তবে বিস্তার অভিযোগ ওঠে যে, সরকারি বাহিনী তামিল সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আকারে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এ সময় শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন গোটাবাইয়া রাজাপাকসে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহল থেকে নিন্দা জানানো হয়, যা কলম্বো সরকারকে বেইজিংয়ের আরো কাছাকাছি এনে দেয়। হাম্বানটোটা বন্দর সহ শ্রীলঙ্কার বহু অবকাঠামো খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ শুরু করে চীন। তবে উদ্বোধনী বক্তব্যে শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি একটি নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি চান। সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চান। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে শ্রীলঙ্কা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেছেন, ভারতের সহযোগিতা বহুমুখী। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে শান্তিপূর্ণ রাখতে ভারতের সঙ্গে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ অব্যাহত রাখবো।