ডেস্ক | ইরাকে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে অন্তত ৪৫ বিক্ষোভকারী প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৫০ জনের বেশি। বৃহস্পতিবার বাগদাদ, নাজাফ ও নাসিরিয়া সহ বিভিন্ন শহরে এসব ঘটনা ঘটে। দেশটিতে চলমান মাসব্যাপি বিক্ষোভের সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন ছিল এটি। বিক্ষোভকারীরা একাধিক শহরে বিক্ষোভে নামেন। এর আগে বুধবার রাতে নাজাফে ইরানি কনস্যুলেটে ভাংচুর করে তাতে আগুন লাগিয়ে দেন। এরপর বৃহপতিবার বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে উন্মুক্ত গুলি চালায় নিরাপত্তাবাহিনী। এ খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
বুধবার রাতে ইরানি কনস্যুলেটে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। কনস্যুলেটে আগুন ধরানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওগুলোয় বিক্ষোভকারীদের জ্বলন্ত কনস্যুলেটের সামনে স্লোগান দিতে দেখা যায়। ইরাকের বিক্ষোভে এ ঘটনাকে মোড় ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে বর্ণনা করেছে দ্য গার্ডিয়ান।
কনস্যুলেটে আগুন লাগানোর পর বৃহস্পতিবার নাসিরিয়া, নাজাফ ও বাগদাদসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর খোলা গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে। নাসিরিয়ায় বিক্ষোভকারীরা ভোরের আগ দিয়ে একটি সেতু দখল করে নেয়। তাদের সরাতে গুলি চালায় সেনারা। নিহত হন ২৯ জন। এতে বিক্ষোভ আরো বড় আকার ধারণ করে। পরবর্তীতে বিক্ষোভকারীরা একটি পুলিশ স্টেশনের বাইরে জড়ো হয়। বাগদাদে টাইগ্রিস নদীর ওপর নির্মিত এক সেতুর নিকটে অবস্থান নিয়েছিলেন অনেকে। তাদের লক্ষ্য করে খোলা গুলি ও রাবার বুলেট চালায় নিরাপত্তাবাহিনী। এতে নিহত হন অন্তত চার জন। এছাড়া নাজাফে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন আরো ১২ জন।
বৃহস্পতিবার তীব্র সহিংসতার পর ইরাকের সঙ্গে মেহরান সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে ইরান। সীমান্তটি কখন খুলে দেয়া হবে এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। এদিন, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে আগ্রাসি ভ’মিকার নামে নিরাপত্তাবাহিনী। অজ্ঞাত এক বিক্ষোভকারীকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, নাজাফের সকল দাঙ্গা পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা আমাদের দিকে এমনভাবে গুলি করা শুরু করলো যে, মনে হয়েছে আমরা পুরো ইরাক জ্বালিয়ে দিয়েছি। অপর এক বিক্ষোভকারী আলি জানান, কনস্যুলেটে হামলাটি একটি সাহসী কাজ ছিল। এটা ইরাকি জনগণের জবাব। আমরা ইরানিদের চাই না। এদিকে, ইরাকি সরকার কনস্যুলেটে হামলার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রকাশ করেছে। বলেছে, আমাদের প্রথম প্রতিক্রিয়া হবে আগ্রাসিদের মোকাবিলা করা।
প্রসঙ্গত, অক্টোবরের শুরু থেকে ইরাকে কর্মসংস্থানের সংকট, নিম্নমানের সরকারি পরিষেবা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। এখন পর্যন্ত এই বিক্ষোভে অন্তত ৩৫০ জন নিহত হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ইরাকের সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ইরানের আজ্ঞাবহ। দেশের রাজনীতি থেকে ইরানের প্রভাব দূরীকরণের দাবিও তুলেছে তারা। বিক্ষোভে ইরানি স্নাইপার মোতায়েন থাকার অভিযোগও ওঠেছে