ডিসেম্বরে ঢাকায় বড় ধরণের সমাবেশ করতে চায় বিএনপি

Slider জাতীয় রাজনীতি সারাদেশ


ঢাকা: প্রতিষ্ঠার পর বিএনপি এখন সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। দলীয় প্রধান কারাগারে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের বাইরে, যেকোনো সরকারবিরোধী আন্দোলনে সুবিধা করতে না পারা, নির্বাচনে ভরাডুবি, নতুন-পুরনো জোটে অসন্তোষ, অঙ্গসংগঠনগুলোয় অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং দলের নেতাদের মতপার্থক্য—সব মিলিয়ে বিএনপি অনেকটাই কোণঠাসা। কোনো অবস্থায়ই সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে না পারা নিয়ে হতাশা তৃণমূল নেতাকর্মীসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যেও। কোনো ইস্যুকেই পুঁজি করে এগোতে পারছে না বিএনপি। যদিও দলটির নেতারা এর কারণ হিসেবে বলছেন, মামলা-হামলায় জর্জরিত তাঁরা। এর পরও দলের নীতিনির্ধারকরা ‘বড়’ একটি আন্দোলন প্রয়োজন বলে মনে করছেন। তবে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন জোরদার করে সতর্কতার সঙ্গে এগোতে চান।

বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার কাছে ‘এই পরিস্থিতিতে আপনাদের করণীয় কী’ প্রশ্ন করা হলে তাঁরা বলছেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, সংগঠন গোছানো, দলের প্রতিষ্ঠার ৪২তম বছরেই কাউন্সিল করা এবং নতুন নির্বাচন আদায় ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাই তাঁদের মূল লক্ষ্য।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নেত্রীকে অবৈধ সরকার গায়ের জোরে কারাগারে বন্দি রেখেছে। তাই তাঁর মুক্তিই আমাদের মূল লক্ষ্য। এরপর তাঁর নেতৃত্বে দেশে হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার করব আমরা।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করছি। সব শেষ কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় সমাবেশ করব। সেখান থেকে বড় পরিসরে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’ ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশ হতে পারে বলেও জানান তিনি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজ আর কোনো বিভেদ নয়, এক হয়ে একসঙ্গে আমাদেরকে আন্দোলনে নেমে পড়তে হবে। অতিদ্রুত আমরা সংগঠিত হয়ে জনগণকে সংগঠিত করে রাজপথে নেমে গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করে গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশনেত্রীকে মুক্ত করব, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনব।’

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে আজকে বিচারকরা মুক্ত মনে বিচার করতে পারেন না। যেই কারণে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া আজকে এক বছর ১০ মাস জেলখানায়। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, এখনো চেষ্টা করে চলেছি। এর বাইরে তাঁকে মুক্ত করার একমাত্র বিকল্প হলো আন্দোলন। খুব শিগগিরই আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে রাস্তায় নেমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে, বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, দেশে আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে হবে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘গত এক মাসের মধ্যে সকল ফোরাম, সকল পর্যায় থেকে একটি দাবি—খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন। আমাদের মূল দায়িত্ব—‘ডু অর ডাই’, ‘মরি আর বাঁচি’—একটা কিনারা হোক। আমরা মরে গিয়েও যদি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা ভালো দেশ রেখে যেতে না পারি তাহলে নতুন প্রজন্ম আমাদের চিতা বা কবরের সামনে গিয়ে অভিশাপ দেবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের সামনে বেশি সময় নেই। একটা ইস্যুর মধ্যে সব ইস্যু রয়েছে। সেটা হলো গণতন্ত্রের ইস্যু, খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যু।’

ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ও যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এবারের আন্দোলন যেন ব্যর্থ না হয়, সে জন্য সতর্কতার সঙ্গে এগোতে চায় তাঁর দল।

বিএনপির চট্টগ্রামবিষয়ক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবে আলম, মৌলভীবাজার জেলা যুবদল আহ্বায়ক জাকির হোসেনসহ তৃণমূলের কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বললে তাঁরা বলেন, ‘নেত্রী আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত হবেন না, আন্দোলনের মাধ্যমেই তাঁকে মুক্ত করতে হবে। আমরা আন্দোলনের কর্মসূচি চাই।’

বিএনপির করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্ট্রি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এই ধরনের সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি বিএনপি। তবে এই মুহূর্তে তারা একটু নড়াচড়া করছে। একটু সময় নিয়ে বড় ধরনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি তারা নেবে বলে মনে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *