ঢাকা: অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান। র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় শেষ হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদও। ক্যাসিনোসহ নানা অপরাধকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয় জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তিনি। তিন দেশে তার তিনজন ‘স্ত্রী’ আছে এমনটি জানালেও ঢাকায় দুই নারীর সঙ্গে অনৈতিকভাবে বসবাস করতেন বলে স্বীকার করেছেন অকপটে।
দুদক কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ব্যক্তিজীবন নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিতে গিয়ে তিনি জানান, একই পরিবারের দুই নারী সঙ্গ উপভোগ করতেন তিনি। এটিতো ধর্মীয় দিক থেকে অপরাধ। এমন প্রশ্নের পাল্টা জবাবে অবাক হন দুদক কর্মকর্তারা। সেলিম প্রধান বলেন, আপনারা তো অনেক পিছিয়ে রয়েছেন।
এখন আধুনিক সময়। আমি যা করেছি সেটা আধুনিক চিন্তা থেকে করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে সেলিম জানান, তিন দেশে তিনজন স্ত্রী রয়েছেন। যাদের একজন জাপানী, একজন সিঙ্গাপুরের নাগরিক অন্যজন থাইল্যান্ডের। ব্যবসায়ের কাজে যখনই দেশের বাইরে যেতেন তাদের সঙ্গে থাকতেন সেলিম।
গত ১৭ই নভেম্বর থেকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় সেলিম প্রধানকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে দুদক। পাঁচ দিন টানা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফের কারাগারে প্রেরণ করা হয় তাকে। এর আগে ২৭শে অক্টোবর ১২ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৪ টাকার অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদ সেলিমের জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে অর্জন করার অভিযোগে মামলা করে দুদক। সংস্থাটির পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান এই মামলার বাদী। দেশ ছেড়ে পালানোর সময় গত ৩০শে সেপ্টেম্বর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের একটি ফ্লাইট থেকে নামিয়ে এনে সেলিম প্রধানকে গ্রেপ্তার করে র?্যাব। তাকে নিয়ে তার অফিস ও বাসায় অভিযান চালিয়ে ২৯ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টাকা, ৭৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকার সমপরিমাণ ২৩টি দেশের মুদ্রা, ১২টি পাসপোর্ট, ১৩টি ব্যাংকের ৩২টি চেক, ৪৮ বোতল বিদেশি মদ, একটি বড় সার্ভার, চারটি ল্যাপটপ ও দুটি হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়। হরিণের চামড়া উদ্ধারের ঘটনায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিরাপত্তা আইনে সেলিম প্রধানকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে দুটি মামলা হয়। সেলিম প্রধান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘প্রধান গ্রুপ’-এর কর্ণধার। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেড, পি২৪ ল ফার্ম, এইউ এন্টারটেইনমেন্ট, পি২৪ গেমিং, প্রধান হাউস ও প্রধান ম্যাগাজিন। এর মধ্যে পি২৪ গেমিংয়ের মাধ্যমে তিনি জুয়াড়িদের ক্যাসিনোয় যুক্ত করতেন। সেলিম প্রধান অনলাইনে ক্যাসিনো পরিচালনাকারী এবং বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রধান। তিনি ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সহসভাপতি। এ ছাড়া গ্রেপ্তার হওয়া বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার ক্যাশিয়ারও। সেলিম প্রধানের ব্যাংককের পাতায়ায় বিলাসবহুল হোটেল, ডিসকো বারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনাই নয়, সেলিম প্রধান রাজশাহীসহ সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় গবাদিপশুর সব খাটাল ও মাদক সিন্ডিকেটের হোতা। এমনকি সীমান্তে জালটাকার মূল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণও তার হাতে। প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে তিনি খাটাল, মাদক ও জালটাকার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। সেখান থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা নিতেন।